শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের ১১টি নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে, বন্যা ছড়াতে পারে মধ্যাঞ্চলেও

Paris
Update : রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২

এফএনএস : গত শুক্রবারও দেশের তিনটি নদীর পাঁচ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপরে অবস্থান করছিল। সেই পরিস্থিতি আরও অবনতি হয় গতকাল শনিবার। এদিন দেশের ১১ নদীর ১৭ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপরে ওঠে। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের শঙ্কা, উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সুরমা ব্যতীত দেশের সকল প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি স্থানে মাঝারি থেকে ভারী কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সকল প্রধান নদ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আর এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা উপরে অবস্থান করতে পারে। এসময়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে। কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, দুধকুমার, সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, খোয়াই, পুরতন সুরমা, সোমেশ্বরী ও কংস নদীর ১৭ পয়েন্টের পানি এখন বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা আছে দুই পয়েন্টের পানি। পুরাতন সুরমার দেরাই পয়েন্টের পানি এবং কংস নদীর জারিয়াঞ্জাইল পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের বিষয়ে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণবাগে ২২৬ মিলিমিটার। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার ও ভৈরববাজারে ১৭৫ মিলিমিটার, সিলেটের জকিগঞ্জে ১৫০ ও মনু রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে ১৪৫, সিলেট পয়েন্টে ১৪৩, হবিগঞ্জে ১৪৮ এবং সিলেটের শেরপুরে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ভারতের আগরতলায় সর্বোচ্চ ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া চেরাপুঞ্জিতে ১২০ এবং ত্রিপুরার কৈলাশহরে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

 

এদিকে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর বন্যা মধ্যাঞ্চলেও ছড়াতে পারে। তবে রংপুর (উত্তরাঞ্চল) ও সিলেটের (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি আগামী সপ্তাহ (জুনের চতুর্থ সপ্তাহ) থেকে উন্নতির দিকে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। গত শুক্রবার রাতে বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও পাবনা জেলায় ৭ থেকে ১০ দিন মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলায় ৫ থেকে ৭ দিন মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

 

পরবর্তীতে জুন মাসের চতুর্থ সপ্তাহের প্রথম ভাগে বৃষ্টিপাত কমে ওই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। জুন মাসের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে মধ্যাঞ্চলের রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এদিকে, জুন মাসের চতুর্থ সপ্তাহের প্রথম ভাগে বৃষ্টিপাত কমে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১০টি নদীর পানি ১৩টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে গত শুক্রবার জানিয়েছিলো পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এসব অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে এরইমধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমের সিলেট অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। ঘর-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাটসহ ডুবে গেছে বিভিন্ন স্থাপনা।

 

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নাঞ্চল ও নদ-নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী চরাঞ্চলের মানুষজন। অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাচায় আশ্রয় নিয়ে দিন পার করছে। অনেকে আবার নৌকায় বসতবাড়ির জিনিসপত্র ও পরিবার নিয়ে উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পনির সংকট। নিজেদের পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চলের অনেকেই তাদের গবাদি পশু নিয়ে উঁচু জায়গায় তুলছেন। গতকাল শনিবার) পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, ধরলার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ২৩ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নাগেশ্বরী বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, বন্যায় তার ইউনিয়নের ৫০০-৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

 

পানিবন্দি এসব মানুষ অনেক দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে। চিলমারী উপজেলার নয়ারনাট ইউনিয়নের আমিনুল বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরে প্রবেশ করায় বউ বাচ্চা নিয়ে ঘরে উঁচু মাচা করে আছি। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আর ঘরে থাকারও উপায় থাকবে না। অন্যদিকে পানির তোড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ১শ মিটার ভেঙে প্লাবিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় নদ-নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্পিডবোট, নৌকা এবং আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা মজুত রয়েছে।

 

বিএড পরীক্ষা স্থগিত : দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান ২০২০ সালের বিএড (অনার্স) প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার ও দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্যা পরিস্থিতি অবনতির কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান শুধু ২০২০ সালের বিএড (অনার্স) ১ম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার এবং দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো। স্থগিত এই দুটি পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এর আগে, গত শুক্রবার আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসএসসি-সমমান পরীক্ষা শুরু করা হবে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে আপাতত সব পরীক্ষা স্থগিত থাকবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris