রবিবার

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি ‘সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই’ রক্তস্বল্পতা দূর করবে কচু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কি একদম তলানিতে কান উৎসবে নজর কাড়লেন অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়তি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত আমনের বীজতলা

Paris
Update : রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : আষাঢ় মাসের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে টানা বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) ভোররাত থেকে শুক্রবার (১৭ জুন) রাত পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জে থেমে থেমে মুশলধারে বইছে আষাঢ়ের বৃষ্টি। দুই দিনের অতিবৃষ্টিতে জেলার অনেক এলাকায় আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক বীজতলা ক্ষতিগস্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক চাষী নতুন করে বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কৃষকরা বলছেন, অতিবৃষ্টির কারনে সম্প্রতি ফেলা বীজতলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধান গেজে চারা বের না হওয়া ধানগুলো অতিরিক্ত পানির ফলে মাটি থেকে উঠে চলে যাচ্ছে। এতে বীজতলার কোন কোন জায়গা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে এবং কোথাও সব ধান জমা হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ আগের বীজতলায় চারা বেরিয়ে যাওয়ায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিআর ১০, বিআর ২৫, ব্রি ধান ৩০, ব্রি ধান ৩১, ব্রি ধান ৩২, ব্রি ধান ৩৩, ব্রি ধান ৩৯, ব্রি ধান ৬২, সুগন্ধি চাল হিসেবে ব্রি ধান ৩৪, ব্রি ধান ৩৭, ব্রি ধান ৩৮, বিনাধান-৯, বিনাধান-১৩ চাষের লক্ষ্যে বীজতলা তৈরি করেছেন কৃষকরা। শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্রের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমনের চারা রোপণ করা হয়। বীজতলা করা হয় জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। এবারও চাষিরা সময়মতো বীজতলা তৈরি করেছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে নিচু এলাকার সব বীজতলা ডুবে যায়। তবে যেসব এলাকার পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা তুলনামূলক ভালো, সেখান থেকে বৃষ্টির সাথে সাথে পানি নেমে যাচ্ছে।

 

সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের ময়াপুকুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, আগামী আমন মৌসুমে ১০ বিঘা জমি চাষাবাদ করার সিধান্ত নিয়েছি। সেলক্ষ্যে হাল চাষ করে গত মঙ্গলবার বীজতলায় ধান বপন করেছি। কিন্তু তার দুইদিন পর থেকেই মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ব্যাপকভাবে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নামার স্রোতের সাথে ধানের বীজ নেমে যাচ্ছে। ফলে বীজতলায় ধানের বীজ থাকছে না।

 

ধানচাষী তহরুল ইসলাম জানান, দুই মাঠে জমি হওয়ায় ধান লাগানোর সুবিধার কথা ভেবে দুই জায়গাতে দুই জাতের ধানের বীজতলা তৈরি করেছি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের ময়াপুকুর ও গোবরাতলা ইউনিয়নের খিন্নিতলায় দুটি বীজতলা। ময়াপুকুরের বীজতলায় ৬ দিন আগে ও খিন্নিতলার বীজতলায় ২ দিন আগে বীজ বপন করেছি। কিন্তু ৬ দিন আগে ফেলার কারনে সেখানে ধানের চারা তৈরি হয়ে গেছে এবং তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অন্যদিকে, দুই দিন আগে বপন করা বীজতলায় এখন আবার নতুন করে বীজ বপন করতে হবে। কারন এই বজতলা পানিতে ভেসে গেছে।

 

শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গার কৃষক আবুল হায়াতের ৬ বিঘা জমি রয়েছে নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের টাকাহারা মাঠে। তিনি বলেন, বীজতলায় বীজ বপনের পরদিন থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ি থেকে জমির দুরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। বীজতলা থেকো বৃষ্টির পানি বের করতে বীজতলায় এসে দেখি, পানিতে টুইটম্বুর। পরে পানি বের করতে গেলেও দেখি বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। আবার নতুন করে বীজ বপন ছাড়া কোন উপায় নেই। আমার মতো অনেক কৃষকের এমন ক্ষতি হয়েছে।

 

কৃষকদের উদ্দেশ্যে কৃষি বিভাগে পরামর্শ, বীজতলায় বীজ বপন করার আগে ভালো জাতের সুস্থ সবল বীজ নির্বাচন করতে হবে। যেসব এলাকায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা থাকে সেখানে ব্রি ধান ৫১, ব্রি ধান ৫২ বিনাধান-১১, বিনাধান-১২ এবং লবণাক্ত জমিতে ব্রি ধান ৪০, ব্রি ধান ৪১, ব্রি ধান ৫৩, ব্রি ধান ৫৪ চাষ করতে পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, পানিতে ডুবে না এমন উঁচু খোলা জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে। মানসম্মত বীজ কাছে না থাকলে বিএডিসির বীজ বিক্রয় কেন্দ্র, বিশ্বস্ত ডিলার বা অভিজ্ঞ চাষি ভাইদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। অতিবৃষ্টির কারনে অনেক বীজতলায় পানিতে ডুবে আছে।

 

আবার অনেক বীজতলার চারা নেতিয়ে পড়েছে। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শমতো পরিচর্যা করলে বীজতলার ক্ষতি কমবে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, আগামী আমন মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এলক্ষ্যে প্রায় ২৮০০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে। ভালো চারা পেতে হলে প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ২ কেজি গোবর, ১০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করার পরামর্শ কৃষি বিভাগের।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris