চারঘাট প্রতিনিধি : আমগাছে বাবুই পাখির বাসা! অবাক কান্ড বলে ভ্রম হতেই পারে যারা প্রথমবার চারঘাট উপজেলার আমকুঞ্জে এসেছেন তাদের কাছে। গাছে গাছে দু’চারটা নয় হাজার হাজার ব্যাগ ঝুলছে। এগুলো হলো ফ্রুট ব্যাগিং। বাহিরের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়, বিরুপ আবহাওয়া কিংবা কোন ক্ষতিকারক প্রভাবই এই ব্যাগের মধ্যে প্রবেশ করে আমের কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারে না। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রেজানা গেছে, সারাদেশেই আম উৎপাদনকারী উপজেলা হিসেবে পরিচিতি রয়েছে রাজশাহীর চারঘাটের। এ উপজেলায় প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম বাগান রয়েছে। এক সময় কীটনাশক ছাড়া গ্রীষ্মকালীন ফল আম উৎপাদনের চিন্তা করতে পারতেন না আম চাষীরা। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রথাগত পরিবর্তন এসেছে আমের উৎপাদনে। উৎপাদিত আম রপ্তানির চিন্তা মাথায় রেখে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম উৎপাদনের লক্ষ্যে চিরাচরিত কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে চাষীরা বেছে নিচ্ছেন ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি। এই ফ্রুট ব্যাগিং আম প্বার্শবর্তী উপজেলা বাঘার চাষীদের সাথে সমন্বয় করে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য মতে, আমের মুকুল আসার পর ৩৫-৪০ দিন বয়সের আম হলেই সে আমে ব্যাগিং করা যায়। তবে এরপরেও ব্যাগিং করা যায়। নন ব্যাগিং আমে ১৫ থেকে ৬২ বার বালাইনাশক দেওয়া হলেও এ পদ্ধতিতে আমে সর্ব্বোচ্চ ৪ বার বালাই নাশক প্রয়োগ করলেই ভাল ফলন পাওয়া যায়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাবুই পাখির বাসার মতো গাছে গাছে বাদামী রং এর কাগজের ব্যাগ ঝুলছে। প্রতিটি গাছের আম কাগজের ব্যাগ দিয়ে মোড়ানো রয়েছে। ব্যাগের ভেতরে সতেজ সবুজ ও পরিষ্কার আম। আমের গায়ে কোন দাগ কিংবা ধুলা ও পোকামাকড় নেই।
উপজেলা সদরের আম চাষী জহুরুল ইসলাম বলেন, গত বছর আশ্বিনা জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করে বেশ সফলতা পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতায় এবছর ১৫ বিঘা জমিতে ফজলি ও আশ্বিনা জাতের আম ফ্রুট ব্যাগিং করছি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করায় আম বাগানে বর্তমানে আমাকে কোনো বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছেনা। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম চাহিদা বেশি থাকায় দেশ ও দেশের বাহিরে রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে। তাঁর দাবী, আমগুলি ব্যাগের ভিতরে থাকায় কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে। এই পদ্ধতিতে আম নষ্টও কম হয় এবং উৎপাদিত আম ফলনও বৃদ্ধি পায়। স্বল্প খরচে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির মাধ্যমে মানসম্পন্ন আম উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা করেন তিনি। তার মতো এখন উপজেলার বেশ কিছু আমচাষী ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করছেন।
তবে ফ্রুট ব্যাগিং নিয়ে কিছু আম চাষী সমস্যার কথাও জানিয়েছেন। রায়পুর গ্রামের আম চাষী আলতাফ হোসেন বলেন, বর্তমানে ১০-১২ প্রকার ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে যেগুলোর কোনটি মানহীন আর কোনটি ভাল তা নিয়ে দিধায় কৃষক। তাছাড়া পুরানো আম গাছগুলো আকারে বড় ও উঁচু হওয়ায় সবগুলো আমও ব্যাগিং করা যায়না। অন্যদিকে কিছু কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে ব্যাগের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বিপাকে ফেলছেন চাষিদের। ফলে অনেক চাষী আগ্রহ হারাচ্ছেন। চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, আমে ফ্রুট ব্যাগিং করলে মাছি পোকা আম নষ্ট করতে পারে না। তাছাড়া আম দেখতে সুন্দর এবং ফলনও বৃদ্ধি পায়। বিষমুক্ত নিরাপদ আম উৎপাদনে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির প্রসার ঘটাতে উপজেলা কৃষি বিভাগ হতে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।