রবিবার

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি ‘সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই’ রক্তস্বল্পতা দূর করবে কচু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কি একদম তলানিতে কান উৎসবে নজর কাড়লেন অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়তি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০ কোটি আমে ফ্রুট ব্যাগিং

Paris
Update : শনিবার, ২৮ মে, ২০২২

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : বর্তমান সময়ে নিরাপদ আম উৎপাদনের প্রতিযোগিতা চলছে দেশব্যাপী। নিরাপদ আম উৎপাদন ছাড়াও আমের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ানো, কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগ বাবদ খরচ কমানো ও বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যে আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবছর বাড়ছে ফ্রুট ব্যাগিংয়ের ব্যবহার। শতভাগ নিরাপদ আম উৎপাদনের উপায় হওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফ্রুট ব্যাগিং।
জেলায় এবছর প্রায় সাড়ে ১০ কোটি আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। ঢাকা পোস্টকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে কৃষি বিভাগ। তবে বাড়তি সরবরাহ ও গাছে ফলন কম হওয়ায় চলতি মৌসুমে গতবছরের তুলনায় ফ্রুট ব্যাগিংয়ের দাম কম বলে জানান আমচাষীরা।

এছাড়াও ফ্রুট ব্যাগিংয়ের উপর আরোপ করা সরকারি ভ্যাট মওকুফের দাবি জানিয়েছেন বাগান মালিকরা। আমদানিনির্ভর ফ্রুট ব্যাগিংয়ে সরকারি ভুর্তকি দাবি কৃষকদের। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দুর্যোগ, ফরমালিনের অভিযোগে বিপুল পরিমাণ আম নষ্ট এবং নিরাপদ আম উৎপাদন নিশ্চিত না হওয়ায় বিদেশে আম রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়। সেই সাথে গত দুই বছরে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি মিলিয়ে অনেক চিন্তা নিয়ে আম উৎপাদন, পরিচর্যা ও বাজারজাত করতে হয়েছে জেলার আমচাষীদের। তবে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রয়েছেন তারা। পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশকের মাধ্যমে পরিচর্যার বিকল্প হিসেবে দেশের বাজারে এ পদ্ধতির আম চাহিদা থাকায় বিক্রি বাড়ছে।

আমদানি করা ব্যাগের সিংগভাগই চীন থেকে আসে। চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতি পিস ফ্রুট ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে ৩ টাকা থেকে ৩ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত দামে। যা গতবছর ছিল ৩ টাকা থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। অভিযোগ রয়েছে, আমচাষীদের চাহিদাকে পুঁজি করে নিম্নমানের ফ্রুট ব্যাগ বাজারজাত করে সাধারণ কৃষকদের ঠকায় মধ্যস্বত্বভোগীরা। তাই কৃষকদের দাবি, ফ্রুট ব্যাগ ও তার কাঁচামালকে প্রকৃত কৃষিজাত পন্য হিসেবে ঘোষণা করে অধিক হারে বাজার মনিটরিং করার। এতে একদিকে যেমন নিরাপদ আম উৎপাদন নিশ্চিত সম্ভব হবে, তেমনি অন্যদিকে লাভবান হবে আমচাষী, ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা।

সম্প্রতি আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন বাগান মালিক আপন রেজা ওরফে নিসান আলী। তিনি বলেন, গতবছর ১০ বিঘার একটি বাগান নিয়েছি। ফজলি, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, খিরসাপাত জাতের আম রয়েছে। এসব আমে গত ১১ দিন আগে ফ্রুট ব্যাগিং সম্পন্ন করছি। এতে আমে কোন দাগ থাকে না, বিষ দিতে হয় না, আমের কালারও খুব ভালো আসে। ফ্রুট ব্যাগিংয়ের শ্রমিক ভোলাহাটের তরিকুল ইসলাম জানান, আমের সাইজ গুটি থেকে একটু মাঝারি হলেই বাগান মালিকরা ব্যাগিং করা শুরু করে। গত প্রায় টানা ১৩ দিন বিভিন্ন বাগানে ফ্রুট ব্যাগিং করেছি। গত ২-৩ বছর আগেও এতো বেশি গাছে ব্যাগিং হতো না। তবে এবছর প্রচুর পরিমাণে আমের ব্যাগিং হয়েছে। ছোট, মাঝারি, বড় সাইজের সিংহভাগ গাছেই ব্যাগিং করে অধিক লাভবান হচ্ছেন আমচাষীরা।

গত কয়েক বছর সুইডেন এবং হংকং-এ আম রাপ্তানি করছেন শিবগঞ্জ ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবীব। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফ্রুট ব্যাগিংয়ের সিংহভাগই হয় আশ্বিনা জাতের আমে। এই জাতের আমে যদি ফ্রুট ব্যাগিং না করা হয়, তাহলে অর্ধেক আমই গাছেই পোকায় নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ফ্রুট ব্যাগিং করা হলেই আম পাড়া পর্যন্ত নিশ্চিত হয়ে থাকা যায়। এমনকি আমে কোনপ্রকার কীটনাশকও প্রয়োগ করতে হয় না। ফলে উৎপাদন খরচও কমে যায়। এমনকি দামও বেশি পাওয়া যায়। শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম জানান, ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম বিদেশে রপ্তানিযোগ্য ও শতভাগ নিরাপদ। কিন্তু অনেক সময় বাজারে থাকা মানহীন ব্যাগের কারনে তা সম্ভব হয় না। আমের ওজন ১০০ গ্রাম হলেই আমে ব্যাগ পরানো হয়। এতে করে কৃষক অন্তত ১০ বার কীটনাশক প্রয়োগের হাত থেকে রক্ষা পায়। এছাড়াও ব্যাগিং করা আম আকর্ষণীয়, দাগহীন ও পুরোপুরি কীটনাশকমুক্ত হয়। তাই আমচাষী, ব্যবসায়ী, রফতানিকারক ও ভোক্তার স্বার্থে ফ্রুট ব্যাগিং-কে কৃষি পণ্য ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব আম গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, আমের ওজন ৬০-১০০ গ্রাম হলে ফ্রুট ব্যাগ করার উপযুক্ত সময়। এতে ব্যাগিং করা আমটি অধিক পরিমানে হলুদ রং ধারণ করে। তবে আম ফ্রেস রাখতে চাইলে ৫০ গ্রাম ওজনের সময় ফ্রুট ব্যাগিং করতে হবে। কৃষক ভাইয়েরা সাধারণ রোগবালাই-ছত্রাক দমন করতে ১২-১৫ কীটনাশক-ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে। কিন্তু ফ্রুট ব্যাগিং করার ফলে আর কোন কীটনাশক-ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে না এবং খরচও অনেক কমে যাবে। এমনকি আমগুলো পাকার পরে পেড়ে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক ছাড়াই সংরক্ষণ করা যাবে ৯ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত। এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরো জানান, আম পরিপক্ক হওয়ার আগে-পরে প্রচুর পরিমানে বৃষ্টি হয়। এতে আমের গায়ে ছত্রাক দেখা দেয়। ফ্রুট ব্যাগিং করলে তা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিশেষ ধরনের কাগজের এই ব্যাগে দুটি আস্তরণ রয়েছে। বাইরের আস্তরণটি বাদামী রঙের, আর ভেতরেরটি কালো রঙের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, গতবছর জেলায় ৮ কোটি আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়। এবছর তা বেড়ে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে জেলায় সাড়ে ৭ কোটি আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়। ফ্রুট ব্যাগিংয়ের ফলে আমের বাহ্যিক রং খুব আকর্ষনীয় হয়। এতে ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়। এছাড়াও শতভাগ নিরাপদ আম উৎপাদন নিশ্চিত হয়। আমচাষীদের অভিযোগ, আমচাষীদের চাহিদাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ায়। তবে এবছর ফলন কম হওয়ায় ও সরবরাহ বেশি থাকায় দাম বাড়েনি। জেলার বেশিরভাগ আমচাষী অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায় তারা মানসম্মত ফ্রুট ব্যাগ চেনেন না। সেই সুযোগে মানহীন, অকার্যকর ফ্রুট ব্যাগ বাজারজাত করে এসব অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাই ফ্রুট ব্যাগিংয়ের বাজার মনিটরিং বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেন আমচাষীরা।

উল্লেখ্য, এবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। প্রায় ৫৫-৬০ লাখ গাছে চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। গতবছর জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris