শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার রাজশাহীতে মিললো অবৈধভাবে মজুতকরা ১১২ হাজার লিটার সয়াবিন তেল

Paris
Update : বুধবার, ১১ মে, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে গোডাউনে মজুত করা আরো সাড়ে ৯২ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে পুলিশ। এছাড়া রাজশাহীর গোদাড়ীতে ২ হাজার লিটারের উপর ও পাবনার ঈশ্বরদী বাজারে ১৮ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এনিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ৩টি এলাকা থেকে পৃথক অভিযানে ১১২ হাজার লিটার অবৈধভাবে মজুতের তেল জব্দ করলো প্রশাসন।
জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে জেলা পুলিশ অভিযান চালায়। রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম জানান, এ সময় সেখানে পাঁচটি গোডাউনে ৪৫৪ ড্রামে ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যায়।

এর মধ্যে সরকার এন্ড সন্সের গোডাউনে ৭৪ ড্রাম এবং তার গোডাউনের সামনে দাঁড়ানো ট্রাকে ৬০ ড্রাম, এন্তাজ স্টোরের গুদামে ১৪২ ড্রাম, মেসার্স পাল এন্ড ব্রাদার্সের গুদামে ১০৩ ড্রাম ও রিয়া স্টোরের গোডাউনে ৭৫ ড্রাম তেল জব্দ করা হয়। তিনি বলেন, প্রতি ড্রামে রয়েছে ২০৪ লিটার তেল। সবাই তেলগুলো মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মজুদদারদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানায় পুলিশ। এর আগের দিন অর্থাৎ সোমবার জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারের দুইটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ২৭ হাজার লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করে জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে গোদাগাড়ীর গোপালপুরে একটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুতকরা ১০১ ব্যারেলে প্রায় আড়াই হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানে আলম অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিদিরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী ইউসুফ আলীর মাঠের মধ্যে গোপালপুর হতে একটি গোডাউনে মজুদকৃত তেল উদ্ধারের কাজ শুরু করে৷ এসময় গোডাউন হতে ১০১ ব্যারেল সয়াবিন তেল উদ্ধার করে। পরে অভিযান দল বিদিরপুরের বাজারে আরো একটি গোডাউনে অভিযান চালাতে কার্যক্রম অব্যাহত আছে। অভিযানের বিষয়টি গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম নিশ্চিত করেন।

এদিকে রাজশাহীতে সয়াবিন তেল মজুত করে রাখা ও বেশি দামে বিক্রি করার অপরাধে তিন দোকানকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় এ অভিযান চালায়। অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী ও সহকারী পরিচালক হাসান-আল-মারুফের নেতৃত্বে নগরীর বোয়ালিয়া ও রাজপাড়া থানা এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) একটি দল অভিযানে সহায়তা করে।

অভিযান শেষে সহকারী পরিচালক হাসান-আল-মারুফ জানান, সাহেববাজার এলাকায় মেসার্স হুমায়ুন স্টোর নামের একটি দোকানে গিয়ে সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। তবে গুদামে গিয়েই পাওয়া যায় ১৩২ লিটার তেল। এভাবে বিক্রি না করে মজুত রাখায় প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর মেসার্স পাপ্পু অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, মূল্য বৃদ্ধির আগের সয়াবিন তেলের বোতল নতুন দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু বোতলের গায়ে যা লেখা থাকবে তাতেই বিক্রি করতে হবে। অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ায় এ দোকানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে ক্রেতা সেজে গেলে বহরমপুর মোড় এলাকার মেসার্স নুরুন্নবি ট্রডার্স নামের একটি দোকানে খোলা সয়াবিনের দাম নতুন মূল্যের চেয়েও লিটারে পাঁচ টাকা বেশি নেওয়া হয়। তাই দোকানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে এই অভিযান চলবে।
অপরদিকে পাবনার ঈশ্বরদী বাজারের শ্যামল স্টোরের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার লিটার খোলা ভোজ্য সোয়াবিন তেল, ১২৪৪ লিটার বোতলজাত তেল ও ৭ হাজার লিটার সরিষার মজুত তেল উদ্ধার করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ঈদের আগে এসব ভোজ্যতেল সংগ্রহ করে নিজের গুদামে অবৈধভাবে মজুত করেছিলেন শ্যামল স্টোরের মালিক শ্যামল দত্ত পাল।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শহরের নূরমহল্লা মাতৃমন্দিরের সামনে শ্যামল পালের গোডাউনে অভিযান পরিচালনা করেন পাবনা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জহিুরুল ইসলাম। এ সময় তিনি ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও মজুতকৃত ভোজ্যতেল জনসম্মুখে ঈদের পূর্বের দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার নির্দেশ দেন। অভিযানে প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঈশ্বরদীর নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক সানোয়ার রহমান।

তবে বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল আটকের পর মাত্র ২০ হাজার টাকা জরিমানা করায় উপস্থিত ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্বপন হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, শ্যামল পালের গোডাউন মালামাল জব্দ ও সিলগালা করা উচিত ছিল। শ্যামল পালের মতো আরো বেশ কয়েকজন তেল মজুতদার ব্যবসায়ী রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনার দাবি জানান তিনি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris