রবিবার

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি ‘সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই’ রক্তস্বল্পতা দূর করবে কচু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কি একদম তলানিতে কান উৎসবে নজর কাড়লেন অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়তি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট

নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির প্রভাব আবাসন খাতে

Paris
Update : রবিবার, ১ মে, ২০২২

এফএনএস : নির্মাণশিল্পের অপরিহার্য উপকরণ রডের দাম এ যাবতকালের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সম্প্রতি নির্মাণ কাজের অন্যতম প্রধান এ উপকরণটির দাম টন প্রতি ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৯০ থেকে ৯২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। গত তিন মাস ধরে দাম বাড়ার একপর্যায়ে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর লাফিয়ে বেড়ে যায়। অন্যদিকে রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে সিমেন্ট। আর দেড় মাসের ব্যবধানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বিল্ডিং মেটেরিয়ালের দাম। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ইট, খোয়া আর বালি। ফলে এতদিন চালু থাকা প্রকল্পের কাজ প্রায় অর্ধেকে নেমেছে বলে জানান নির্মাণশিল্প সংশ্লিষ্টরা। তাদের শঙ্কা, লাফিয়ে লাফিয়ে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে।

এতে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের দাম প্রতি স্কয়ার ফুটে নূন্যতম ৮শ থেকে এক হাজার টাকা বা তার বেশি বাড়তে পারে। পাশাপাশি আবাসনের সঙ্গে জড়িত ২৬৯টি খাতের প্রায় ৪০ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় থমকে গেছে নির্মাণকাজ। আবাসনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি। আবাসন কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগও গেছে আটকে। আর সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কায় ছোট আবাসন কোম্পানিগুলো তাদের রেডি ফ্ল্যাট বিক্রি করছে না।

আরও কিছুদিন বাজার পরিস্থিতি দেখে হয়তো বিক্রির সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। অন্য বড় কোম্পানিগুলোর রেডি প্রকল্পেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। ক্রেতাদের একটা বড় অংশই ভাবছেন, সবকিছুর দাম সাধ্যের মধ্যে হলেই কিনবেন। রিহ্যাবের সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় অনেকটা থমকে গেছে নির্মাণকাজ। লাফিয়ে লাফিয়ে রড, সিমেন্ট, ইট, বালিসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পে নির্দিষ্টের চেয়ে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। ব্যয় বাড়লে এর প্রভাব ক্রেতার ওপরও পড়ে। এতে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের দাম প্রতি স্কয়ার ফুটে নূন্যতম আটশ থেকে ১১শ টাকা বাড়তে পারে।

গত এক মাসে ফ্ল্যাট বিক্রি প্রায় শূন্যের কোঠায়। তিনি আরও বলেন, আবাসনের সঙ্গে জড়িত ২৬৯ লিংকেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণখাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সব পণ্যের দামতো আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়েনি। যেগুলোর দাম বাড়েনি কিন্তু আমাদের দেশে বেড়েছে সে সব বিষয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা না হলে নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক দামের প্রভাব পড়বে ৪০ লাখ শ্রমিকের উপর। জানা গেছে, আবাসন খাতের বড় একটি অংশ ব্যয় হয় রডের পেছনে। সে জন্য রডের দাম বাড়লে এই শিল্পে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

মিল মালিকদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বার্ষিক রডের চাহিদা ৫৫ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হয় ৬০ শতাংশ। অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ বেসরকারি খাতে। রডের প্রধান কাঁচামাল পুরানো লোহালক্কড় বা স্ক্র্যাপ আমদানি করে তা রি-রোলিং মিলে গলিয়ে রড তৈরি করা হয়। দেশে রি-রোলিং মিলের সংখ্যা ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৩০টি। এর মধ্যে বড় আকারের ৫০টি। বাকিগুলো ছোট ও মাঝারি। দেশে রডের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে পাঁচটি কারণকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

এগুলো হলো আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, জাহাজ ভাড়া, জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, ডলার দাম বৃদ্ধি এবং করোনা-পরবর্তী সারা বিশ্বে রডের চাহিদা বেড়ে যাওয়া। এদিকে অস্থির রডের বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘যৌক্তিক’ ও ‘অভিন্ন’ দাম বেঁধে দেওয়ার উপায় খুঁজতে একটি কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান জামান জানান, অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে একটি অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি সম্পর্কে সুপারিশ করবে।

আগামী ৩০ মে তারিখের মধ্যে এই কমিটির কাছ থেকে প্রতিবেদন আশা করব আমরা, বলেন তিনি। কমিটিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্যারিফ কমিশন, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ক্যাব, আইসিএমএবি, স্টিলমিল মালিকদের প্রতিনিধি, রডের বিক্রেতা এবং বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন। রডের দামে ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, রডের যৌক্তিক মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করা উচিত সেটা নিয়ে সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে পরিপূর্ণভাবে কাজ করা হয়নি। সেজন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা চালানো যেতে পারে। ইতোপূর্বে আমরা ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে একটি পর্যালোচনা চালিয়েছিলাম।

নির্মাণ শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল রডের বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে এর আগে ঢাকার ইংলিশ রোডসহ একাধিক রডের বাজারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। পরে গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইংলিশ রোড আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে এ দফা বৈঠক হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হয়। ভোক্তা অধিকারের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, করোনা মহামারী ও ইউক্রেইনে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে রডের দাম কিছুটা বেড়েছে এটা ঠিক।

কিন্তু স্বচ্ছতার জন্য এসওর গায়ে ইউনিট প্রাইস বা একক মূল্য উল্লেখ করে দিতে হবে। দেখা গেছে সকাল বিকাল এই পণ্যটির দাম প্রতি টনে ২/৩ হাজার টাকা উঠানামা করে। সেথেকে বুঝা যায় এখানে শৃঙ্খলা ফেরাতে কিছু করার আছে। এদিকে দেশের বাজারে রড সহ অন্যন্য নির্মাণসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নয়নকাজের গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু আবাসন খাত নয়, দাম না কমলে সরকারি-বেসরকারি নির্মাণকাজ বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris