শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তথ্যপাচার ও ঘুস লেনদেনের অভিযোগে মিজানের তিন বাছিরের ৮ বছরের কারাদণ্ড

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : অবৈধভাবে তথ্যপাচার ও ঘুস লেনদেনের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান মিজানের তিন বছর ও দুদকের তৎকালীন পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের আট বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। মিজানের রায়ে বিচারক বলেন, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৬৫(এ) ও ১০৯ ধারায় অভিযোগ প্রামাণিত হয়েছে। দুই ধারার অপরাধ একই ধরনের হওয়ায় তাকে একটি ধারায় অর্থাৎ ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

বাছিরের রায়ে বিচারক বলেন, বাছিরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৬১, ধারা, মানিলন্ডারিং আইন ও দুদক আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাকে মানিলন্ডারিং আইনে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া দণ্ডবিধি ১৬১ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি আদালত রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন। এর আগে ৩ জানুয়ারি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর ২৪ জানুয়ারি একই আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করে দুদক।

যুক্তি উপস্থাপন শেষে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করেন দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার থাকাকালে বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ ওঠে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এক সংবাদপাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) হয়। এরপর নারী নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৯ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।

ওই বছরই ২৪ জুন সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এর অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। মামলার তদন্তকালে ডিআইজি মিজান অভিযোগ করেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে রেহাই দিতে এনামুল বাছির তার কাছে ৪০ লাখ টাকা ঘুস নেন। এ অভিযোগ ওঠার পর এনামুল বাছিরকে সরিয়ে দুদকের আরেক পরিচালক মো. মঞ্জুর মোরশেদকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ঘুস লেনদেনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শেখ মো. ফানাফিল্যাকে প্রধান করে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তিন সদস্যের একটি দলকে।

এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি করেন ফানাফিল্যা। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও তিনি। এরপর ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল আদালত দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারের আদেশ দেন। গত বছরের (২০২১ সাল) ১৯ আগস্ট মামলার এক নম্বর সাক্ষী ও বাদী দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে করা অপর এক মামলায় মিজানুর রহমানসহ চারজনের ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে বিচার চলছে।

এদিকে ঘুস লেনদেনের অভিযোগে তিন বছরের কারাদণ্ড পাওয়া সাময়িক বরখাস্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান মিজান আদালতের এজলাসে বলেছেন, আমাকে ঘুস দেওয়ার জন্য বাধ্য করেছেন বাছির। দুদকে এক বাছির নয়, আরও বাছির রয়েছে। আমি ঘটনার শিকার হয়েছি। গতকাল বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম মিজানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার পর মিজান আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে আরেকটা মামলা (অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলা) রয়েছে। সে মামলার কোনো ভিত্তি নেই।

আমি বারবার বলেছিলাম, আমাকে ঘুস দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এদিকে একই মামলায় দুদকের তৎকালীন পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে দুটি ধারায় আট বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৮০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এদিন রায় ঘোষণার পর মিজানকে অনেকটা উৎফুল্ল দেখালোও হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায় বাছিরকে। মিজানের রায়ে বিচারক বলেন, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৬৫(এ) ও ১০৯ ধারায় অভিযোগ প্রামাণিত হয়েছে।

দুই ধারার অপরাধ একই ধরনের হওয়ায় তাকে একটি ধারায় অর্থাৎ ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। বাছিরের রায়ে বিচারক বলেন, বাছিরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ১৬১ ধারা, মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ধারা ও দুদক আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাকে মানিলন্ডারিং আইনে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাভোগ করতে হবে। এ ছাড়া দণ্ডবিধি ১৬১ ধারায় তাকে আরও তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে।

রায় ঘোষণার পর দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করে সক্ষম হয়েছি। বাছিরের বিরুদ্ধে তিনটি ধারা ও মিজানের বিরুদ্ধে দুটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বাছিরকে দুই ধারায় আট বছর (পাঁচ ও তিন বছর করে) ও মিজানকে একটি ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপর ধারায় অপরাধ একই ধরনের হওয়ায় তাকে সাজা দেওয়া হয়নি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris