রবিবার

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি ‘সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই’ রক্তস্বল্পতা দূর করবে কচু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কি একদম তলানিতে কান উৎসবে নজর কাড়লেন অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়তি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট

অনলাইন শিক্ষায় অনাগ্রহ শিক্ষার্থী-শিক্ষকদেরও

Paris
Update : বুধবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২২

এফএনএস : গোটা বিশ্বের মাথায় করোনা মহামারী দৈত্যাকার দাঁড়কাকের ডানার ছায়ার মতো কালো ছায়া হয়ে আছে। এই ছায়ার অপসারণ হচ্ছে না, আর বিশ্বও আলোর দেখা পাচ্ছে না। গোটা বিশ্ব এখন এক চরম হুমকির মুখে। বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন। সারাবিশ্বে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। বাংলাদেশেও ভুগছে চরম শঙ্কায়। কেননা দেশে দ্রুত করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলছে, এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সরকার ও জনগণ। কোভিড-১৯-এর কারণে অর্থনীতি, ব্যবসা, পর্যটন ব্যাহত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা।

করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে শিক্ষাপ্রদান বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষা প্রদান শুরু হয় অনলাইনভিত্তিক, যদিও অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হতো স্বল্প পরিসরে। আশা করা হচ্ছিলো যে করোনার প্রকোপ হ্রাস পাবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে। কিন্তু স্থবিরতা চলতে থাকে দীর্ঘদিন। অবশেষে করোনার মৃত্যু ও সংক্রমণ হার হ্রাস পাওয়া বিদায়ী বছরের শেষের দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের কোলাহলে আবারও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। কিন্তু ওমিক্রনের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুই সপ্তাহের জন্য আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

এটি অস্বীকার করার করার কোন উপায় নেই যে দীর্ঘদিন মুখোমুখি ক্লাসে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার বেশকিছু গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই বন্ধ হওয়াটা ক্ষতির মাত্রাকে আরও বাড়াবে। বিগত বছরের অনেক আবশ্যক শিখন দক্ষতা অর্জন না করেই শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে উঠে গেছে। এই শিখন ঘাটতি পুষিয়ে নিতে না পারলে সুদূরপ্রসারী ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এই ঘাটতি দূর করার জন্য অবশ্যই সুনির্দষ্ট এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার।

এই পরিকল্পনার মধ্যে পূর্ববর্তী শ্রেণিসহ বর্তমান শ্রেণির শিখন দক্ষতা অর্জনের নির্দেশনা থাকতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা নতুন কিছু শেখার সাথে সাথে আগে শেখার কথা থাকলেও শিখতে পারেনি এমন বিষয়গুলোও আস্তে আস্তে শিখতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার বাইরে থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর পড়ালেখার সাথে মানসিক দূরত্বও সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরাসরি পাঠদান বন্ধ হওয়ায় বিকল্প হিসেবে অনলাইনে পাঠদান চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই পাঠদানে আগ্রহ কম শিক্ষার্থীদের। আগ্রহ তৈরি হয়নি শিক্ষকদেরও। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর শিক্ষা বিভাগের তদারকিও নেই।

অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতি একটি যুগোপযোগী প্রক্রিয়া এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এজন্য শক্তিশালী অনলাইন থাকা আবশ্যক। উন্নত দেশের জন্য এই পদ্ধতি যতোটা না ফলপ্রদ, উন্নয়নশীল দেশে তা ততোটা নয়। অনলাইন শিক্ষার মূল শর্ত হলো সব শিক্ষার্থীর জন্য ইন্টারনেট এবং অনলাইনে কোর্সের ডকুমেন্ট নিশ্চিত করা। কিন্তু জানা যায়, আমাদের শিক্ষা প্রেক্ষাপটে এ দুটির ক্ষেত্রেই ছিল সমস্যা। শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন কোর্সের ডকুমেন্ট শিক্ষার্থীদের উপযোগী নয়।

কিন্তু এত দিনেও সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। অনলাইন পাঠদানে গত দুই বছরেও কোনো উন্নতি হয়নি। অনলাইন শিক্ষাকে সার্বজনীন করার জন্য অনলাইন সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম সব ছাত্র-ছাত্রীর থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীর আয়ত্বে এমন সরঞ্জাম নেই। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী ল্যাপটপ, ইন্টারনেটের অভাবে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এবারও পারবে না। ফলে এরা বরাবর পিছিয়েই থাকবে। গ্রাম ও পার্বত্যাঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাব রয়েছে, যা অনলাইন শিক্ষার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। অনলাইন শিক্ষার জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসংযোগ। এসব কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে একধরনের বৈষম্য। ছাত্র-ছাত্রীরা চরমভাবে হারিয়ে ফেলছে আগ্রহ। বিষণ্ণতা গ্রাস করছে তাদের। এতে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে।

অনলাইন ক্লাসের অনাগ্রহ শুধু ছাত্রদের মধ্যেই বিরাজমান নয়, শিক্ষকদেরও এতে আগ্রহ কম। সুত্র জানায়, অনলাইনের ক্লাসের ব্যাপারে ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে কিছু শিক্ষক বেশি অনাগ্রহী। কারণ অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে একজন শিক্ষকের জবাবদিহিতা চলে আসবে। ক্লাসে কী পড়াচ্ছেন বা কতটা পড়াচ্ছেন বা কতটা নৈতিক দায়িত্ব পালন করছেন বা কতটা নৈতিক দায়িত্ব পালন করছেন এ ব্যাপারে তাদের একটা জবাবদিহির মুখোমুখি হতেই হবে।

অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থাকে অবশ্য ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে এই দৃষ্টিকোণ থেকে যে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে একদিন এই ব্যবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালন করতেই হবে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ভাষ্য,’আমাদের অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় কয়েকবছর পর যেতেই হতো। করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের আগে করতে হলো। রূপকল্প-২০৪১ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নতুন দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং,অনলাইন শিক্ষাই তাদের জন্য বড় সহায়ক হতে পারে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাকদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করতে হবে।’

শিক্ষাক্ষেত্রকে যতোই ডিজিটালাইজড করার কথা ভাবা হোক না কেন শিক্ষার্থীদের এই পদ্ধতিতে আগ্রহ বাড়ছে। এতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কেননা তাঁদেরকে শিক্ষার্থীদের স্কুলের টিউশন ফি দিতে হচ্ছে। আবার টাকা দিয়ে মোবাইল ডাটাও কিনতে হচ্ছে। এতে করোনাকালে আর্থিক দীনতা বেড়েছে। এর পরও এত ব্যয় কীভাবে করবে সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের যে অনলাইনে পড়াশোনায় আগ্রহ নেই তা বিগত সময়ের কয়েকটি মাঠ জরিপের তথ্যেই ফুটে উঠেছে। খোদ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক জরিপেই তুলে ধরা হয়েছে, মাধ্যমিকের ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিত আর করোনাকালে ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী সংসদ টিভিতে প্রচারিত ক্লাসে আগ্রহ দেখায়নি। ২৯ শতাংশ বিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতির তথ্য সংরক্ষণ করেনি।

উপস্থিতির তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত ছিল। শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত এই জরিপের আগে ২০২১ সালের শুরুতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান গণস্বাক্ষরতা অভিযানের একটি গবেষণায় দেখানো হয়, দূর-শিক্ষণে (সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও ও মোবাইল ফোন) প্রক্রিয়ায় ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে, ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ অংশগ্রহণ করেনি; যেসব শিক্ষার্থী দূর-শিক্ষণ প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে, তাদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ ডিভাইসের অভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।

গ্রামীণ এলাকায় এই হার ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এটি স্পষ্ট যে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করে তুলতে ইন্টারনেট দ্রুততা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা সরকারি অনুদানে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে অনলাইন ক্লাসের সরঞ্জাম সরবরাহের পরামর্শ দিচ্ছেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris