মঙ্গলবার

২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাঠাখালিতে ধানী জমিতে আবারো চলছে পুকুর খনন

Paris
Update : সোমবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : কৃষিজমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন ২০১৬-এর ৪ নম্বর ধারায় বলা আছে, ‘বাংলাদেশের যে সকল কৃষিজমি রহিয়াছে, তাহা এই আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা করিতে হবে এবং কোনোভাবেই তাহার ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না। তবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনসাপেক্ষে কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে এবং উদ্দেশ্যে প্রণীত বিধি মোতাবেক অত্র বিধানাবলি পরিবর্তন করা যাইবে’। অন্যদিকে, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এ বলা আছে, ‘কতিপয় ক্ষেত্রে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও পুকুর ভরাটের পাশাপাশি পুকুর খননকে অবৈধ বলা হয়েছে। কিন্তু, আইন ও বিধিনিষেধকে অমান্য করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে চাষাবাদের জমি ধ্বংস করে সেখানে খনন করছেন পুকুর। যার কারণে, ধ্বংস হচ্ছে চাষাবাদের ব্যবস্থা। সংকীর্ণ হচ্ছে আবাদী জমির পরিমাণ। দেশের চাহিদানুযায়ী খাদ্য উৎপাদনের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন চাষাবাদের জমিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা।

কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের চোখের সামনেই দেদারছে চলমান রেখেছে পুকুর খননের মতো বেআইনী কাজ বলে মন্তব্য সচেতন ব্যক্তিদের। কয়েকদিন আগে রাজশাহী জেলার চারঘাট ও দুর্গাপুর উপজেলায় অবৈধভাবে পুকুর খননের দায়ে দুই ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমান আদালত ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এদিকে, রাজশাহীর কাটাখালি থানার অন্তর্গত ইউসুফপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মিড়কামারী গ্রামে কবরস্থানের পাশে প্রায় ১০ বিঘা আবাদী জমি ধ্বংস করে পুকুর খনন চলছে। রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের স্বপন নামের এক ব্যক্তি পুকুরটি খনন করছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে কাটাখালি থানার ওসিকে জানালে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। মৌক্ষিকভাবে পুকুর খনন কাজ বন্ধ করতে বলাও হয়েছে; বিষয়টি আপনি ইউএনও স্যারকে জানান। ইউএনও স্যার বললে আমি ব্যবস্থা নেবো। পরক্ষণেই চারঘাটের ‘ইউএনও’ (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) কে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আমি এক সপ্তাহের ছুটিতে আছি আপনি ‘এসি ল্যান্ড’ (সহকারী কমিশনার-ভূমি) মহোদয়ের সাথে কথা বলেন। সে মোতাবেক এসি ল্যান্ড ম্যাডামকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত না। আপনি পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দেন আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

সে মোতাবেক উনাকে ঘটনাস্থলের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিলে উক্ত কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি গিয়ে পুকুর খনন স্থান থেকে ভেকু মেশিনের চাবি জব্দ করে নিয়ে যায়। ঠিক তার কয়েকদিন পরে পুকুর খননকারিরা কর্তৃপক্ষের অফিসে গিয়ে জব্দ করা চাবি পুণরায় নিজেদের হস্তগত করে আবারো অবৈধভাবে পুকুর খনন কার্যক্রম শুরু করে। বিষয়টি জানার জন্য পুণরায় এসি ল্যান্ড কে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। ঐ গ্রামের স্থানীয়দের দেয়া সূত্র মতে, উক্ত খনন স্থানের আশেপাশের জমিগুলোতে প্রতিবছরই ভাল মানের খসল উৎপাদিক হয়।

সেখানে প্রতি কাঠা জমির বর্তমান মূল প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। পুকুরটি প্রায় দশ বিঘা ধানি জমি ধ্বংস করে খনন করা হচ্ছে। খননকৃত পুকুরের তিন দিকেই রয়েছে চাষাবাদের জমি। খননকৃত পুকুরটির পাশে কয়েক বছর পূর্বে আরো একটি বড় আকৃতির পুকুর খনন করে সেখানে মাছ চাষ করছেন ভূমি দস্যুরা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। গ্রামে দিনের পর দিন আবাদী জমি ধ্বংস করে একের পর এক পুকুর খনন করাতে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষরা।

কৃষকেরা জানান, ঐ স্থানের আবাদি জমিতে বিঘা প্রতি প্রায় বিশ মণ ধান উৎপাদন হতো। সে হিসেবে পুকুর খনন করাতে বছরের দুই মৌসুমে প্রায় চারশ মণ ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে। যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়তে দেশের জিডিপি’তে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কঠোর হস্তে এগুলো দমন না করলে আর কয়েক বছর পরে গ্রামটিতে চাষাবাদের জমির অস্তিত্ব থাকবেনা বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গ্রামের বয়জৈষ্ঠ্যরা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris