মঙ্গলবার

২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁপাই-মান্দায় শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

Paris
Update : শুক্রবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২২

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও মান্দা প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে হওয়া শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত বুধবার রাতের শিলাবৃষ্টিতে ৮২০ হেক্টর জমির রবিশস্যের ক্ষতি হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এদিন রাতে জেলায় গড়ে ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরফিুল ইসলাম বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে শিলাবৃষ্টিতে রবি ফসল ও ফুল জাতীয় ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও জানান, গত রাতের শিলাবৃষ্টিতে শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা, উজিরপুর, পাঁকা, ঘোড়াপাখিয়া, দুর্লভপুর ও ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের ৬৭২ হেক্টর জমির রবি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। রবি ফসলের মধ্যে রয়েছে, সরিষা, গম, বোরো বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, শাক-সবজি, কলা ও কুল। এদিকে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কানিজ তাসনুভা বলেন, শিলাবৃষ্টিতে সদর উপজেলার মহারাজপুর, রানীহাটি ও বালিয়াডাঙ্গা এই তিন ইউনিয়নের গম, সরিষা, খেসারি ও মসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, স্ট্রবেরিসহ শীতকালীন ১৪৮ হেক্টর রবিশস্যের ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সদর উপজেলায় পাঁচ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ৮২০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তবে এ সময়ের হালকা বৃষ্টি আমসহ বিভিন্ন ফসলের জন্য উপকারি। এই সময়ে মশুর, সরিষা, ছোলা ও গমের জন্য সামান্য বৃষ্টিপাত ভালো। তিনি জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বড় ধরনের কোনও ক্ষতির আশঙ্কা আমরা করছি না। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং সকাল থেকে রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করায় যেসব রবিশস্যের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে জানান তিনি।

মান্দা প্রতিনিধি জানান, পৌষের শেষে নওগাঁর মান্দায় হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে মৌসুমী ফলসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ভারশোঁ, নুরুল্লাবাদ, কুসুম্বা, কাঁশোপাড়া ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে শিলাবৃষ্টির এ তান্ডব চলে। একই সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া ও মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ইটভাটা ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা জানান, পৌষ মাসের শেষ দিকে বুধবার সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে হঠাৎ করেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। আধা ঘন্টা ধরে চলে এ বৃষ্টি।

এতে জনমনে স্বস্তিও ফিরে আসে। কিন্তু রাত ৯টার দিকে আবারো কালো মেঘে পশ্চিম আকাশ ঢেকে যায়। এসময় থেমে থেমে মেঘের গর্জন চলে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হালকা বৃষ্টিসহ শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলা শিলাবৃষ্টিতে আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, বেগুন, মৌসুমী ফল বরইসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষতি হয়েছে সুপারি ও কলাবাগান। শিলাবৃষ্টির তোড়ে বহু ঘরের ছাউনির টিন ফুটো হয়ে গেছে।
পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক জানান, চলতি মৌসুমে তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেন।

বুধবার রাতের শিলাবৃষ্টিতে তাঁর আলুর গাছ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে আটকে গেছে পানি। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। উপজেলার নাড়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক হাফেজ উদ্দিন ও জামিনুর রহমান বলেন, তাঁরা দুজনেই তিন বিঘা করে জমিতে সরিষার আবাদ করেন। শিলাবৃষ্টিতে সরিষার গাছগুলো ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন তাঁরা। নুরুল্লাবাদ গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মান্নান জানান, শিলাবৃষ্টির সময় ভয়ে সন্তানদের নিয়ে চৌকির নিচে আশ্রয় নিয়েছিলাম। শিলাবৃষ্টিতে তাঁর ঘরের ছাউনিতে থাকা সমুদয় টিন ফুটো হয়ে গেছে। এগুলো মেরামত করা না হলে ঘরে বসবাস করা যাবে না। কুসুম্বা ইউনিয়নের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বিদ্যুৎ বলেন, শিলাবৃষ্টিতে নাড়াডাঙ্গাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে ফসলসহ ঘরের চাউনির টিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ইটভাটা ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, হঠাৎ শিলাবৃষ্টির সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে তাঁর খলিয়ানে থাকা বিপুল পরিমাণ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তাঁর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১০ লক্ষাধিক টাকা। কুসুম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল বলেন, একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছি। শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কৃষি কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, চলতি রবি মৌসুমের ফসলখেতগুলো শিলাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনসহ তালিকা তৈরির কাজ চলছে। রিপোর্ট তৈরি হলে ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে বলা যাবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, সংবাদটি জেনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris