শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

রাজশাহী নগর আ’লীগে পদ-পদবী বিড়ম্বনা নিয়ে নানা প্রশ্ন তৃর্ণমূলের

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগে সদ্য যোগদানকৃত নতুন সদস্য ও পদধারিদের নিয়ে তৃর্ণমূলে উঠছে নানা প্রশ্ন। নগর আ’লীগের সদ্য গঠিত ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির গঠন নিয়ে গঠনতন্ত্রের নিয়মনীতিকে কিছুটা অবজ্ঞা আর বাইপাস করার প্রবণতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের পদধারি আ’লীগ নেতা ছাড়াও বেশ কয়েকটি সহোযোগী সংগঠণ বা অঙ্গসংগঠন থেকে নগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে আসা পদবীধারি অনেক নেতার বিরুদ্ধে কাগজ কলমে একাধিক পদে বহাল থাকার অভিযোগ উঠেছে।

আ’লীগের গঠনতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী একজন ব্যক্তি দুটো পদে বহাল থাকতে পারবেনা। কিন্তু, সেই নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনেকেই মহানগর আ’লীগে নাম লেখালেও কাগজ কলমে এখনো আকড়ে ধরে রেখেছেন পূর্ববর্তী পদ-পদবী। এছাড়াও গঠণতন্ত্রের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পূর্ববর্তী দল ও সংগঠণের বিভিন্ন কর্মকান্ডে দেদাড়ছে অংশ গ্রহণ করার মতো অভিযোগও উঠেছে। নগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠণে কয়েক মাস অতিক্রান্ত হলেও অধিকাংশরাই এখানো ইস্তফা দেয়নি পূর্ববর্তী দলীয় ও সংগঠণের পদ থেকে বলে জানায় দলীয় একাধিক সূত্র।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মহানগর শ্রমিক লীগের সেক্রেটারি আব্দুস সোহেল ইস্তফা না দিয়েই বর্তমানে তিনি নগর আ’লীগের ‘শ্রম বিষয়ক সম্পাদকের’ দায়িত্ব পালন করছেন। মহানগর আ’লীগের নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতির পদ পাওয়া নগর শ্রমিক লীগের প্রাক্তন সভাপতি আবুল খায়ের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সোহেল এখনো লিখিত আকারে পূর্ববর্তী পদ থেকে ইস্তফা দেননি। তবে, মহানগর আ’লীগ কার্যালয় থেকে নতুন কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত সকলকে জানানো হয়েছে যে, আগামী জানুয়ারী মাসের মধ্যে যারা পূর্ববর্তী পদ থেকে ইস্তফা দেবেনা তাদের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী সাংগঠণিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

শোনা যায়, নগর আ’লীগে যোগদানকারী শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সোহেল এখনো নাকি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কোন পদ-পদবী নিয়ে তিনি ভবিষ্যতে আরো বেশি অগ্রসর হবেন। আগের শ্রমিক লীগের পদ; নাকি নতুন পাওয়া নগর আ’লীগের পদ? একই সংগঠনের (শ্রমিক লীগ) সভাপতি আবুল খায়ের কোন প্রকার ইস্তফা না দিয়েই নগর আ’লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। যদিওবা নানামুখি চাপে মাত্র কয়েকদিন আগে তিনি শ্রমিক লীগের পূর্ববর্তী সভাপতি পদ থেকে লিখিত ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানায় সূত্র।

এছাড়াও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কোন প্রকার লিখিত ইস্তফা ব্যতী রেকেই মহানগর আ’লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। একইভাবে নিয়মনীতি ও গঠনতন্ত্রের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পংকজ দেবনাথ। তিনিও নিজের পূর্ববর্তী পদ থেকে নিয়মানুযায়ী এখনো লিখিত ইস্তফা দেননি। তিনিও যোগদান করেছেন নগর আ’লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক নেতা এখনো নিজেদের পূর্ববর্তী দলীয় পদপদবী থেকে লিখিত আকারে ইস্তফা না দিলেও মহানগর আ’লীগের বিভিন্ন পদে ও সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়েছেন অনেকেই। এরমধ্যে অভিযোগ উঠেছে, ১৬ নং ওয়ার্ড সভাপতি মুনতাজ, ১৮ নং ওয়ার্ডের সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান, ২১ নং ওয়ার্ড সভাপতি তোজাম্মেল হোসেন ও সেক্রেটারি ইসমাইল হোসেন। এছাড়াও নগরীর ০৯ নং ওয়ার্ডের আ’লীগ সভাপতি আশরাফ উদ্দীন খাঁনও তার পূর্ববর্তী পদ থেকে এখনো ইস্তফা না দিয়ে যোগদান করেছেন নগর আ’লীগের নতুন কমিটিতে।

তারা সবাই উভয় পদে বহাল থেকে ওয়ার্ড পর্যায় ছাড়াও নগন আ’লীগের বিভিন্ন মিটিং ও দলীয় কার্যকলাপে নিয়মিতভাবেই অংশগ্রহণ করছেন বলে অভিযোগ অনেকের। যেটা গঠনতন্ত্রের নিয়মনীতির ব্যত্যয় ঘটানো বা গঠনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ বলে মন্তব্য আ’লীগের নেতা কর্মীদের। একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল মহানগর যুবলীগের সহ-সম্পাদক সুমনের বিরুদ্ধেও। জৈষ্ঠ্য নেতাদের অধিকাংশরাই গঠনতন্ত্রের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিয়মনীতি ভঙ্গের পায়তারায় লিপ্ত থাকলেও মহানগর যুবলীগ থেকে গঠনতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী সহ-সম্পাদক সুমন চৌধুরী লিখিত আকারে ইস্তফা দিয়ে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের আহবায়ক হিসেবে ওয়ার্ড পর্যায়ে সদস্য নির্বাচনের কাজ করছেন বলে জানান নতুন এই আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সাহাঙ্গীর।

যদিওবা মহানগর আ’লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের নতুন এই আহবায়ক কমিটির প্রতি কোন প্রকার গ্রীন সিগন্যাল নেই বলেও দাবি দলের নেতা কর্মীদের। কিন্তু, বিষয়টি অস্বীকার করেন বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সাহাঙ্গীর।

গঠনতন্ত্রের মান্যতা ও নিয়মানুযায়ী ইস্তফা প্রদান সাপেক্ষে নতুন কমিটিতে যোগদান সস্পর্কে নগর আ’লীগের দপ্তর সম্পাদক বুলবুল বলেন, গঠনতন্ত্রের নিয়মনীতির যেনো কোন প্রকার ব্যত্যয় না ঘটে সেজন্য আমরা এবিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। প্রাথমিকভাবে আগামী ৮ জানুয়ারী কার্যনির্বাহী সদস্যদের নিয়ে এই বিষয়ে একটি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রত্যেকেই যেনো তাদের পূর্ববর্তী দলীয় ও সংগঠনের পদপদবী ও দায়িত্ব থেকে লিখিত আকারে ইস্তফা দেন সেবিষয়ে সবাইকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গঠনতন্ত্রের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নতুনদের কোন পদপদবী বৈধ হবেনা।

তাছাড়া ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে নগর আ’লীগের প্রাপ্ত পদের বিপরীতে তারা কোন প্রকার দলীয় কর্মকান্ডেও অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু, নগর আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি বেশ কয়েকমাস পূর্বে গঠিত হলেও গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতাকে প্রতিপালন করতে খামখেয়ালীপনা আর ধীরগতির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এবিষয়ে নগরীর সচেতন মহল, তৃর্ণমূলের নেতাকর্মী ও রাজনীতি সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিরা মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, গঠনতন্ত্রের এসব বিধানের অবস্থা যেন ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ এমনটা না হয়। গঠণতন্ত্রের নিয়মনীতি মেনে চলা শুধু মূল দলেই বাধ্যবাধকতা আছে সেটি কিন্তু নয়। গঠণতন্ত্রের অনুশীলন প্রতিটি অঙ্গসংগঠণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

উল্লেখ্য, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ শূন্য হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালকে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গত ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ মার্চ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগে দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও ডাবলু সরকার। এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে পাঠান লিটন ও ডাবলু।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris