শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে করোনায় আরও ৯ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৩৯৬

Paris
Update : শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১

এফএনএস : দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমেছে। রাজধানীসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ চার ও নারী পাঁচজন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৮ এবং বেসরকারি হাসপাতালে একজন মারা যান। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৭৪৬ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৯৬ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮১ জন। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনা পরিস্থিতি সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারি ও বেসরকারি ৮২৯টি ল্যাবরেটরিতে ১৯ হাজার ৩টি নমুনা সংগ্রহ ও ১৮ হাজার ৯৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট ১ কোটি ৬১ হাজার ২৪৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২ দশমিক ০৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। প্রতি ১০০ জনে সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং মৃত্যু হার ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫২৩ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৯১ জন। মৃত নয়জনের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ একজন, ষাটোর্ধ্ব চারজন, সত্তরোর্ধ্ব দুইজন এবং ৮০ বছরের অধিক বয়সী দুইজন মারা যান।

বিভাগওয়ারি হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ছয়জন, চট্টগ্রামে দুইজন এবং সিলেটে একজনের মৃত্যু হয়। বাকি পাঁচ বিভাগে কেউ মারা যায়নি। উল্লেখ্য, রাজধানীসহ সারাদেশে টানা ২৫ দিন করোনা রোগী শনাক্তের হার কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে মৃতের সংখ্যাও। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি কমেছে। সাধারণ শয্যা তো বটেই করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীর জন্য অত্যাবশ্যক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) চাহিদাও কমেছে আগের তুলনায়। স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশে টানা চার সপ্তাহ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশ বা তার চেয়ে কম হলে, দেশটি করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু ঝুঁকিমুক্ত বিবেচিত হতে পারে।

সেই হিসেবে বলা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার কাছাকাছি! স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুসারে, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত, অর্থাৎ টানা ২৫ দিন দেশে করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ বা তার চাইতে কম। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে- এক হাজার ৫৬২ জন, পরের দিন এক হাজার ৩৭৬ জন, এরপর এক হাজার ১৪৪, এক হাজার ২৩৩ এবং ৮১৮ জন। এ সময় শনাক্তের হার ছিল ৫ শতাংশ। এরপর ৯৮০, এক হাজার ২১২, এক হাজার ৩১০, এক হাজার ১৭৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তখন শনাক্তের হার ৪ শতাংশ ছিল। এছাড়া যখন ৮৬০, ৮৪৭, ৫৮৯, ৬১৭, ৭৯৪, ৬৯৪, ৭০৩, ৬৬৩ ও ৬৪৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়, তখন শনাক্তের হার ছিল ৩ শতাংশ।

আর যখন করোনা শনাক্তের হার ছিল ২ শতাংশ, তখন রোগী শনাক্ত হয় ৪১৫, ৪৮১, ৫৯৯, ৫৪৩, ৫১৮ এবং ৪৬৬ জন। এদিকে মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ও হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০ সেপ্টেম্বর একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৬ জনের মৃত্যু ও মৃত্যুহার ১ দশমিক ৭ শতাংশ হয়। এরপর ১৪ অক্টোবর মৃতের সংখ্যা সাতজন ও মৃতের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ও সাধারণ শয্যার চাহিদা কমছে। সারাদেশে ১৪ হাজার ৭৭৭টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৭টি। আর এক হাজার ২৫২টি আইসিইউয়ের মধ্যে এক হাজার পাঁচ শয্যা ফাঁকা রয়েছে।

এদিকে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা বহুলাংশে কমে এসেছে। আগে রাস্তাঘাটে বের হলে মানুষের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও এখন অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায় না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর এনসিডিসি অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন ১৪ অক্টোবর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, বর্তমানে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেকটা কমে এলেও মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি অবহেলা করে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করছে, তাতে সংক্রমণ ও ফের মৃত্যু বাড়লেও অবাক হবো না। তিনি করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি টিকাগ্রহণের পরামর্শ দেন।

চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি দেশে করোনা টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের এস্ট্রাজেনেকার টিকার মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এদিকে টিকার জন্য ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে, পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬২ জন। তাদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৮ জন ও পাসপোর্টের মাধ্যমে সাত লাখ ৩২ হাজার ৮২৪ জন নিবন্ধন করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস ও লাইন ডিরেক্টর এইচআইএস অ্যান্ড ই-হেলথ) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চার লাখ ৩২ হাজার ৮৬৩ জন টিকা নিয়েছেন। এ নিয়ে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ কোটি ৬৪ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৫ জন দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নেন তিন কোটি ৭৭ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩১ জন। আর দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন এক কোটি ৮৭ লাখ ৫৩ হাজার ২৪ জন। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris