গোমস্তাপুর সংবাদদাতা : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে কমর্রত স্বাস্থ্য কর্মীদের অবহেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম অব্যবস্থাপনায় ভরপুর। এছাড়া ঔষুধ সঙ্কটে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। অনেক এলাকার জনগন অভিযোগ করেছেন ইদানীং খুবই অল্প সময়ের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খুলে তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়। যেটুকু সময় খুলা থাকে তখন সেবাদানকারী বিশেষ করে নারী স্বাস্থ্য কর্মীরা ক্লিনিকে তেমন থাকেন না। যার ফলে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না জনগণ। স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ছয় হাজার লোকের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করেছে সরকার। ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যায় দুপুর ১২টার আগেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জ্বর, মাথা ব্যাথা, ডায়রিয়াসহ ৩১টি রোগের বিনামূল্যে ঔষুধ সরবরাহ করার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে দুই-একটি রোগের ঔষুধ। আর তালিকায় দেখা গেছে ২৭টি রোগের ঔষুধ। এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসার জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে অন্য ক্লিনিক বা হাসপাতালে। ফলে ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে রোগীদের।
চিকিৎসা নিতে আসা গোমস্তাপুর ইউনিয়নের তানজিলা অভিযোগ করে বলেন, ‘জ্বর, মাথা ব্যাথা নিয়ে ক্লিনিকে ঔষুধের জন্য এসেছি কিন্তু তারা বলছে এখানে ঔষুধ নাই। তাই আমাকে এখন বাহির থেকে ঔষুধ নিতে হবে। রহনপুর ইউনিয়নের হুক্কাপুর এলাকার রহীমা বেগমসহ স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের স্বরস্বতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকটি অধিক সময় বন্ধ থাকে।
এলাকার অসংখ্য নারী বলেছেন এখানকার কমিউনিটি ক্লিনিকটিই আমাদের একমাত্র ভরসা। সেটিও বেশিরভাগ সময়ে বন্ধ থাকে। ফলে বাচ্চাদের সর্দি-কাশিসহ নানান রোগ ও নারীদের নানা সমস্যা সংক্রান্ত রোগের কোন চিকিৎসা হয়না। তাদের উপজেলা শহরের কোনো ফার্মেসী বা ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। এলাকাবাসীর দাবি এই ক্লিনিকটি বর্তমানে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এরপর বন্ধ হয়ে যায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১১টায় রহনপুর ইউনিয়নের স্বরস্বর্তীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে ক্লিনিকটি খোলা পাওয়া যায় । এ বিষয়ে জানতে স্বরস্বতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সাজেদা বেগম বলেন, নিয়মিত ক্লিনিকে আসি। কিন্তু এই ক্লিনিকটির বিল্ডিং খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। আর আমার একটি ছোট বাচ্চা আছে। তাই ১২টার পরে চলে যায়। আর দুপুরের পর ক্লিনিকে রোগীর চাপ আসে না,তাই বন্ধ রাখা হয়। ঔষুধ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে ২৭ ধরনের ঔষুধ সরবরাহ দেয়া হয়। রোগীর চাপ বেশী থাকায় মাসের প্রথম দিকে ঔষুধ শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আর দিতে পারা যায় না।
বিধায় রোগীদের ঘুরিয়ে পাঠাতে হয়। এমন অভিযোগ নয়াদিয়াড়ী ও বোয়ালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকেও সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া গেছে। উপজেলার ৩৩ ক্লিনিকের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বেশির ভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবকাঠামো একেবারেই দূর্বল। রহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সাওন আলী বলেন, বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খোলা থাকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তবে শোনা যাচ্ছে অনেক ক্লিনিক বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারি আরো বাড়ানো দরকার বলে আমি মনে করি। কমিউনিটি হেল্থ প্রোভাইডার এ্যাসোসিয়েশন গোমস্তাপুর উপজেলার সভাপতি আহমেদ রুসদি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বেশিরভাগই অবকাঠামোগত ভাবে দূর্বল।
কয়েকটি ভবন একেবারই ঝুকিপূর্ন। জরাজীর্ন ভবনে বসে থেকেই আমাদের সহকর্মীরা জনগনকে সেবা দেয়। আমরা জনগনকে বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। কমিউনিটি ক্লিনিকে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ১ জন থাকেন। স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যান সহকারীদের ক্লিনিকে সপ্তাহে ৩ দিন আসার কথা থাকলেও তারা নিয়মিত নয়। তাই ১ জনের পক্ষে পুরো সময় দায়িত্ব পালন করা একটু অসুবিধায় হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.মাসুদ পারভেজ জানান, আমাদের কাছে ঔষুধ আসে তিন মাসে একবার কিন্তু এতে যা ঔষুধ আসে তা এক দেড় মাসেই শেষ হয়ে যায়। এজন্য আমরা সব সময় ঔষুধ দিতে পারি না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। ঝুকিপূর্ন ভবনের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের অফিসে উপস্থিতির বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে।