শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

বেশি যাত্রী পরিবহনকারী মেইল ও লোকাল ট্রেন পরিচালনায় রেলওয়ের মনোযোগ নেই

Paris
Update : সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

এফএনএস : আন্তঃনগর ও এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো পরিচালনায় রেলওয়ের বেশি মনোযোগ দিলেও লোকাল ও মেইল ট্রেন পরিচালনায় তেমন নজর দিচ্ছে না। অথচ মেইল ও লোকাল ট্রেন আন্তঃনগরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি যাত্রী পরিবহন করে। কিন্তু লোকাল ও মেইল ট্রেনের প্রতি রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় রেল ভ্রমণে সাধারণ যাত্রীর নির্ভরতাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। যদিও প্রায় অর্ধেক জনবল নিয়ে ধুঁকতে থাকা রেলওয়ের সামনে বিপুল সম্ভাবনার হাতছানিকে কাজে লাগাতে পারছে না রেলওয়ে। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের মাধ্যমে রেলওয়ে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখলেও মেইল ও লোকাল ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অবহেলা রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা দেশে রেল নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির লক্ষ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন, আধুনিক ইঞ্জিন ও কোচ আনা হলেও লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনে নতুন কিছু সংযোজন হয়নি। অথচ প্রতি বছর ট্রেনে ভ্রমণকারী কোটি কোটি যাত্রীর ৭০ ভাগই বহন করে লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন। ওসব ট্রেনের চলাচল সীমিত করায় অল্প দূরত্বে চলাচলকারী কম আয়ের রেলযাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। আর দীর্ঘদিন ধরেই রেলওয়েতে লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিন-কোচের স্বল্পতা রয়েছে।

সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ১০৪টি আন্তঃনগর এবং ২৫৪টি মেইল, কমিউটার, লোকালসহ মোট ৩৫৮টি ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ট্রেন বন্ধ থাকায় এবং নির্ধারিত যাত্রী নিয়ে কিছু ট্রেন চলায় করোনাকালে ১৪ মাসে রেলওয়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর বিভিন্ন সময় ৫০ শতাংশ আসন নিয়ে ট্রেন চললেও অধিকাংশ ট্রেনেই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ (৫০ শতাংশ আসন থেকে) সিট ফাঁকা ছিল। করোনার বিধিনিষেধ শিথিলের পরও ট্রেন চলাচল এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। বর্তমানে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে ১২ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করছে। আর উভয় অঞ্চলে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও ডেমু ট্রেন মিলিয়ে ২৪ জোড়ার কিছু বেশি ট্রেন চলাচল করছে। অনেক ট্রেন এখনো রেলওয়ের শিডিউলভুক্ত হয়নি।

যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদার পরও লোকাল, এক্সপ্রেস ও মেইল ট্রেনের আধুনিকায়নে রেলওয়ের মনোযোগ নেই। বরং সাধারণ মানুষের সামর্থ্যেরে মধ্যে থাকা ট্রেনগুলো একে একে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো কোচ আমদানি করেনি। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আন্তঃনগর ট্রেনে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। গত ১০ বছরে দু’দফা বাড়ানো হয়েছে রেলের ভাড়া। রেলওয়ের অব্যাহত লোকসান কমিয়ে আনতে ২০১২ সালের অক্টোবরে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫ থেকে ১১০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়। তার ৪ বছর পর ২০১৬ সালে আরেক দফা ভাড়া বাড়ানো হয়। আর ২০২০ সালের জুলাই-আগস্টে করোনার মধ্যেই ২৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে ওই উদ্যোগ কার্যকর হয়নি।

সূত্র আরো জানায়, আন্তঃনগর, মেইল এক্সপ্রেস, কমিউটার, ডেমুসহ বিভিন্ন ট্রেনে যুক্ত রয়েছে নতুন পুরান কোচ ও ইঞ্জিন। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচলরত বগি বা কোচের ঘাটতি কিছুটা কমলেও ইঞ্জিন সংকটের কারণে ট্রেন চলাচলে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিনের পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত ট্রেনের যাত্রা বাতিল ও শিডিউল বিপর্যয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ আরো বেশ কিছু কোচ আমদানি করলেও ইঞ্জিন কেনায় নানা জটিলতা রয়েছে। ফলে ইঞ্জিন সঙ্কটের মধ্যেও জোড়াতালি দিয়েই চলাচল করছে ট্রেন। পূর্বাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে নতুন কোচেই যাত্রীরা চলাচল করছে। তবে পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে ইঞ্জিন সংকট রয়েই গেছে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে বর্তমানে ১৩৩টি ইঞ্জিন রয়েছে।

তার মধ্যে ৭৩টি মেয়াদোত্তীর্ণ। চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৮টি এবং ঢাকা বিভাগে ৪৫টি ইঞ্জিন বিভিন্ন ট্রেনে চলাচল করছে। প্রতিদিনই ১০০ ইঞ্জিন দিয়ে কোনো রকমে ট্রেন চলাচল করে আসছে। তারপরও প্রতিদিনই ৫-৭টি ইঞ্জিন সঙ্কটে রয়েছে। ৩৩টি ইঞ্জিন ভারী মেরামতের জন্য পার্বতীপুরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে বিদেশ থেকে ইডিসিএসের অর্থায়নে ১০টি এবং এডিবির অর্থায়নে ২০টি ইঞ্জিন এসেছে। আরো ১০টি ইঞ্জিন আসছে। ওসব ইঞ্জিনের মধ্যে ৬০ থেকে ১০০ বছরের পুরনোও রয়েছে। তাছাড়া পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে নতুন পুরান ৯৮০টি কোচ রয়েছে।

সেখানে ১৯৬টি ট্রেন চলাচলের মধ্যে ঢাকায় ১৩০টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৬টি ট্রেন চলাচল করছে। আন্তঃনগর, মেইল এক্সপ্রেস, কমিউটার, ডেমুসহ বিভিন্ন ট্রেন চলাচলে নতুন কোচ ও ইঞ্জিনগুলো যুক্ত রয়েছে। এদিকে রেল সংশ্লিষ্টদের মতে, পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেনের গতি যথাযথভাবে বজায় রাখা যাচ্ছে না। পুুরনো ইঞ্জিন প্রতিনিয়ত মেরামত করে চালাতে হয়। একটি ইঞ্জিন প্রায় তিনটি কারখানায় মেরামত করে তারপর ট্রেনে সংযোজন করা হয়। পুরনো ইঞ্জিনের কারণে দুর্ঘটনার পাশাপাশি যাত্রাপথে রেলের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনাও বেড়ে চলেছে। দৈনিক চাহিদার তুলনায় ইঞ্জিন কম থাকা, লাইফটাইম শেষ হয়ে যাওয়া, মেরামতের জন্য মালামালের ঘাটতি, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং লোকবল সংকটের কারণে ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে।

তবে চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন থাকলে যাত্রা বিলম্ব রোধ করা সম্ভব হতো। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) ইঞ্জিনিয়ার মো. বোরহান উদ্দিন জানান, রেলওয়ের গতি বাড়াতে দায়িত্বশীলরা কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে কোচ ও ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছে। আরো কিছু কোচ ও ইঞ্জিন আমদানির প্রক্রিয়াধীন আছে। বর্তমানে পূর্বাঞ্চলে ১৩৩টি ইঞ্জিন রয়েছে। তার মধ্যে ১০০ ইঞ্জিন ট্রেন চলাচলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বাকি ৩৩টি ইঞ্জিন ভারী মেরামতের জন্য পার্বতীপুর ওয়ার্কশপে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ওসব সংকট কাটাতে দক্ষিণ কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আরো ১০টি ইঞ্জিন এবং ১৫০টি কোচ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে রেল বহরে দীর্ঘ বছরের পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনও (লোকমোটিভ) রয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris