রবিবার

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি ‘সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই’ রক্তস্বল্পতা দূর করবে কচু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কি একদম তলানিতে কান উৎসবে নজর কাড়লেন অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়তি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট

সঞ্চয় স্কিমের নামে কিছু বিমা কোম্পানি বেআইনিভাবে আমানত সংগ্রহ করছে

Paris
Update : শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

এফএনএস : বিমা শব্দ ব্যবহার করে এদেশে কর্মরত বেশ কিছু বিমা কোম্পানি বেআইনিভাবে আমানত সংগ্রহ করছে। আর সেক্ষেত্রে মুনাফার হার, অর্থ জমাসহ পুরো প্রক্রিয়াটিই ব্যাংকের আদলে পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু আইনি জটিলতা এড়াতে ওসব সঞ্চয়ী স্কিম বা পলিসির নামের পেছনে বিমা শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের বিমাকর্মীরাও গ্রাহকদের কাছে বিমা পলিসির পরিবর্তে ওসব ডিপোজিট স্কিম কিনতে প্রলুব্ধ করছে। তাতে সাধারণ মানুষ উচ্চ মুনাফার আশায় ব্যাংকের মতো ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) মনে করে ওসব স্কিমে বিনিয়োগ করছে। আর ওই বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের সঞ্চয়ী প্রকল্পের দিকে আকৃষ্ট করতে নানা চটকদার বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নিচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের সভায় আলোচনা হয়। তার ভিত্তিতেই বেশ কিছু বিমা কোম্পানির আমানত সংগ্রহের সত্যতা পাওয়া মিলেছে। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (আইডিআরএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মানুষকে সঞ্চয়মুখী করতে বিমা কোম্পানিগুলো নানা স্লোগানে আমানত সংগ্রহ করছে। তাছাড়া ওসব প্রতিষ্ঠানের হজ বিমা ও মেয়াদি বিমা নামেও প্রকল্প রয়েছে। মেয়াদি বিমা প্রকল্পের ক্ষেত্রে শুরুতেই সঞ্চয় ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্য ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় বলে প্রচার করা হচ্ছে। ডিপোজিট পেনশন স্কিম (এফডিপিএস-মুনাফাসহ) নামেও বিমা প্রকল্প করা হয়েছে। তাছাড়া মাসভিত্তিক সঞ্চয় বিমা পরিকল্পক (এমএসপি) নামেও প্রকল্প রয়েছে। মূলত আমাতন সংগ্রহের লক্ষ্যেই বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়ের আদলে বিমা প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওসব বিমা কোম্পানি। অথচ বিমা কোম্পানির আমানত সংগ্রহের এখতিয়ার নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিমা কোম্পানিগুলো আমানত সংগ্রহের প্রকল্প পরিচালনা করতে পারে কিনা তা পর্যালোচনা করতে আইডিআরএ’কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর সঞ্চয়ী প্রকল্পের মুনাফার হার কম। এ সুযোগে বীমা কোম্পানিগুলো ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা দিয়ে সঞ্চয়ী প্রকল্পের আদলে বিমা প্রকল্প চালু করছে। আর মাঠপর্যায়ের বিমাকর্মীরাও গ্রাহকদের সঞ্চয় বা ডিপিএস নামে গ্রাহকদের সেগুলোতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে। দেশের ব্যাংকগুলোয় যেসব সঞ্চয় প্রকল্প রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রকল্প হচ্ছে ডিপোজিট পেনশন স্কিম (ডিপিএস)। প্রায় সব ব্যাংকেই ওই প্রকল্পটি রয়েছে। আর সাধারণ সঞ্চয়কারীদের আকৃষ্ট করতে বিমা কোম্পানিগুলোও ডিপিএস নামে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। তার মাধ্যমে ওসব বিমা কোম্পানি গ্রাহকদের কাছ থেকে বিমা পলিসির নামে আমানত সংগ্রহ করছে। কিন্তু গ্রাহকদের কাছে তা ডিপিএস নামে প্রচার করা হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী শুধু ব্যাংকগুলোই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারে। সেজন্য আকর্ষণীয় সঞ্চয় প্রকল্পও চালু করতে পারবে। তাছাড়া মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি আইন অনুযায়ী ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সমবায় আইন অনুযায়ী কো-অপারেটিভ সংস্থাগুলো কেবল তাদের সদস্যদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারে। আর বিমা কোম্পানিগুলো পলিসির আওতায় গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম নিতে পারে। কিন্তু ওসব কোম্পানি কোনো সঞ্চয়ী স্কিম চালু করতে পারে না। একই সঙ্গে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো আমানতও নিতে পারে না। ইতিপূর্বে বেআইনিভাবে আমানত নেয়ার দায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের আমানত সংগ্রহ প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে।

তার মধ্যে ২০০২ সালে ইসলামিক ট্রেড অ্যান্ড কমার্স লিমিটেড (আইটিসিএল) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, ২০০৫ সালে যুবকের সঞ্চয় প্রকল্প এবং ২০১০ সালে ডেসটিনির সঞ্চয় প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়। তাছাড়া আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়ী প্রকল্প বন্ধ করা হয়েছে। আর যেসব কো-অপারেটিভ সোসাইটি সদস্যদের বাইরে থেকে বেআইনিভাবে আমানত সংগ্রহ করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সমবায় অধিদপ্তরকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের বিমা খাত এখনো শৃঙ্খলার মধ্যে আসেনি। বিমা কোম্পানিগুলো পলিসি বিক্রি করতে মাঠপর্যায়ে অনেক কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। যেগুলো শাখা থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। বিমাকর্মীরা গ্রাহকদের কাছে ডিপিএস নামে বিমা পলিসির প্রচার চালায়। অথচ তারা আমানত সংগ্রহ করলে এবং সেগুলো পরিশোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে সমস্যার সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ ফোরামের সভাপতি ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম ইউসুফ আলী জানান, বিমা কোম্পানিগুলো কোনো ধরনের আমানত সংগ্রহ করে না। পলিসির বিপরীতে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। কয়েকটি কোম্পানির যে ডিপিসি স্কিম রয়েছে সেগুলো আমানত নয়, সঞ্চয়ী বিমা। ওই সঞ্চয়ী বিমা অ্যাকচুয়ারি (বিমা আইন বিশেষজ্ঞ) এবং আইডিআরএ অনুমোদিত। সেখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, আইনত বিমা কোম্পানি ব্যাংকের মতো আমানত সংগ্রহ করতে পারে না। বিএফআইইউসহ অন্য সরকারি সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল আছে। আশা করা তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris