বুধবার

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
প্রথম ধাপে ১৪১ উপজেলায় ভোট গ্রহণ আজ প্রকল্প কতটুকু জনকল্যাণে লাগবে তা বিবেচনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর চৌবাড়িয়া পশুহাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ তানোরের গরুর গাড়ি আর মাটির বাড়ি স্থান পেয়েছে ডাক বিভাগের বিশেষ খামে রাজশাহীতে পাথরের ট্রাক থেকে ৫ কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার কাল গোদাগাড়ী উপজেলায় নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমূখী? রাজশাহী নগরীতে প্রশস্তকৃত সড়কে আলোকায়নের উদ্বোধন করলেন মেয়র দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর মোহনপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এনামূল হকের কর্মী সমাবেশ

‘পা দিয়ে গলা চেপে ধরে সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেন ওসি প্রদীপ’

Paris
Update : শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১

এফএনএস : আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার বাদী ও সফরসঙ্গী সিফাতের সাক্ষ্য ও জেরার মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিচারকার্যের প্রথম নির্ধারিত তিনদিন। এ তিনদিনে ১৫ জন সাক্ষীকে সাক্ষ্যের জন্য ডাকা হলেও প্রধান দুই সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ করতে তিনদিন সময় লাগায় বাকি ১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হয়নি। আদালত আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর চারদিন পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য নির্ধারণ করেছেন। কক্সবাজার জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়।

গত বুধবার আদালতের নির্ধারিত সাক্ষ্যগ্রহণের তিনদিন শেষ হয়েছে। এ তিনদিনে কেবল মামলার বাদী শারমিন ফেরদৌস ও সিনহার সফরসঙ্গী প্রত্যক্ষদর্শী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। ১৫ আসামির পক্ষে পৃথকভাবে বাদী ও সাক্ষী সিফাতকে জেরা করা হয়। প্রথম নির্ধারিত তিনদিনে ১৫ আসামিকে তলব করা হলেও তিনদিনে কেবল দুজনের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হয়েছে। ফলে বাকি ১৩ জন সাক্ষীর পরবর্তীতে সাক্ষ্য নেওয়া হবে। এ মামলায় মোট সাক্ষী ৮৩ জন। সাক্ষ্য ও জেরার সময় আসামি ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ মামলার ১৫ আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সাক্ষীদের জবানবন্দিতে সিনহা হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সিনহার হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা আদালতের সামনে তুলে ধরেন এ মামলার সাক্ষী ও সিনহার সফরসঙ্গী সিফাত। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সিফাত আদালতকে বলেন, সেদিন রাতে (৩১ জুলাই, ২০২০) লিয়াকত আলীর গুলিতে রাস্তায় ঢলে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন সিনহা মো. রাশেদ খান। টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমে লিয়াকত আলীর সঙ্গে আড়ালে গিয়ে কথা বলেন। এরপর সিনহার কাছে গিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে আপত্তিকর ভাষায় গালমন্দ করেন প্রদীপ। পরে তিনি নিজের পা দিয়ে সিনহার শরীর নড়াচড়া করে দেখেন। তখনো সিনহা জীবিত ছিলেন এবং ‘পানি পানি’ করছিলেন।

তখন প্রদীপ সিনহার বুকে লাথি মারেন এবং পা দিয়ে গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তল্লাশি চৌকির ভেতরে নিয়ে তাকেও (সিফাত) মারধর করেন প্রদীপ। বাদী শারমিন ফেরদৌস আদালতকে বলেন, ফোনে বলেছেÑ ‘টার্গেট ফেলে দিয়েছি, তোরা তাড়াতাড়ি আয়।’ আরেক ফোনে তিনি বলেন, ‘স্যার একটাকে ডাউন করেছি, আরেকটারে ধরে ফেলেছি।’ সিনহা পানি ও শ্বাস নিতে চাইলে লিয়াকত গালাগাল করে কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেন এবং মাথা চেপে ধরেন। এরপর পুলিশ এলে লিয়াকত নির্দেশ দেন আশপাশের মানুষকে ভয় দেখাতে, যাতে কেউ সিনহাকে সাহায্য করতে না পারে, ছবি বা ভিডিও করতে না পারে।

আমার ভাইকে হত্যার পর ইন্সপেক্টর লিয়াকতের কথোপকথনের একটি অডিওতে বিশ্ববাসী এসব কথোপকথন শুনেছেন। আমি ওসি প্রদীপ-লিয়াকতসহ জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।

সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচদিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের ৯ সদস্য। তারা হলেন বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেবনাথ। অপর আসামিরা হলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris