চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : ভোলাহাটের মুসরিভূজা গ্রামের এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল যোগে ভোলাহাট থেকে শিবগঞ্জ ফিরছিলেন। গত সোমবার রাত ৮টার দিকে চাপাইনবাগঞ্জের ভোলাহাট-শিবগঞ্জ সড়কের সোনাজল নামক স্থানে বিভিন্ন যানবহনে গণডাকাতির সময় তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দেড়লাখ টাকা, মোবাইল ফোন সহ সবকিছু কেড়ে নেয় ডাকাত দল। এ সময় তার কাছে থাকা মোটরসাইকেলের চাবিটিও ডাকাতরা কেড়ে নেই। ডাকাতির সময় ডাকাতরা গলায় অস্ত্র ধরে বলতে থাকে ‘২ ঘন্টা হাতে সময় আছে দ্রুত যা আছে দিয়ে দে। আরও অনেক গুলো যানবহনে অভিযান চালাব।’
এভাবে কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে এ প্রতিবেদক কে এ ঘটনার জন্য তিনি প্রশাসনের নিরবতাকে দায়ী করেন। শুধু তিনি নন, এ সময় ঘটনার শিকার অন্তত ১০ জন এ প্রতিবেদকের কাছে তাদের ক্ষোভের কথা জানান। তাদের দাবী প্রশাসনের নিরবতার সুযোগে একসাথে ৩৩ টি যানবহনে ২ ঘন্টা ধরে ডাকাতরা গণডাকাতির সুযোগ পেয়েছে। স্মরণকালের এ ডাকাতির সময় নির্যাতনের হাত থেকে বাদ যায়নি নারী ও শিশুরাও। অনেক নারীকে অর্ধ উলঙ্গ করে তাদের দেহ তল্লাশি করে ডাকাতরা। অনেকের গলা ও কানের গয়না টেনে ছিঁড়ে নেয় তারা। এতে করে নারীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
প্রত্যক্ষদশীরা জানান, প্রতিদিনের মত বিভিন্ন ঢাকা কোচ ভোলাহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ভোলাহাট-শিবগঞ্জ সড়ক দিয়ে ছেড়ে যাবার সময় সোনাজল নামক স্থানে ১৫/১৬জন মুখোশ পরা ডাকাত হাতে হাসুয়া ও লাঠি হাতে হামলা চালায়। ডাকাতেরা লাঠি দিয়ে কোচের সামনের অংশ ভাঙচুর করে ভিতরে ঢুকে যাত্রীদের পিটিয়ে নগদ অর্থ ও সোনার গয়না ছিনতাই করে। একই সময়ে একাধীক ট্রাক, মোটরসাইকেল ও পিকাপে ছিনতাই করে।
এছাড়া ভোলাহাট থেকে আম নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আম সরবরাহ করার কাজে নিয়োজিত ট্রাকে ছিনতাই হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদশীরা জানায়। ঢাকা কোচ জমজম ট্রাভেলসের হেলপার মোঃ আরিফ জানান, রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়ী ছেড়ে আসলে ৮টার দিকে সোনাজল নামক স্থানে ১৫/১৬ জনের ডাকাত দল মুখোশ পরে হাতে বড় বড় হাসুয়া ও লাঠি হাতে দরজায় এসে আমাকে মারপিট করে গাড়ীর ভিতর ঢুকে যাত্রীদের পিটিয়ে টাকা গয়না ছিনতাই করতে থাকে। তিনি বলেন, নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানীর মত ঘটনাও ঘটিয়েছে ডাকাতেরা।
একই বাসের সুপার ভাইজার মোঃ আলমগীর জানান, আমরা যখন গাড়ী নিয়ে আসি তখন আমাদের সামনে ডাকাত দল কিছু ট্রাক পিকাপ ও মোটরসাইকেলে ডাকাতি চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রাস্তাটি সরু হওয়ায় গাড়ি ঘুরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। গাড়ী দেখে ডাকাত দল দ্রুত হেল্পারকে পিটিয়ে গাড়ীর ভিতর ঢুকে যাত্রীদের পিটিয়ে টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই করে। তিনি বলেন, প্রথমে সাথী এন্টারপ্রাইজ পরে আমাদের জমজম ও পরে চাঁপাই ট্রাভেলসে ডাকাতি করে।
ঢাকা কোচের টিকিট মাষ্টার মোঃ নওশাদ বলেন, ৩টি ঢাকা কোচে প্রায় ৬০/৭০জন যাত্রী ছিল। এদের পিটিয়ে প্রায় সবার নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে বলে অভিযোগ করেন। এছাড়া একাধীক ট্রাক, পিকাপ ও মোটরসাইকেল আরোহীর টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করেছে।
ঢাকা গামী জমজম বাসের যাত্রী ভোলাহাট উপজেলার বীরশ্বরপুর গ্রামের মোঃ গণি বিশ্বাস জানান, ডাকাতেরা এসে আমাকে ও আমার স্ত্রী পিটিয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা, ১ ভরি স্বর্ণের চেন ও কানের দুল নিয়ে গেছে। অপর একজন ইমামনগর গ্রামের নারী গার্মেন্টস শ্রমিক মোসাঃ আশা বলেন, আমার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।
এদিকে ডাকাতের পিটুনিতে আহত আম বহনকারী ট্রাক ড্রাইভার মোঃ কাঞ্চন জানান, আমি আম নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলাম। রাস্তায় ডাকাতেরা আমাকে বেধরক পিটিয়ে নগদ ১০ হাজার টাকা ও ৩ টি মোবাইল ফোন ছিনতাই করেছে ডাকাতেরা। টাকা পয়সা দিতে বিলম্ব হওয়ায় এ সময় ডাকাতরা পিঠে ও মাথায় হাসুয়া দিয়ে আঘাত করে আহত করে।
ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সড়কে ডাকাতের ঘটনায় ৫ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতরা উপজেলার খালেআলমপুর গ্রামের সাথী এন্টারপ্রাইজের চালক মোঃ মানোয়ার, যাত্রী রাজিয়া, বীরশ্বরপুরে ওবাইদুল, মোঃ রবিউল ও ট্রাক ড্রাইভার মোঃ কাঞ্চন। এছাড়া আরো অনেকে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছে বলে আহদের মাধ্যমে জানা গেছে।
ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, বাস ডাকাতির খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশের অভিযানিক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।তবে তার আগেই ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় এখনও(বিকেল ৩টা পর্যন্ত) কেউ মামলা না করলেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহমূলক ৫ জনকে আটক করেছে।