শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজারদর নিম্নমুখী থাকায় হিমাগার থেকে খালাস করা হচ্ছে না লাখ লাখ টন আলু

Paris
Update : বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১

এফএনএস : দেশে আলুর উৎপাদন বাড়ছে। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এ মৌসুমে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩০ লাখ টন। বর্তমানে হিমাগারগুলোতে মজুদ রয়েছে প্রায় ৫৫ লাখ টন আলু। কিন্তু বাজারদর নিম্নমুখী থাকায় হিমাগারে মজুদ থাকা আলু খালাস হচ্ছে না। ফলে চলতি বছর শেষে ২০ লাখ টন আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হিমাগার সংশ্লিষ্টরা আলু রফতানির ওপর জোর দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

তাদের মতে, উদ্বৃত্ত আলুর সুষ্ঠু ব্যবহারের পদক্ষেপ নেয়া না হলে বিগত ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের মতো প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ী, ব্যাংক ও হিমাগার মালিকরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হবে। আলু উৎপাদনে কৃষকদের ব্যয় হয়েছে প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা। কিন্তু বর্তমানে হিমাগার পর্যায়ে আলুর বাজারদর সংরক্ষণ ভাড়া ও অন্যান্য খরচসহ কেজিপ্রতি গড়ে মাত্র ১৩ টাকা।

আলু বাজারজাতের জন্য সময় রয়েছে আর মাত্র চার মাস। তার মধ্যে নিম্নদরের কারণে সংরক্ষিত আলু বাজারজাত করা সম্ভব না হলে বিপুল পরিমাণ আলু অবিক্রীত থেকে যাবে। সেজন্য হিমাগার মালিকরা আলুকে দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বাড়তি উৎপাদিত আলুর নিরাপদ সংরক্ষণ ও পরবর্তী সময়ে আলুর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হিমাগারগুলোতে আলু মজুদ রাখা হয়। স্বাভাবিক সময়ে আগস্টের মধ্যেই হিমাগার থেকে মজুদ আলুর প্রায় ৮০ শতাংশ বাজারে চলে যায়। আর ৫-৭ লাখ টন বীজআলু মজুদ রাখতে হয়। তারপরও কিছু আলু থাকলে সেগুলো নিয়ে হিমাগার মালিক, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয় না।

কিন্তু চলতি বছর আলুর দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে হিমাগার থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু তুলছে না। তার ওপর রফতানি চাহিদা কমে যাওয়া ও আলুর বিকল্প ব্যবহার না থাকায় বাজারে আলুর চাহিদা এখন প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। আলু উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে সরকার পদক্ষেপ নিলেও পণ্যটির বিপণন ও বিকল্প ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ সীমিত বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে এবার বাড়তি মজুদ নিয়ে হিমাগার মালিক ও কৃষক উভয়ই সংকটের মধ্যে পড়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ২০২০ মৌসুমে প্রায় ৯০ লাখ টন আলু উৎপন্ন হয়েছিল। আর চলতি ২০২১ মৌসুমে ১ কোটি ১০ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। মূলত অধিক জমিতে আলু চাষ হওয়া, শীতকাল দীর্ঘায়িত হওয়া, আলুর ক্ষেতে রোগবালাই কম থাকা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। মার্চ ও এপ্রিলে দেশের ৪০০ হিমাগারে প্রায় ৫৫ লাখ টন ভোগ্য আলু, বীজআলু, শিল্পে ব্যবহৃত আলু ও রফতানিযোগ্য আলু সংরক্ষিত রয়েছে।

আগামী দুই মাসে মজুদ আলুর মাত্র ২০ শতাংশ বিপণন হতে পারে। তার সঙ্গে বীজআলুর পরিমাণ বাদ দিলেও হিমাগারে পড়ে থাকবে প্রায় ২০ লাখ টন আলু। সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) আলুর বিদ্যমান সংকট নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে সংগঠনটি আলু নিয়ে বিদ্যমান সংকট মেটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেছে।

আর সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে সরকারিভাবে আলু কিনে তা ত্রাণকাজে ব্যবহার করা, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ড এবং ওএমএসের ত্রাণসামগ্রীর সঙ্গে আলু বিতরণের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য হিসেবে আলুর ব্যবহার বাড়াতে সরকারিভাবে বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রম নিতেও সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে বিসিএসএ সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন জানান, এক মাস ধরে হিমাগার থেকে আলু অত্যন্ত ধীরগতিতে বাজারজাত হচ্ছে, যা হতাশাব্যঞ্জক ও উদ্বেগজনক। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর প্রায় ২০ লাখ টন অবিক্রীত ও উদ্বৃত্ত থাকবে। এমন অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে আলু রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি খোলাবাজারে ও সরকারি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আলু বিক্রির সুযোগ করে দেয়া প্রয়োজন।

তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদে আলুর স্টার্চ, চিপস, ফ্লেক্স ও বিকল্প খাদ্য তৈরিতে শিল্প স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। উদ্বৃত্ত আলুর ব্যবহার সম্পর্কে সময়মতো পদক্ষেপ নেয়া না হলে গত বছরের মতো এবারও বাজারে ধস নামবে। ফলাফল হিসেবে আগামীতে কৃষকরা আলু উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবেন। উৎপাদিত উদ্বৃত্ত আলু যেন উদ্বেগের কারণ না হয় সেজন্য উৎপাদিত আলুর সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris