শনিবার

১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি ‘সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই’ রক্তস্বল্পতা দূর করবে কচু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কি একদম তলানিতে কান উৎসবে নজর কাড়লেন অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়তি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে : শেখ হাসিনা

অনুৎপাদনশীল খাতে যাচ্ছে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ

Paris
Update : বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০২১

এফএনএস : সরকারের দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ অনুৎপাদনশীল খাতে চলে যাচ্ছে। অথচ ঋণ হিসেবে দেয়া সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ কোম্পানির চলতি মূলধন হিসাবে ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু চলতি মূলধনে তা ব্যয় না করে গ্রাহকদের কেউ কেউ ওই অর্থে জমি কিনছে, কেউ গাড়ি-বাড়ি কিনছে। তাছাড়া প্রণোদনার অর্থের বড় একটি অংশই পুঁজিবাজারে চলে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রণোদনা অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেজন্য খুব শিগগিরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ওই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে যাচ্ছে।

বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষিত ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থের অপব্যবহার বেশি হচ্ছে। অথচ চলতি মূলধন খাতে ব্যয় করবে এমন শর্ত মেনেই ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা সাড়ে ৪ শতাংশ সুদের ওই ঋণ নিচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, বিভিন্ন ধরনের ইউটিলিটি বিল, শিল্পের কাঁচামাল ক্রয়সহ উৎপাদন সচল রাখতে নৈমিত্তিক ব্যয় চলতি মূলধন হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে কিছু গ্রাহক ঋণের একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে বড় উল্লম্ফনের পেছনে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ বিনিয়োগের প্রমাণ পেয়েছে। বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনার পাশাপাশি সিএসএমই খাতের জন্য ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজেরও অপব্যবহার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার আগেও ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিল।

তাছাড়া শুধু ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের চলতি মূলধন খাতেই প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু অনেক গ্রাহকই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ নিয়ে অনুৎপাদনশীল বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও ব্যয় করছে। তবে পুঁজিবাজারে ফান্ড ডাইভার্ট বা ঋণের অপব্যয় সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। প্রণোদনার ঋণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হওয়ায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচকে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে, ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকের গাফিলতির কারণেই এমনটি হচ্ছে।

সূত্র জানায়, নভেল করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ দিতে এখন পর্যন্ত ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। অর্থের পরিমাপে প্রণোদনা প্যাকেজের আকার ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিশাল অংকের ওই প্রণোদনার মধ্যে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকাই ঋণ হিসেবে বিতরণের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার মধ্যে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ। ক্ষতিগ্রস্ত সিএসএমই খাতের জন্যও ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।

ব্যাংকঋণ হিসেবে দেয়া বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের সুদহার নির্ধারণ করা হয় ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর সিএসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নেয়া ঋণের জন্য গ্রাহকরা ৪ শতাংশ সুদ পরিশোধ করছে। ২০২০ সালের এপ্রিলেই ওই দুটি প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় বলা হয়েছিল, প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর মেয়াদ হবে ৩ বছর। তবে একজন উদ্যোক্তা কেবল এক বছরের জন্য স্বল্প সুদের ঋণ সুবিধা ভোগ করবে।

ঋণ বিতরণের দিন থেকে এক বছর পার হলে সে ঋণের বিপরীতে সরকার থেকে কোনো সুদ ভর্তুকি দেয়া হবে না। ঋণটি আদায় না হলে সেটি বিতরণকারী ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক ঋণ বলে গণ্য হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারীকৃত নীতিমালার আওতায় ইতিমধ্যে বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষিত ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বিতরণকৃত বেশির ভাগ ঋণের এক বছর পূর্ণ হয়েছে।

ব্যাংকগুলো ১ জুলাই দ্বিতীয় মেয়াদে ওই প্যাকেজ থেকে ঋণ বিতরণ শুরু করেছে। পাশাপাশি সিএসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ থেকেও দ্বিতীয় মেয়াদে ঋণ বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রথম মেয়াদে ঋণ বিতরণ শেষ হওয়ার পর প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের অপব্যবহারের প্রমাণ পেল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সূত্র আরো জানায়, নভেল করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশের পুঁজিবাজার গত বছরের প্রথমার্ধে বেহাল অবস্থায় ছিল। বেশির ভাগ শেয়ারের ধারাবাহিক দরপতনে প্রতিদিনই সূচক হারাচ্ছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।

দরপতন ঠেকাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ফ্লোরপ্রাইস নির্ধারণ করে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। করোনা সংক্রমণ শনাক্তের পর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো কমেনি সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। উল্টো মহামারীর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত কঠোর থেকে কঠোরতর বিধিনিষেধ জারি করছে সরকার। এমন অবস্থার মধ্যেও গত ৩ মাস ধরে দেশের পুঁজিবাজারে সূচক ও শেয়ারের দামে উত্থান চলছে।

এমনকি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে নতুন উচ্চতায় উঠেছে ডিএসইর বাজার মূলধন ও প্রধান সূচক। গত ৩ মাসে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে ১৯ জুলাই ডিএসইর বাজার মূলধন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

ওই ৩ মাসে বাজার মূলধন বেড়েছে ৭০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। গত ১৯ এপ্রিল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৩৪৯ পয়েন্ট। গত ৩ মাসে ডিএসইএক্সে ১ হাজার ৫৬ পয়েন্ট যুক্ত হয়েছে। ১৯ জুলাই ডিএসইএক্সের সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪০৫ পয়েন্টে। তবে পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক উত্থানের সময় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে।

এদিকে বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক উত্থানের পেছনে ব্যাংকে মেয়াদি আমানতের সুদহার ইতিহাসের সর্বনিম্নে নেমে আসাও ভূমিকা রেখেছে। তারা বলছেন, অলস তারল্যের চাপে দেশের ব্যাংক খাতে মেয়াদি আমানতের সুদহার ইতিহাসের সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংক তিন-ছয় মাস মেয়াদি আমানতে সুদ দিচ্ছে ১ থেকে ৪ শতাংশ। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ ব্যাংকে থাকা আমানত তুলে নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে। পুঁজিবাজারের বড় উল্লম্ফনের পেছনে এটিও বড় ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, ব্যাংকের পক্ষে গ্রাহকদের ঋণের গন্তব্য সব সময় নজরদারিতে রাখা সম্ভব নয়। কোনো গ্রাহকের উদ্দেশ্য যদি মহৎ না হয়, তাহলে তার নেয়া ঋণের অপব্যয় ঠেকানো কঠিন। প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় গ্রাহক ব্যাংক থেকে এক বছরের জন্য ঋণ পাচ্ছে।

এখন কোনো গ্রাহক যদি ঋণ নিয়ে প্রথমে চলতি মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করে, পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে অর্থ সরিয়ে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করে, তাহলে সেটি চিহ্নিত করা দুষ্কর। ব্যাংকগুলো প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ যথোপযুক্ত ব্যক্তির হাতে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছে। আর ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব গ্রাহকদের ওপরই বর্তায়।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris