শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

হারিয়ে যাচ্ছে ঘানি সরিষার তেল

Paris
Update : রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১

আর কে রতন : আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে নিত্য নতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য শত বছরের ইতিহাস কলু সম্প্রদায়ের লোক গরু দিয়ে ফোটায় ফোটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেল ভাঙ্গানো পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে আগের মত আর চোখে পড়ে না গরু দিয়ে ঘানিদের নির্ভেজাল খাঁটি সরিষার তেল প্রস্তুতের দৃশ্য। মানুষের প্রতিটি কাজ হচ্ছে সহজ থেকে সহজতর। উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে খরচ ও সময় তথা উৎপাদন বৃদ্ধির হার ক্রমেও বেড়েই চলেছে বিশ^ব্যাপী।

আর এ ছোঁয়া লেগেছে আমাদের দেশেও। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে পিছিয়ে নেই। ঘানি ভাঙা সরিষার তেলের বিষয় বিজ্ঞাপনে দেখা যায়। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের বেশির অংশ ছেলে মেয়েদের নিকট ঘানি শব্দটি একদম অপরিচিত। অথচ দুই দশক আগেও গ্রামে গেলেই দেখা মিলত কলু সম্প্রদায়ের আদি পেশা ঘানির কাজ করতে।

পত্রপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের সোহাগ আলী বলেন, আমার বাবা-দাদারা সবাই তেল ভাঙ্গানোর কাজ করতেন। পরে বাবার মারা গেলে এ কাজ হতে ধীরে ধীরে সরে আসি। কারন ঘানিতে তেল ভাঙানোর প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় আধুনিক মেশিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হিমশিম খেতে খেতে এখন বিলুপ্তির পর্যায়ে। বাধ্য হয়েই আমাদের মত অনেকে কলু সম্প্রদায়ের লোকজন এ পেশা পরিবর্তন করছেন।

মান্দা উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের শাহ আলম জানান, বাড়িতে তিনটি ঘানি বা তেলের গাছ ছিল। আমার বাবা ও দাদা ছিলেন তেলী। পিতার কাছ থেকে আমি উত্তরাধিকার সূত্রে এ পেশায় নেমেছে। তিনি আরো বলেন, সারা বছরই চলে এই ঘানি চলত। কিন্তু এখন আগের মত এ পেশায় আয় নেই। তার মতে, প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারা এবং সরিষা ও গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। তবে এখনও অনেক ক্রেতা রয়েছে লাভ-ক্ষতির হিসাব না কষে খোঁজেন কাঠের ঘানিতে তৈরি শতভাগ বিশুদ্ধ সরিষার তেল।

সেজন্য এখনও দু-একজন তেলী পূর্বপুরুষদের পেশা আকঁড়ে রেখেছেন। মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রবীন ব্যাক্তিত্¦ আব্দুল জলিল জানান, আগের দিনে গ্রামের মানুষ কলু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের বাড়ীতে বলদ গরু দ্বারা খাঁটি সরিষার তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ করতেন। আমরা সেই দিয়ে রান্না-বান্নার কাজসহ গায়ে মাখার কাজে ব্যবহৃত হত। এই পুরনো পদ্ধতি থেকে পাওয়া তেল মান ও বিশুদ্ধতার দিক থেকে ছিল সেরা। কিন্তু বর্তমান যুগে সবকিছুতে মেশিনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ঘানি আর তেমন চোখে পড়ে না।

কেশরহাট ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন বলেন, এককালে গ্রামের হাট-বাজারে মাটির হাঁড়িতে ফেরি করে বিক্রি হতো খাঁটি সরিষার তেল। হাঁড়ির ঢাকনির নিচে থাকতো তালের বিচির খোসা দিয়ে বানানো বাঁশের হাতলের ওড়ন। তেল তুলে দেয়ার জন্য এই ওড়ং ব্যবহৃত হতো। পেশাটি হারিয়ে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো আধুনিক প্রযুক্তি। এ যুগের ব্যবসায়ীরা ইলেকট্রিক মোটর দিয়ে লোহার ঘানিতে উৎপাদিত তেল কম দামে বিক্রি করেন। কিন্তু সে তুলনায় পুরনো পদ্ধতির ঘানিতে রাত-দিন পরিশ্রম করে ফোঁটায় ফোঁটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেলের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়। এ অসম প্রতিযোগিতাই কলুদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris