মঙ্গলবার

২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে পাটের বাম্পার ফলন

Paris
Update : বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

আর কে রতন : চলতি মুওসুমে আবহাওয়া অনুকুলে এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় রাজশাহীতে পাটের ফলন ভালো হয়েছে। পাটচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোয়। নতুন পাট বাজারে অল্প পরিসরে পাবের আমদানী শুরু হলেও আর কিছু দিনের মধ্যে পুরোদমে কেনা-বেচা শুরু হবে। আর এবার ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম ভাল পাবেন এমনটি আশাবাদী এ অঞ্চলের চাষিরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলার ৯ টি উপজেলায় ১৪ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে পাটবীজ বপনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল। গত বছর বপন করা হয়েছিলো ১৪ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে। এ বছর উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৫০ বেল। (সাড়ে চার মণে এক বেল)। এবার রাজশাহীর কৃষকরা ও-৯৮৯৭, ও-৭২, জেআরও ৫২৪ জাত ও রবি-১ জাতের পাট বপন করছে।

বাগমারার তাহেরপুর হাটের পাট ব্যবসায়ী সোলেমান হোসেন জানান, গত বছর প্রতি মন পাট বিক্রি হয়েছে ৮০০-১২০০ টাকায়। পাট উঠার শুরুর সময় তা বেড়ে ১৫০০-২০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার বছর শুরুতেও ৪-৫ টাকা পর্যন্ত প্রতি মন পাট বিক্রি হচ্ছে। এবং বাজারে আগের তুলনায় বর্তমানে চাহিদাও বেশি। কারণ বিশ্ব বাজারে সুতার দাম বেড়েছে, তাই পাটের দাম বেড়েছে।

পুঠিয়া উপজেলার ঝমমলিয়া আশরাফুল আলম জানান, পূর্বে পাট ওঠার শুরুর দিকে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হলেও চলতি মুওসুমের শুরুতেও ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা প্রতি মন দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। যা এর আগে আমরা কখনই পাইনি। পাটের বেশি মূল্যে বিক্রি করতে পেরে ভিষন আনন্দিত আমরা। দূর্গাপুর উপজেলার সুখানদিঘি গ্রামের পাটচাষি আলমঙ্গীর হোসেন জানান, ২ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে।

এবং বাজারে দাম ভাল পাবো বলে আশা করছি। পবা উপজেলার পাট চাষি এরশাদ আলী জানান, আগে প্রতি বছর ৩-৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করতাম। কিন্তু বাজারে বিক্রি করে ক্ষেতের খরচের টাকা হত না। তাই এ আবাদ বাদ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বাজারে মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এ বছর ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি এবং এখন পর্যন্ত জমিতে গাছ খুব সুন্দর আছে আশা করছি আর ১৫ দিনের মধ্যে কাটতে পারবো আর এবারও ভাল দাম পাবো।

জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক নুর মোহাম্মাদ জানান, বাংলাদেশকে এক সময় বলা হতো সোনালি আঁশের দেশ। সে সময় আমাদের অঞ্চলেও ব্যাপক হারে পাটের চাষাবাদ হত। কিন্তু পরবর্তীতে সঠিক ভাবে রপ্তানি না হওয়ায় এবং দাম কম পাওয়ায় লোকসান গুণতে হত চাষিদের।

ফলে সেই ধারাবাহিকতা থেকে ধীরে ধীরে থমকে যায় এবং কৃষক পাট চাষ হতে দিনে দিনে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। তবে কয়েক বছর হতে প্রতিবারও পাট রফতানি অনেক বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পাটের দামও ভাল পেতে শুরু করেছে । যার জন্য বর্তমানে পাটের দাম নিয়ে সংশয় নেই কৃষকদের। চলতি বছরে বাজারে পাটের মূল্য ভাল পাবে কৃষকরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালমা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে ভাল ফলন হয়েছে। গত বছরে কৃষকরা পাটের ভালো দাম পেয়েছে। এবার চলতি মৌসুমে অল্প পরিসরে বাজারে পাট উঠতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত হাটে বাজারে দাম ভালো আছে। এবং আগামীতেও পাটের দাম কুষকরা আশানুরুপ পাবে।

তিনি আরো বলেন, এ বছর কৃষকরা ও-৯৮৯৭, ও-৭২, জেআরও ৫২৪ জাত ও রবি ওয়ান জাতে পাট বপন করেছে। আমাদের ৯ টি উপজেলার সকল কৃষি বিভাগ কৃষকদের নানা ভাবে পরামর্শ দিচ্ছে। আশা করছি এবার পাটের বাম্পার ফলন হবে এবং দাম ভাল পাবে চাষিরা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris