মঙ্গলবার

২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিয়ামতপুরে বরেন্দ্র মাটিতে ড্রাগন চাষে সফল জুয়েল

Paris
Update : বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

নিয়ামতপুর থেকে প্রতিনিধি : উত্তরা অঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমি নিয়ামতপুরের মাটিতে বিদেশী ড্রাগন ফলের চাষ করে সফল হয়েছেন কলেজ শিক্ষক জুয়েল । দিনে এবং রাতে ড্রাগন গাছের উপযোগী বিশেষ আলোয় বাগানের ড্রাগন গাছে এখন সাদা-হলুদের মতো দৃষ্টিনন্দন অসংখ্য ফুল এলাকার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। বর্তমানে বাগানে ঝুলছে ছোট-বড় অনেক লাল-সবুজ, কাঁচা-পাকা ড্রাগন ফল। এ রকম মফস্বলে ছবির মতো বাগান দেখে যে কারো মন পুলকিত হবে। তাই কলেজ শিক্ষক ড্রাগন ফল চাষির চোখে মুখেও যেনো আনন্দের ঝিলিক।

এমন এক সৌখিন চাষি হলেন রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান সরকারী কলেজের গণিত বিষয়ের শিক্ষক ওবাইদুর রহমান জুয়েল। নিয়ামতপুরের রসুলপুর ইউনিয়নের দামপুরা গ্রামের তার খামার বাড়ীতে প্রায় এক একর জমিতে ড্রাগন চাষ করে তাতে ফল ধরিয়ে এখন লাভের স্বপ্ন দেখছেন। জানা যায়, মেক্সিকোর ফল ড্রাগন। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও চীনে এই ফলটির বাজার রমরমা। সে দিক থেকে ড্রাগন ফল বাংলাদেশে নতুনই বলা চলে।

শিক্ষক জুয়েলের ছোট বেলা থেকেই ব্যতিক্রম কিছু করার ইচ্ছা ছিল। তাই ইন্টারনেটের বদৌলতে ইউটিউবে ড্রাগন ফল চাষের ভিডিও দেখে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রায় ৫/৬ বছর থেকে বিভিন্ন জাতের আম, কমলা ও মালটার বাগান গড়েন। সম্প্রতি প্রায় দুইবছর আগে নিয়ামতপুরের তার খামার বাড়ীর পাশে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। বাগানের এক একর জায়গা দুই হাজার ড্রাগনের চারা রোপন করেন তিনি। সে চারাগুলো বড় হয়ে এখন তাতে ফুল ও ফল এসেছে।

এর চাষ পদ্ধতি নিয়ে জানা যায়, ড্রাগন ফলের ক্যাকটাস বেড়ে উঠার জন্য প্রতিটি ঝোপে একটি করে কংক্রিটের পিলার স্থাপন করা হয়। এই পিলারের ওপর একটি রাবারের টায়ার বেঁধে দেওয়া হয়। এতে ভর করেই ড্রাগন ফল গাছের ক্যাকটাসগুলো বেড়ে ওঠে। অন্য ক্যাকটাসের ফুলের মতই ড্রাগন ফলের ক্যাকটাসেও রাতারাতি ফুল ফুটে। ভোরের আলো পড়তেই এর ফুল সতেজতা হারিয়ে ফেলে। রাতের বেলা চলাফেরা করে এমন মথ ও বাদুর ড্রাগন ফলের পরাগায়নের কাজটি করে। ফুল ফোটা থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত পাঁচ মাসের মত সময় লাগে।

শিক্ষক জুয়েলের মতে ড্রাগন ফল চাষ প্রথম দিকে (কংক্রিটের পিলার, লোহার রিং ও তাতে টায়ার পরাতে) একটু বেশী খরচ হলেও তা অত্যান্ত লাভজনক। তার বাগানে প্রথমে লাগানো ৭০০ টি গাছে ফুল ফল আছে। পরে লাগানো ৩০০ টি গাছে ফুল আসবে শীঘ্রই। সম্প্রতি তিনি বাগানের ফল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছেন। গাছের পরিচর্যা নিয়ে শিক্ষক জুয়েল জানান, গাছে অধিক পরিমাণে জৈব সার ও অল্প পরিমাণে ইউরিয়া, ফসফেট ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হয়।

খরা মৌসুমে সেঁচ দিতে হয়। এছাড়া বাড়তি কোনো যত্ন নিতে হয় না। ড্রাগন গাছে সাধারণত ভাইরাসজনিত রোগ, পাতা মোড়ানো ও ছত্রাকজনিত রোগ দেখা যায়। ফল আসলে পিঁপড়া ও মিলিবাগ পোকার আক্রমণ হতে পারে। এজন্য ক্যারাইটি, কপার অক্সিক্লোরাইড ও সাইফারম্যাথিন নামক কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে বাগানে তিনি বেশি বেশি সময় দিচ্ছেন। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত কৃষকদের সঙ্গে তিনি নিজেও কাজ করছেন।

আর খরচের প্রসঙ্গে বলেন, প্রথম দিকে গাছ বেড়ে উঠার প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে একটু বেশী খরচ হলেও বাগানে যে পরিমান ফুল ফল এসেছে তাতে খরচের টাকা উঠে আসবে। আগামী মৌসুম থেকে তিনি ড্রাগরনর বাগান থেকে ভাল মুনাফা পাবেন বলে আশা করেন। কলেজ শিক্ষক জুয়েল আরো বলেন, “ড্রাগন ফল এখনও অনেকের কাছেই অজানা। তিনি এ ফলটিকে গ্রামীন মানুষের কাছে পরিচিত করাতে চান।

তাই এ ফলটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি বাগানের প্রথম ফল ( যেগুলোর ওজন প্রায় ৩৫০- ৪০০ গ্রাম) পাশর্^বর্তী পাড়াগুলোর বাড়ীতে বাড়ীতে একটি করে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। এসময় তিনি ফলটির পরিচয় ঘটান ও এর পুষ্টিগুন জানান এলাকার মানুষ ও চাষিদের কাছে। সাথে সাথে ফলটি চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধও করেন তিনি।” নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম জানান, নিয়ামতপুওে দুটি ড্রাগন ফলের বাগান আছে।

তাছাড়া বিভিন্ন গ্রাম ছোট-বড় অনেক ড্রাগন চাষী আছে। পুষ্টিমানে ভরা ড্রাগন ফল হওয়ায় চাষে সব শ্রেণির মানুষদের আগ্রহ বাড়ছে। এই ফল সব ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে বেলে, দোঁ-আশ মাটিতে ড্রাগন ফল চাষ উত্তম। এ ফলের চাষ বাড়াতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris