শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

নিয়ামতপুরে গরু নিয়ে বিপাকে ক্ষুদ্র খামারিরা

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১

শাহজাহান শাজু, নিয়ামতপুর : নিয়ামতপুর উপজেলার ঝাড়ুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ থেকে পড়ুয়া সরকার শাহ আলম। পেশায় তিনি বটতলীহাট বিএম মহিলা টেকনিক্যাল কলেজের কলেজর অধ্যক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি এখনও এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি গরুর খামার গড়েন একবছরে। নিজ বাড়িতেই গড়েছেন তার ছোট্ট এ খামারটি। খামারে রয়েছে তার আটটি বিভিন্ন জাতের ষাঁড় গরু। রয়েছে একটি অষ্ট্রেলিয়ান গাভীও।

তিনি কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে প্রায় ৪/৫ মাস আগে গরু গুলো কিনেছিলেন, ঈদে বিক্রি করে কিছুটা লাভের আশায়। ঈদের বাকী আর নয় দিন। কিন্তু করোনার প্রভাবে এখন পর্যন্ত গরুর বাজার মন্দা থাকায় একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি তিনি। দেশ জুড়ে লকডাউন থাকায় গরুর হাট বন্ধ থাকায় হাটেও নিতে পারছেননা গরু গুলো। এ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এ ক্ষুদ্র গরুখামারি কপালে।

শুধু শাহ আলম নয়, দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপজেলার প্রায় ২ হাজার ছোট-বড় গরুর খামারি তাঁদের খামার ও পরিবারে পোষা গরু নিয়ে। গত তিন-চার বছর ধরে ভারতীয় গরু না আসায় কোরবানির হাটগুলোতে দেশীয় গরুর ব্যাপক চাহিদা ছিল। তাতে গরু বিক্রি করে নিয়ামতপুরের খামারিরা বেশ লাভবান হয়েছিলেন।

আগে কোরবানির এক-দেড় মাস আগেই উপজেলার বিভিন্ন হাটে ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরু কিনতো ব্যাপারিরা। কিন্তু এবার দেশজুড়ে লকডাউন ও করোনার প্রভাবে কোরবানির ঈদের (ঈদুল আজহা) আর মাত্র নয় দিন বাকি থাকলেও এখনও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় বাজারের ব্যাপারীদের তেমন আনা-গোনা নেই এলাকায়। এতে খামারে প্রস্তুত করা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের খামারিরা।

খামারি মালিক শাহ আলম বলেন, এবার গরু কিনতে ব্যাপারিদের এখনও পর্যন্ত দেখা নেই। দুই-তিনজন ব্যাপারির সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার শেষ মূহূর্তে গরুর বাজার কেমন থাকবে তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন তাঁরা। তবে এবার আগের বছরগুলোর তুলনায় গরুর দাম কম থাকবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

খামারিরা ধরে নিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানির হাটে এবার গরুর আশানুরূপ দাম পাওয়া যাবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশিরভাগ খামারি লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন কেনা দাম ও লালনপালনের খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা। যদিও খামারিদের কিছুটা লোকসান লাঘবের জন্য সরকার গত বছর থেকে প্রনোদোনা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রনোদোনার টাকা কোন ধরনের খামারিরা পাচ্ছেন তাও জানেনা নিয়ামতপুরের অধিকাংশ খামারি মালিক।

উপজেলা সদর ইউনিয়নের মায়ামারী গ্রামের আরেক গরুর খামারি মালিক শাহজাহান শাজু বলেন গত বছরও করোনার কারনে খামারে পোষা ১০ টি গরুতে লোকসান গুনেছেন। সে লোকসান পূরনের আশায় ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে এবারো তিনি ১২ টি গরু প্রস্থুত করেছেন। কিন্তু এখনও বিক্রি করতে পারেননি গরুগুলো। একটি বিক্রি করলেও গুনতে হয়েছে লোকসান। তিনি প্রতিবেককে জানান, গত বছর লোকসান গুনেও তিনি পাননি প্রনোদোনার টাকা। এবারও শুনেছেন প্রনোদোনার তালিকা প্রস্তত হয়েছে। কিন্তু জানেননা তিনি পাবেন কিনা প্রনোদোনার টাকা!

জেলা প্রশাষকের অনুমতিক্রমে গতকাল সোমবার নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দনগর কলেজ মাঠে লাগানো সাপ্তাহিক ছাতড়া গরুর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটগুলোতে প্রচুর গরু উঠেছে। কিন্তু ক্রেতা কম। হাটের ইজারাদার ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটে যে পরিমাণ গরুর সরবরাহ, সে তুলনায় ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনা হচ্ছে কম। ক্রেতারাও দাম বলছেন কম। এতে খামারি ও গেরস্তদের লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে।

গরু বিক্রি করে বাড়ি ফিরছিলেন টিএলবি গ্রামের আবুল কাসেম বলেন একটি বকনা গরু তুলেছিলেন হাটে। বিক্রি করেছেন ৬০ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, হাটে ক্রেতা কম। গরুর দামই বলেনা কেউ, নেই তেন ব্যাপারীদের আনোগোনা। নেই স্বাস্থ্যবিধির সচেতনতা তাই করোনার ভয়ে বাধ্য হয়েই দ্রুত ৭০ হাজার টাকার গরু ৬০ হাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “এই প্রথম হাটে নতুন নিয়ম দেখলাম, গরু বিক্রেতাকেও দিতে হচ্ছে ১০০ টাকার খাজনা। এ নিয়ে কিছুটা মন খারাপ তার।”

ছাতড়া হাটের ইজারাদার লুৎফর রহমান বলেন, এবার গরুর দাম অনেক কম। ক্রেতার অভাবে গরুর তেমন বেচাকেনা হচ্ছে না। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখনও গরু কিনতে আসেনি হাটে। এ প্রসঙ্গে নিয়ামতপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ইয়ামিন আলী বলেন, উপজেলায় ছোট-বড় খামারে প্রায় ১০ হাজার গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

এর মধ্যে উপজেলায় গরু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। কোরবানিযোগ্য বাকি গরু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রির কথা। ‘হাটগুলোতে গরুর আমদানির তুলনায় ক্রেতা কম এমনটাই ফোন করে জানাচ্ছেন খামারিরা। তারা বলছেন, যে দুএকটা গরু বিক্রি হচ্ছে তাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, সরকার ক্ষতিগ্রস্থ খামারীদের প্রণদনা দিচ্ছে ইতি মধ্যে ১ম পর্যায়ে দেওয়া হয়েগেছে, ২য় পর্যায়ে দেওয়ার জন্য তালিকা করা হয়েছে।’


আরোও অন্যান্য খবর
Paris