শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জে ফুড কারখানায় আগুনে অর্ধশতাধিক মৃত্যু, নিখোঁজ ৫১ জন

Paris
Update : শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১

এফএনএস : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুরে কারখানার পোড়া ধ্বংস্তূপ থেকে এ লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হলে কারখানা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে তখনই তিনজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোট ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪৯টি পোড়া লাশ ফায়ার সার্ভিসের চারটি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কারখানা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। মুহূর্তেই আগুন ভবনের অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে শ্রমিকরা ভবনের ছাদে জড়ো হন। ছাদসহ বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন অনেকে। গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় আগুন জ¦লছিল। টানা ২০ ঘণ্টা ধরে আগুন জ¦লতে থাকায় ছয়তলা ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে রূপগঞ্জ থানাধীন ভূলতা পুলিশ এসআই মিথুন লাল বৈদ্য এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর দেবাশীষ বর্ধন জানান, গত বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর ২৫ জনকে জীবিত অবস্থায় ছাদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ৫১ শ্রমিককে তাদের পরিবারের সদস্যরা খুঁজছেন। তাদের খোঁজে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে কারখানার সামনে অপেক্ষা করছিলেন তারা। নিখোঁজ শ্রমিকরা হলেনÑ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার গোলামের ছেলে মো. মহিউদ্দিন, একই উপজেলার ফখরুল ইসলামের ছেলে শামীম, ভোলা জেলার ইসমাইলের মেয়ে হাফেজা, নারায়ণগঞ্জের হাকিম আলীর মেয়ে ফিরোজা বেগম, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার তাহের উদ্দিনের ছেলে নাঈম,

একই জেলার নিতাই উপজেলার স্বপনের মেয়ে শাহিদা, মৌলভীবাজারের পরবা বরমনের ছেলে কমপা বরমন, ভোলার তাজুদ্দিনের ছেলে রাকিব, কিশোরগঞ্জের কাইয়ুমের মেয়ে খাদিজা, নেত্রকোনার জাকির হোসেনের মেয়ে শান্তা মনি, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সেলিমের স্ত্রী উর্মিতা বেগম, কিশোরগঞ্জের কাইয়ুমের মেয়ে আকিমা, নেত্রকোনার কবির হোসেনের মেয়ে হিমা, রংপুরের মানসের ছেলে স্বপন, কিশোরগঞ্জের মাহাতাব উদ্দিনের স্ত্রী শাহানা, একই জেলার গোলাকাইন্দাইল খালপাড়ের রাজিবের স্ত্রী আমেনা, কিশোরগঞ্জের আবদুর রশিদের মেয়ে মিনা খাতুন,

পাবনার হাঠখালির শাহাদত খানের ছেলে মোহাম্মদ আলী, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ফজলুর ছেলে হাসনাইন, জামালপুরের মো. শওকতের ছেলে জিহাদ রানা, কিশোরগঞ্জের মো. সেলিমের মেয়ে সেলিনা, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ফিরোজা, তার মেয়ে সুমাইয়া, নরসিংদীর শিবপুরের জসিম উদ্দীনের স্ত্রী রিমা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সুজনের মেয়ে রিনা আক্তার, চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার হাছান উল্লাহর ছেলে পারভেজ, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার গোকুলের ছেলে মাহাবুব, গাজীপুরের সেলিম মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া (ইয়াসিন),

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মান্নান মাতাবরের ছেলে নোমান মিয়া, দোলাকান্দাইল উপজেলার আফজালের স্ত্রী নাজমা বেগম, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার আবল কাশেমের ছেলে রাসেদ, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার এনায়েতের ছেলে বাদশা, ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার ইউসুফ, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার আবুল বাসারের ছেলে জিহাদ, শাকিল, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের খোকনের স্ত্রী জাহানারা, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার কবিরের ছেলে মো. রাকিব,

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার সুরুজ আলীর মেয়ে ফারজানা, কিশোরগঞ্জের চানমিয়ার ছেলে নাজমুল, কিশোরগঞ্জের বাস্তু মিয়ার ছেলে তাছলিমা, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মো. রাকিব, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার মো. বাহারের ছেলে মো. আকাশ, কিশোরগঞ্জের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে তাছলিমা, কিশোরগঞ্জের আজিজুল হকের মেয়ে মোছা. রহিমা, গাইবান্ধার প্রফেসর কলনির হাসানুজ্জামানের মেয়ে নুসরাত জাহান টুকটুকি,

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থানার চান্দু মিয়ার মেয়ে রাবেয়া, কিশোরগঞ্জের মালেকের মেয়ে মাহমুদা, নেত্রকোনার খালিয়াঝুড়ি উপজেলার আজমত আলীর মেয়ে তাকিয়া আক্তার, হবিগঞ্জের আবদুল মান্নানের মেয়ে তুলি, কিশোরগঞ্জের নিজামউদ্দিনের মেয়ে শাহানা, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ফয়জুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন সজীব, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার লালচু মিয়ার ছেলে লার্বণ আক্তার।

প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির শোক : রূপগঞ্জে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি গতকাল শুক্রবার এক শোকবার্তায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি একইসঙ্গে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

সংঘর্ষ, আনসারদের অস্ত্র লুট : এদিকে রূপগঞ্জের হাসেম ফুড লিমিটেডে আগুনে অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হাসেম ফুড লিমিটেডের আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে সংরক্ষণাগার থেকে তিনটি শর্টগান লুট করে নিয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আনসার ক্যাম্পে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।

আনসারদের প্রশিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ নাছিমা বেগম বলেন, সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হাসেম ফুডের আনসার ক্যাম্পে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ সময় শ্রমিকরা ক্যাম্পের অস্ত্র সংরক্ষণাগারের তালা ভেঙে তিনটি শর্টগান লুট করে নেয়। এ হামলায় কাউসার, বিশ্বজিত, ফারুক, মোশরাকুলসহ প্রায় পাঁচ আনসার সদস্য আহত হন। তিনি আরও বলেন, অস্ত্র লুটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

তাদের সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনাস্থলে র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও আঞ্চলিক পুলিশ ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ উপস্থিত হয়। রূপগঞ্জ থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ বলেন, শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের পুলিশ টিয়ারশেল ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

ডিএনএ টেস্ট করাতে হবে : অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৯ মরদেহের একটিও শনাক্ত করা যায়নি। এজন্য লাশগুলোর ডিএনএ টেস্ট ও নিহতদের স্বজনদের ডিএনএ টেস্ট মিলিয়ে শনাক্ত করা হবে। গতকাল শুক্রবার বিকালে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) নমুনা সংগ্রহের জন্য মরদেহের দাবিদার আত্মীয়-স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করে। সিআইডি ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের সহকারী ডিএনএ এনালিস্ট আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের পাঁচ সদস্যের টিম নমুনা সংগ্রহের কাজ করছে।

তিনি বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়ায় লাশ শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্তের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রথমে ঢামেক মর্গ থেকে মৃতদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে এবং স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাদের সঙ্গে ডিএনএ ম্যাচ করবে তাদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। ফরেনসিক বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, লাশ শনাক্তের জন্য স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম চলবে আগামী দুই থেকে তিনদিন। এছাড়াও এখানে যারা নমুনা দিতে পারবে না, তারা মালিবাগের সিআইডি সদর দপ্তরের গিয়েও নমুনা দিতে পারবেন।

যে কানণে ভয়াবহ আগুন : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ছয়তলা ভবনে প্লাস্টিক, ফয়েল, কাগজ, কার্টন, রেজিন, ঘিসহ খাদ্য তৈরির বিভিন্ন মালামাল ও প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ভয়াবহ হয়ে ওঠে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন- এ কারণে আগুন দ্রুত অন্য ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি আগুন এক দফা নেভানোর পরও আবার জ¦লে উঠছিল। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৪৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব মরদেহের অধিকাংশই পুড়ে গেছে। দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ওই কারখানার দু’টি ফ্লোরের পাঁচ ও ছয়তলায় আগুন ড্যাম্পিংয়ের কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ড্যাম্পিংয়ের কাজ শেষে সেখানে আরও লাশ রয়েছে কি-না, তা তল্লাশি করে দেখা হবে। তিনি বলেন, লাশগুলো উদ্ধারের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় অন্তত ২০০ শ্রমিক কাজ করতেন। ওই ভবন সেন্ট্রাল গোডাউন হিসেবে তারা ব্যবহার করতেন।

ভবনে বিভিন্ন জুসের ফ্লেভার, রোল, ফয়েল প্যাকেটসহ বিভিন্ন মালামাল ছিল। আগুন লাগার পর কত শ্রমিক আটকা পড়েছেন, তা তারা জানেন না। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে দাবি তাদের। জানা গেছে, ভবনের চতুর্থ তলায় ললিপপ, তরল চকলেট, তৃতীয় তলায় অরগানিক পানীয় (জুস, লাচ্ছি), দোতলায় টোস্ট বিস্কুট, বিভিন্ন ধরনের পানীয় এবং নিচতলায় বাক্স ও পলিথিন তৈরির কারখানা ছিল। পঞ্চমতলার একপাশে সেমাই, সেমাই ভাজার তেল, পলিথিন; অপর পাশে কারখানার গুদাম ছিল। কারখানার ষষ্ঠতলায় ছিল কার্টনের গুদাম।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন বলেন, কারখানাটির ভেতরে বিভিন্ন রাসায়নিকসহ দাহ্যপদার্থ মজুত থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে। ভবনটিতে ফাটল ধরায় আরও সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। মো. আবদুল জলিল ও মো. আবু সামাদ নামের দুজন শ্রমিক জানিয়েছেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটিতে ১০০০-১২০০ শ্রমিক কাজ করতেন।

ছিল না অগ্নি নিরাপত্তার : ওই ভবনটিতে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম যেমন ছিল না, তেমনি জরুরি বের হওয়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যক পথও রাখা হয়নি বলে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। গতকাল শুক্রবার বিকালে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক অপারেশন্স লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, ভবনটির আয়তন প্রায় ৩৫ হাজার বর্গফুট। ওই ভবনের জন্য অন্তত চার থেকে পাঁচটি সিঁড়ি থাকা দরকার ছিল। অথচ বড় এই ভবনে আমরা পেলাম মাত্র দুটি এক্সিট। এর মধ্যে প্রথম এক্সিট ছিল আগুনের মধ্যে।

শুরুতেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেখানে কেউ যেতে পারেনি। দ্বিতীয় সিঁড়ির কাছেও তাপ ও ধোঁয়ার কারণে ভেতরে আটকে থাকারা যেতে পারেননি বলে তাদের ধারণার কথা জানান তিনি। যে কারণে সেই পথেও শ্রমিকরা বের হতে পারেননি, যোগ করেন এই কর্মকর্তা। ভবনটিতে ফায়ার সেফটি ইকুইপমেন্ট কী কী দেখেছেন এবং তা পর্যাপ্ত ছিল কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দেখতে পাইনি। সেরকম কোনো বিষয় চোখে পড়েনি।

যখন ফাইনালি তদন্ত করব, তখন চেক করব বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড- বিএনবিসি অনুযায়ী ভবনটিতে অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছিল কিনা কিংবা আগুন লাগলে ভবনের আয়তন অনুযায়ী এক্সিট ছিল কিনা, যা দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মীরা নিরাপদে বের হতে পারেন। নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়ে আরেক প্রশ্নে ফায়ার সার্ভসের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, অবশ্যই। ৪৯ জন মারা গেছেন। এটা কম সংখ্যা নয়। সঠিকভাবে চলে আসার জন্য পথ পেলে এমনটি হত না। বেশিরভাগ মৃতদেহ চার তলায় পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, পাঁচ তলায় কাউকে সনাক্ত করিনি এবং ছয় তলায় কাউকে পাওয়া যায়নি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris