আর কে রতন : কৃষিতে এক সময় বিভিন্ন ফসল রোপনের জন্য গরুর দিয়ে চাষাবাদ করে জমি প্রস্তুত করতেন কৃষকরা। কিন্তু আর সেদিন নেই। সকল ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছৌয়া লেগেছে। ফলে কৃষিতেও বেড়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার। ফলে প্রচীনকাল হতে গরু দিয়ে জমিতে হাল চাষ হারিয়ে যেতে বসেছে।
রাজশাহী অঞ্চল কৃষি প্রধান এলাকা। এ জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলার শতকরা আশি ভাগ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলের কৃষকরা চৈত্র-বৈশাখে আউশ ধান, আষাঢ়-শ্রাবণে আমন ধান, পৌষ-মাঘে বোরো-আউশ ধান বপনের সময় এলেই প্রতিদিন ভোর বেলায় বেরিয়ে পড়তেন মাঠে লাঙ্গল জোয়াল, গরু নিয়ে জমি চাষের জন্য। এক সময়ে গ্রামাঞ্চলের লোকজনের কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙ্গতো।
জমি চাষের জন্য লাঙ্গল জোয়াল আর গরু নিয়ে মাঠে যাওয়ার জন্য। কাঠমিস্ত্রির বাড়িতে ভিড় জমে থাকতো লাঙ্গল, জোয়াল,আর মই মেরামত করার জন্য। মেরামত না করতে পারলে ওইদিন আর হালচাষ করা সম্ভব হতো না। সেই কাঠমিস্ত্রিদের সংসার চলতো কৃষকের লাঙ্গল-জোয়াল আর মই তৈরী ও মেরামত করে। কিন্তু আধুনিতার ছোঁয়ায় কাঠমিস্ত্রির বাড়িতে এখন আর কেউ লাঙ্গল-জোয়াল-মই নিয়ে যায় না।
ফলে বাঁচার তাগিদে পেশাও পরিবর্তন করেছে তারা। বর্তমান বাংলাদেশ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে এগিয়ে। তাই গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থের ঘুম ভাঙ্গে ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলারের শব্দে। তখনকার সময়ে জমিতে বীজ বপন অথবা চারা রোপণের জন্য জমি চাষের জন্য গরুর হাল ব্যবহার করতো কৃষকরা। পরে বড় বড় মাটির টুকরো গুড়িয়ে সমান করার জন্য মই ব্যবহার করা হতো।
যা কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত অন্যতম পুরনো যন্ত্র। তখন জমি চাষের জন্য প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়ীতে একাধিক গরু-মহিষ লালন-পালন করা হতো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পুরোনো হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙ্গল, জোয়াল, মই, গরু-মহিষ। আর হালচাষের সময় কৃষকের মুখে ভাটিয়ালী-পল্লীগীতি গানের সুর।
গোদাগাড়ি উপজেলার খোড়িয়াকান্দি গ্রামের কৃষক কাওছার আলী জানান, ১০-১২ বছর আগে আমাদের এলাকায় বা পার্শ্ববর্তী উপজেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছিল গরুর হালের যোগাড়-যন্ত্র আর গরু-মহিষ। তখন গরু-মহিষগুলোকে নিজেদের পরিবারের সদস্যের মতো লালন-পালন করা হতো। তাদের দিয়ে একরের পর একর জমি চাষ করার কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সারা গ্রামেও হালচাষের গরু মিলবে না।
রাজশাহী জেলা কৃষকলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম বাবু বলেন, কৃষিতে বর্তমান সরকার আধুনিক যন্ত্রের বিপ্লব ঘটিয়েছে। এতে কৃষকের সুবিধার জন্য এখন প্রত্যক এলাকায় কৃষক পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, ফসল কাটার যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরন দিয়ে কম সময়ে কাজ করছে। তাই গরু আর লাঙ্গল দিয়ে হাল-চাষ করার কোন প্রয়োজন পড়ে না। এক্ষত্রে পুরোনো গ্রামীণ ঐতিহ্য গরু-আর লাঙ্গলের হাল চাষ কালের বিবর্তনে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।