এফএনএস : মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় দুই লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের ৬.২ শতাংশ। বাজেটে ঘাটতি পূরণে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বাজেট অধিবেশনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা শেষে আগামী ৩০ জুন এটি পাস হবে।
এদিকে গ্রাহকরা সঞ্চয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন সঞ্চয়পত্রকে। করোনার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি আরও বেড়েছে। ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সুদ পাওয়ায়ও সঞ্চয়পত্রের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে সরকার বরাবরই দুই উৎস বেছে নেয়। এর মধ্যে বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ উৎস। আগামী বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎসের নির্ভরতা কিছুটা কমিয়ে বৈদেশিক উৎসের প্রতি নির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে।
আসছে বছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নেবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। আর জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা। বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ পাওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে, সেটাও এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।
২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় তা সংশোধন করে ৩০ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে সেটিকে আরও বাড়িয়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার। আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে।
সেই হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হলে সরকারের ঋণও এই খাত থেকে বাড়ে। কারণ বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর প্রতি মাসে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি বলা হয়। অর্থনীতির পরিভাষায় নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রিকে সরকারের ঋণ হিসেবে ধরা হয়।