এফএনএস : করোনা মহামারীকালে কেনাকাটায় দেশে ব্যাপকভাবে ডেবিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে। করোনার আগে কার্ডে যে পরিমাণ লেনদেন হতো, এখন তার চেয়ে দেড়গুণ বেশি লেনদেন হচ্ছে। করোনা আসার আগে ২০২০ সালের মার্চে ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ডে মাসে ১৪ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতো। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ডেবিট কার্ডে লেনদেন ২২ হাজার কোটি টাকারও কিছু বেশি। আর ক্রেডিট কার্ডে পৌনে ২ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনাকালে লেনদেনে কার্ডের ব্যবহার বাড়লেও সংখ্যার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ কম। করোনায় ক্রেডিট কার্ডের ৮ শতাংশের মতো বাড়লেও তা এখনো ২০ লাখের নিচে রয়েছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে বেড়েছে ডেবিট কার্ড ব্যবহার। করোনাকালে শতকরা হিসেবে ১৫ শতাংশের বেশি বা ৩১ লাখ কার্ড বেড়েছে। এখন কার্ডে যে লেনদেন হচ্ছে, তার প্রায় পুরোটাই দেশে হচ্ছে। করোনা আসার আগে কার্ডের ব্যয়ের একটি বড় অংশ দেশের বাইরে হতো। তবে করোনায় বিদেশে ভ্রমণ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনও বেশ কমে গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী ২০২০ সালে করোনা শনাক্তের মাস মার্চে ব্যাংকের ডেবিট কার্ডের গ্রাহক ছিল ১ কোটি ৯৩ লাখ ১২৭ জন। আর চলতি মার্চ শেষে তা বেড়ে ২ কোটি ২৪ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। করোনার এক বছরে ডেবিট কার্ডের গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ৩১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ জন। তাছাড়া ডেবিট কার্ডের লেনদেন যে হারে বেড়েছে ওই হারে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন বাড়েনি। ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ছিল ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ১২৯ জন। যা চলতি মার্চে বেড়ে ১৭ লাখ ৩৭ হাজার ১৩৪ জন হয়েছে। ফলে এক বছরে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বেড়েছে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার ৫ জন।
সূত্র আরো জানায়, আগে অনেক গ্রাহকই কার্ড নিতে চাইতো না। এখন অনেকেই কার্ডে ঝুঁকছে। করোনার সময়ে ব্যাংকগুলো প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের উৎসাহিত করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারী খাতের সব ব্যাংকই এখন প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ওসব সেবায় যোগ হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, অনলাইন সিআইবি রিপোর্ট, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, প্রি-পেইড কার্ড, ভিসা কার্ড এবং বিভিন্ন প্রযুক্তির এটিএম।
ওসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন ও জমা, রেমিট্যান্স বিতরণ, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও বেতন-ভাতা প্রদান সবই সম্ভব। তাছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই গ্রাহকদের অনলাইন ব্যাংকিংয়ে উৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে আগের চেয়ে ডিজিটাল লেনদেনে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। করোনার সময়ে ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহকদের নতুন নতুন সেবা দেয়া হয়েছে। যাতে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ে। অনলাইন সেবাও বেড়েছে। ফলে এখন মানুষ ঘরে বসেই সব ধরনের সুবিধা নিতে পারছে। সব মিলিয়ে করোনায় ডিজিটাল লেনদেনে গতি বেড়েছে। যার সার্বিক প্রভাব কার্ডের ব্যবহার ও লেনদেনে পড়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে দেশীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে কার্ড সেবায় শীর্ষে বেসরকারী খাতের দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন জানান, করোনার ভয়ে এখনো অনেকে ব্যাংক শাখায় গিয়ে সেবা নিতে চাইছে না। ফলে বিকল্প সেবার মাধ্যমে ব্যবহার বাড়ছে। সেজন্যই আগের চেয়ে কার্ডের ব্যবহার বাড়ছে। তাছাড়া বিদেশে যাওয়া বন্ধ, আবার বিদেশীরাও আসছে কম। সেজন্য কার্ডে বিদেশী মুদ্রার লেনদেন কমেছে। তবে বিমান যোগাযোগ পুরোদমে চালু হলে বিদেশী লেনদেন স্বাভাবিক হবে।