শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

সঞ্চালন লাইনের অগ্রগতির অভাবে বসে থাকবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র!

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১ জুন, ২০২১

এফএনএস : বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগোলেও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ নির্ধারিত গতিতে এগুলেও সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পে তেমন অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, জরিপ ও কিছু নকশা তৈরি ছাড়া সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালে নির্ধারিত সময়েই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করতে পারবে।

কিন্তু সঞ্চালন লাইন সময় মতো নির্মাণ না হলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাবে না। সেক্ষেত্রে বৃহৎ ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে অলস বসিয়ে রাখতে হবে। তার বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে গুনতে হবে। তাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পটির সঞ্চালন ব্যবস্থাতে ব্যয় হবে প্রায় ১০ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। এর বড় অংশই অর্থায়ন করছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে গ্রিডলাইনের নির্মাণ কাজ শেষ না হলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন দেরি হতে পারে। আগামী ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ফুয়েল লোড করা হবে।

সেজন্য তার আগেই ২০২২ মধ্যে গ্রিড লাইনের কাজ শেষ করা জরুরি। তা নাহলে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো রূপপুরকেও সঞ্চালন লাইনের জন্য বসিয়ে রাখতে হবে। যা প্রকল্পের জন্য বড় ধাক্কা। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ রাশিয়ানরা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে ২০২৩ সালের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।

সূত্র জানায়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ তত্ত্বাবধান করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়া সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজে তেমন অগ্রগতি হয়নি। চারটি মূল প্যাকেজের অধীনে সঞ্চালন লাইনটি নির্মাণের কথা। গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

করোনার কারণে চলতি অর্থবছরেও প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ অনেকটাই স্থবিরতার মধ্যে রয়েছে। এমন অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হবে বলে পিজিসিবিও মনে করছে না। সেজন্য প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে (আইএমইডি) পিজিসিবি প্রস্তাব জমা দিয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, সঞ্চালন লাইন নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর বড় একটি অংশ ভারতীয় ঋণে নির্মিত হচ্ছে। সরকারি মালিকানাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে ভারতের ‘লাইন অব ক্রেডিট’ (এলওসি) চুক্তির সহায়তায়। ১০ হাজার ৯৮ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের ৮ হাজার ২১ কোটি টাকা দিচ্ছে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। বাকিটা সরকার ও পিজিসিবির নিজস্ব অর্থায়নে সংস্থান হচ্ছে।

কিন্তু শুরুতেই প্রকল্পের ধীরগতি, ঋণের অর্থছাড় ও সর্বশেষ করোনা মহামারীসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি কম। সঞ্চালন নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে শুরুতেই প্রায় দুই বছর কালক্ষেপণ হয়েছে। তাছাড়া দরপত্রে বিলম্ব, পরামর্শক নিয়োগ ও এককভাবে কাজগুলো ভারতীয় বিনিয়োগকারী সংস্থা তত্ত্বাবধান করতে যাওয়ার কারণেও বিষয়টিতে বেশ বিলম্ব হয়েছে।

২০১৮ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সঞ্চালন লাইন নির্মাণে গৃহীত প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। একনেকে অনুমোদনের এক বছর পর ২০১৯ সালের ২৬ মে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ নিয়ে চুক্তি সই হয়। কিন্তু একনেকে অনুমোদনের পর ঠিকাদার ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতেই অনেক সময়ক্ষেপণ হয়ে গেছে।

ওই সময়ের মধ্যে কার্যক্রমের অগ্রগতি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর মধ্যে শুধু চিঠি চালাচালিতে আটকে ছিল। তাছাড়া ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের ঋণ হওয়ায় প্রকল্পে বেশকিছু শর্ত রয়েছে। বিশেষত লোকবল নিয়োগ, মালামাল ক্রয়, পরামর্শক নিয়োগসহ আরো বেশকিছু কাজ তাদের তত্ত্বাবধানে হবে। শর্তে ৭৫ শতাংশ মালামাল ভারত থেকে আমদানি করার কথা বলা হয়েছে। বাকি ২৫ শতাংশ স্থানীয়ভাবে এবং অন্যান্য দেশ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। ফলে ওই প্রকল্পে শর্ত পূরণ করাটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ৪৬৪ কিলোমিটারের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্পটি সহজে ও দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ৪টি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়। সেগুলো হলো ১০২ কিলোমিটার রূপপুর-বগুড়া লাইন, ১৪৪ কিলোমিটার রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইন, ১৪৭ কিলোমিটার রূপপুর-ঢাকা লাইন ও ৫১ কিলোমিটার আমিনবাজার-কালিয়াকৈর লাইন। তার মধ্যে ১৩ কিলোমিটার নদী পারাপার। ওই নদী পারাপার লাইনের মধ্যে ৬ কিলোমিটার পদ্মা নদীতে ও ৭ কিলোমিটার যমুনা নদীতে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধু সঞ্চালন লাইন নির্মাণে চারটি অংশের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া যে অঞ্চল দিয়ে লাইন নির্মাণ করা হবে সেটির রুট সার্ভে ও টাওয়ারের ডিজাইন শেষ হয়েছে। তাছাড়া সঞ্চালন লাইনের নদী পারাপার অংশের দরপত্র আহ্বান কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই দরপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে ৮ জুন।

তার আগে বেশ কয়েক দফায় দরপত্র আহ্বান করা হলেও করোনার অৎুহাতে ভারতীয় ঠিকাদাররা তাতে অংশ নেয়নি। আবার অর্থায়ন চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ওই কাজ পাবে কোনো ভারতীয় ঠিকাদার। ওই শর্ত পরিপালন করতে গিয়ে পিজিসিবিকে কয়েক দফায় সময় বাড়াতে হয়েছে। এবারো ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি আসতে না পারলে আবারো সময় বাড়াতে হতে পারে।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সময়মতো সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। পরিকল্পনার সময় সবসময় উৎপাদনকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বিদ্যুতের ভ্যালু চেইন বিবেচনা করলে উৎপাদন-সঞ্চালন-বিতরণ কোনোটির গুরুত্বই কম নয়। কিন্তু পরিকল্পনাবিদরা সবসময় সঞ্চালনকে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার দেন।

ফলে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রস্তুত হওয়ার পরও বসে থাকছে। সেক্ষেত্রে রূপপুরের একই অবস্থা হতে যাচ্ছে। এতো বড় একটি স্থাপনা প্রস্তুত হওয়ার পর যদি বসে থাকে তাহলে তার ক্ষতির অংকটাে অনেক বেশি। বিপুল অংকের ওই বিনিয়োগে যদি রাজস্ব না আসে তাহলে মূল উদ্দেশ্যই বিফলে যাবে। রূপপুরের জন্য এ বছরও ১৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ওই অর্থের যথাযথ ব্যবহার না হলে রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হবে।

প্রকল্পের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে সঞ্চালন লাইন নির্মাণে উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত কিউ এম শফিকুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি সঞ্চালন লাইন নির্মাণে গতি এসেছে। প্রকল্প এলাকায় কাজ শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে টাওয়ার নির্মাণে ডিজাইন, রুট সার্ভে, অবকাঠামো নির্মাণসহ নানা কাজ শেষ হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মাঠে টাওয়ার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে।

আর সার্বিক বিষয়ে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম কিবরিয়া জানান, রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিতে যে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে তা একটি বড় প্রকল্প। ওই প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন, দরপত্র আহ্বান, ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম করতে একটু বিলম্ব হয়েছে।

বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। তবে এখন প্রকল্পে গতি পেয়েছে। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজের অগ্রগতি সমন্বয় করে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার আগে বেশকিছু লাইনের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে পুরো লাইন শেষ হতে কিছুটা সময় বেশি লাগবে।

এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আশা করা যায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হবে। তবে গ্রিডলাইন সময়মতো হবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধা রয়েছে। এ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। যদি ২০২২ সালের মধ্যে কোনো কারণে গ্রিডলাইন নির্মাণ কাজ শেষ না হয়, তবে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে না। যা হবে খুবই দুঃখজনক।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris