শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

টিকার পর কোভিড প্রতিরোধী সক্ষমতা কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে : গবেষণা

Paris
Update : শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১

এফএনএস : করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার পর অন্তত এক বছর দেহে এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা বজায় থাকে, সম্ভবত তা আমৃত্যুও হতে পারে, নতুন দুটি গবেষণার ফলাফল এমন তথ্যই জানাচ্ছে। দুটি গবেষণাতেই দেখা গেছে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পরে এক ডোজ টিকা নিয়েছেন এমন বেশিরভাগ মানুষেরই বুস্টার ডোজ নেওয়ার দরকার হবে না। টিকাগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হননি তাদের ক্ষেত্রে হয়তো দ্বিতীয় ডোজ নিতে হতে পারে। গবেষণার ফল থেকে এটাও দেখা গেছে যে, একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী আবারও সংক্রমিত হতে পারেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরেও যাদের দেহে প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি।

উভয় গবেষণা প্রতিবেদনেই ওইসব মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে যারা এক বছর আগে করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন। এই ভাইরাসকে চিনে নেওয়া কোষগুলো অস্থিমজ্জায় থাকে এবং যখন দরকার তখন অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করতে পারে- সোমবার বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ন্যাচার এ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য মিলেছে। অন্য গবেষণাটিতে দেখা গেছে, দেহে প্রাথমিক সংক্রমণের পর ‘মেমোরি বি’ নামের কোষগুলো করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অন্তত ১২ মাস পর্যন্ত পরিপক্ক ও শক্তিশালী হতে থাকে।

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভ্যানিয়ার ইমিউনোলজিস্ট স্কট হেনসলে বলেন, “সার্স-কোভ-২ এর সংক্রমণে অথবা টিকা নেওয়ার কারণে এর বিরুদ্ধে দেহে যে প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে ওঠে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়- সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোর এমন ফলাফলের সঙ্গে এই গবেষণাগুলোর ফলাফলও সঙ্গতিপূর্ণ।” এই দুটি গবেষণাই সম্ভবত করানাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে ওঠা নিয়ে যে ভীতি তা দূর করতে সহায়ক হবে। একটি আশঙ্কা রয়েছে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবদেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা সাময়িক হতে পারে, যেমনটি হয়ে থাকে সাধারণ সর্দি-জ¦রের ভাইরাসের ক্ষেত্রে। তবে ওইসব ভাইরাস কয়েক বছরের ব্যবধানে উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়মিত বদলাতে থাকে, জানান হেনসলে।

তিনি বলেন, “আমরা বারবার সাধারণ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হই কারণ প্রতিরোধ সক্ষমতা নয় বরং আমাদের জীবনকালজুড়ে এসব ভাইরাস বিবর্তিত হতে থাকে।” মানবদেহে কোষের স্মৃতির পরিপক্কতার ওপর পরিচালিত গবেষণা দলের প্রধান রকফেলার ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের ইমিউনোলজিস্ট মাইকেল নুজেনসাইগ জানান, সার্স-কোভ-২ এর সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় দেহে যে ‘মেমরি বি’ কোষ সৃষ্টি হয় এবং টিকার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয় সেগুলো এমনকি ওই ভাইরাসের অন্যান্য ধরনের বিরুদ্ধেও সক্রিয় থাকে এবং দেহে বুস্টার ডোজের চাহিদাও থাকে না।

তিনি বলেন, “যেসব মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন অথবা এর টিকা গ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতিক্রিয়া খুবই ভালো, খুবই চমৎকার অ্যান্টিবডি সেট দেহে গড়ে উঠেছে, কারণ তাদের অ্যান্টিবডিরও বিবর্তন হচ্ছে। আমি আশা করছি যে এগুলো দীর্ঘ সময় থাকবে।” শুধু টিকা নেওয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ সক্ষমতা তৈরি হয়েছে যাদের দেহে, তাদের ক্ষেত্রে হয়তো ফলাফল একই হবে না কারণ প্রতিরোধকারী স্মৃতিটি স্বাভাবিক সংক্রমণের তুলনায় টিকাগ্রহণের পর আলাদাভাবে সংগঠিত হয়। অর্থাৎ যারা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হননি এবং টিকা গ্রহণ করেছেন, তাদের সম্ভবত আরেকটি বুস্টার ডোজ নিতে হতে পারে বলে জানান এই গবেষক। তিনি বলেন, “এই বিষয়টি আমরা খুব দ্রুতই জেনে যাব।”

প্রথমবার করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পর, বি কোষগুলো দ্রুত বিকশিত হয় এবং বড় আকারে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। একবার সংক্রমণ প্রশমিত করে ফেলার পর, স্বল্প সংখ্যক কোষ অস্থি মজ্জায় অবস্থান নেয়, ধারাবাহিকভাবে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে চলে। সুনির্দিষ্টভাবে নতুন করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট মেমরি বি কোষ নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন সেই দলের প্রধান সেইন্ট লুইজের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির আলি এলেবেদি ৭৭ জন করোনাভাইরাস সংক্রমিতের রক্ত পরীক্ষা করেন তিন মাসের অন্তবর্তী বিরতি দিয়ে। তিনি রক্তের প্রথম নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন রোগীরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার এক মাস পর।

ওই ৭৭ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো, বাকিদের দেহে সামান্য উপসর্গ দেখা গেছে। সংক্রমিত হওয়ার চার মাস পর ওই ৭৭ জনের দেহে অ্যান্টিবডির মাত্রা দ্রুত কমে যায় এবং পরের মাসগুলোতে তা ধীরে ধীরে নামতে থাকে- এই ফলাফল অন্য গবেষণাটির ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কিছু বিজ্ঞানী অ্যান্টিবডির এই হ্রাসকে প্রতিরোধ সক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তবে এটাই স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশিত বলে মত দিয়েছেন অন্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যদি সংক্রমিত হওয়ার পরপর প্রতিটি প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে রক্তে নিঃসরিত উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবডি বজায় থাকতো, তাহলে এটা দ্রুত একটি ঘন তরলে রূপান্তরিত হতো।

বরং, সংক্রমনের ঝুঁকি কমিয়ে দেওয়ার পর রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়, একই সময়ে মেমরি বি কোষ অস্থি মজ্জায় সুপ্ত অবস্থায় অবস্থান করতে থাকে, যখন দরকার তখন ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। এলেবেদির দল ১৯ জনের অস্থি মজ্জা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তাদের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সাত মাস পরে। এদের ১৫ জনের দেহে সনাক্তযোগ্য ‘মেমরি বি’ কোষ পাওয়া গেলেও চার জনের দেহে তা পাওয়া যায়নি। এর থেকে তারা ধারণা করছেন, কিছু মানুষের দেহে খুবই স্বল্পমাত্রায় এই কোষ থাকে অথবা কারো কারো দেহে থাকেই না। এলেবেদি বলেন, “এটা থেকে আমি বলতে পারি যে আপনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলেও, আপনি যে এর বিরুদ্ধে দারুন প্রতিরোধ সক্ষমতা অর্জন করবেন তা হয়তো হবে না।” গবেষণার ফলাফল এই ধারণাটিকেই মজবুত করেছে যে যারা কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছেন তাদেরও টিকা নেওয়া উচিত- বলেন তিনি।

নুসেনজাইগের দল তাদের গবেষণায় দেখেছেন কীভাবে ‘মেমরি বি’ কোষ সময়ে সাথে সাথে পরিপক্ক হয়। গবেষকরা ৬৩ জনের রক্ত বিশ্লেষণ করেন যারা এক বছর আগে কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছেন। অংশগ্রহণকারীদের বড় অংশের দেহেই সামান্য উপসর্গ দেখা গিয়েছিলো, এবং ২৬ জন মডার্না বা ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা নিয়েছেন। গবেষক দলটি দেখেছে, ওই ৬৩ জনের দেহে আবারও সংক্রমিত হওয়া থেকে সুরক্ষাদানকারী সক্রিয় অ্যান্টিবডি ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে অপরিবর্তিত ছিলো, এ ছাড়া ওই অ্যান্টিবডি সংশ্লিষ্ট বা কম গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবডিগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়েছে।

‘মেমরি বি’ কোষ বিবর্তিত হতে থাকায়, তারা যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে সেগুলো এমনকী আরও বিস্তৃত পরিসরের করোনাভাইরাসের ধরনের মোকাবেলা করতে সক্ষম। এই ধারাবাহিক পরিপক্কতা অর্জিত হয় সম্ভবত দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার হাতে আটক থাকা ছোট আকারের ভাইরাসের ওপর টার্গেট প্র্যাকটিসের মাধ্যমে। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার এক বছর পরে অংশগ্রহণকারীদের দেহে, যারা টিকা নেননি, ভাইরাসটির অন্যান্য ধরনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কার্যক্রম কমে আসে, বেশি দুর্বলতা দেখা গেছে সাউদ আফ্রিকায় সনাক্ত হওয়া ধরনটির বিরুদ্ধে।

অন্যান্য গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গেছে টিকা গ্রহণ অ্যান্টিবডির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়; দেহের প্রতিরোধ সক্ষমতাকে প্রায় ৫০ গুণ বর্ধিত করে। বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত যে যারা কখনোই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হননি তারা কোভিড আক্রান্তদের মতো প্রতিরোধ সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন না। কারণ, একটি জীবন্ত ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আর একটি একক ভাইরাল প্রোটিনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার অভিজ্ঞতা এক না। এবং যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির পরিপক্কতা অর্জনে ছয় থেকে ১২ মাস সময় লাগবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris