শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

করোনা প্রাদুর্ভাবে চিকিৎসায় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

Paris
Update : শনিবার, ১ মে, ২০২১

এফএনএস : সরকার করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে চিকিৎসা খাতে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে দেশের হাসপাতালে অক্সিজেনের দৈনিক চাহিদা ১২০ মেট্রিক টনের মতো। কিন্তু করোনা সংক্রমণে গত এক মাসে ওই চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ মেট্রিক টন। কিন্তু তার পুরোটা বাংলাদেশ উৎপাদন করতে পারে না। দেশে অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ ১৭০ মেট্রিক টন। আর নানা কারণে উৎপাদন ক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে না পারার কারণে সর্বোচ্চ ১৬০ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাকি ২০ মেট্রিক টন অক্সিজেন ভারত, চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হয়।

কিন্তু ইতিমধ্যে ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। আর আর চীন ও পাকিস্তান থেকে আমদানি সময়সাপেক্ষ। কারণ অক্সিজেন অন্যসব পণ্যের মতো চাইলেই আমদানি করা যায় না। তাছাড়া উৎপাদন করাও কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে করোনায় অক্সিজেনের আগাম সঙ্কট মোকাবেলায় বিকল্প দেশ থেকেও আমদানির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জরুরি প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারখানা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র হাসপাতালগুলোর জন্য অক্সিজেন উৎপাদনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে অক্সিজেনের মূল জোগানদাতা লিন্ডে ও এক্সপেকট্রা নামের দুটি কোম্পানি। ইতিমধ্যে লিন্ডে গড়ে ৮০ টন এবং এক্সপেকট্রা ৩৮ টন অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই দুটিসহ অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সভা করে। সভায় বলা হয়, লিন্ডে নারায়ণগঞ্জে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ৭০ টন এবং চট্টগ্রামের কেন্দ্রে ২০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করে। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির নারায়ণগঞ্জ উৎপাদন কেন্দ্রের কম্প্রেশারের মোটর পুড়ে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর চট্টগ্রামের কেন্দ্রটি ৩ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। সেখানে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ টন অক্সিজেন উৎপাদন করা হতো।

কারিগরি ত্রুটির কারণে সেটিতে মাঝেমধ্যে উৎপাদন বন্ধ থাকে। তাছাড়া এক্সপেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড প্রতিদিন ২০ টন উৎপাদন করে এবং ১৮ টন ভারত থেকে আমদানি করে। আমদানি বাদ দিলে ওই দুটি প্রতিষ্ঠান ১১০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে। তারপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আরো তিনটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে সীতাকুণ্ডে আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লিমিটেডের প্রতিদিন অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা ২৫০ টন হলেও চিকিৎসায় ব্যবহার উপযোগী অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা ১৫ টন।

তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসায় ব্যবহার উপযোগী অক্সিজেন বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্তও নয়। দ্বিতীয়টি নারায়ণগঞ্জের ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড। তাদের প্রতিদিন উৎপাদন ক্ষমতা ৭০ টন। তার মধ্যে তরল অক্সিজেন ৪০ টন। আর নারায়ণগঞ্জের এ কে অক্সিজেন (প্রা.) লিমিটেডের প্রতিদিন উৎপাদন ক্ষমতা ২০ টন। পরের দুটি আগে থেকেই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনপ্রাপ্ত। আর আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং লিমিটেডকে জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় সাময়িক অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এদিকে সঙ্কট নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সারা দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরে অক্সিজেন উৎপাদনে কারখানা স্থাপন করতে চাচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে তা হয়তো চলতি বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ মনে করেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন অক্সিজেনের হাহাকারের মতো পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেদিকে নজর দেয়া উচিত। অক্সিজেনের চাহিদা নিশ্চিতে একটি পরিকল্পনা দরকার। তবে আগামী এক মাসে কী পরিমাণ অক্সিজেন লাগতে পারে, এর জোগান কীভাবে হবে, এটা নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু সংক্রমণ প্রতিরোধে আরো বেশি জোর দিতে হবে।

লকডাউন শিথিল করে বিধিনিষেধের মাধ্যমে সংক্রমণটাকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে হয়তো অক্সিজেনের তীব্র সঙ্কটে পড়তে হবে না। অন্যদিকে অক্সিজেন পরিস্থিতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ হোসেন মিয়া জানান, অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লিনডে বিডি ১১০ মেট্রিক টন এবং স্পেকট্রা ৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন করার সক্ষমতা আছে। তাছাড়া আরো কিছু ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন উৎপাদন করে। তারপরও প্রায় ২০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের ঘাটতি থেকে যায়। ফলে করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে ওই সঙ্কট আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অক্সিজেনের বাড়তি চাহিদা পূরণে মূলত ভারত, চীন, পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়। ভারতে হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তারা অক্সিজেন দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। দেশের অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আশাবাদী কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তারা বলছে, এখন যে পরিস্থিতি তাতেই চাহিদা পূরণ করা কঠিন। ভবিষ্যতে চাহিদা বাড়লে তা পূরণে আরও সমস্যায় পড়তে হবে। অক্সিজেনের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো সহজ নয়। এটি সময়সাপেক্ষ আবার বিপুল অর্থেরও বিষয় আছে। তবে সরকার যদি আর্থিক ও অন্য সুযোগ সুবিধা দেয় তাহলে তারাও অক্সিজেন আমদানি করে দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে সরকার টু সরকার কথা বলতে হবে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, কয়েকদিন ধরে রোগী কমে আসছে। ধারাবাহিকভাবে রোগী কমে এলে ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখলেও সংকট হবে না। কিন্তু রোগী বাড়লে তা সামাল দেয়া কঠিন হবে। তবে সরকার বিকল্প পদ্ধতিতে অক্সিজেন উৎপাদনের চেষ্টা করছে। প্রয়োজন হলে শিল্পে সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে হাসপাতালে সরবরাহ করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাতে সরকার তাদের সহায়তা করছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris