বৃহস্পতিবার

১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে রাসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে : মেয়র টকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু হলেও জাতের আম পাড়া হবে ২৫ মে থেকে রাজশাহীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে মিজু গ্যাংয়ের ১১ সদস্য গ্রেফতার বাঘায় দোকান কর্মচারিকে কুপিয়ে হত্যার দুই আসামীর মৃত্যুদণ্ড শিল্পা শেঠির বিরুদ্ধে পশু নিগ্রহের অভিযোগ উৎকণ্ঠার অবসান, স্বজনের বুকে ২৩ নাবিক কলেজে ভর্তি অনলাইনে আবেদন শুরু ২৬ মে, ফাঁকা থাকবে ৮ লাখের বেশি আসন সারাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১২৬০০ ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ রাজশাহীতে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ

লোকসানের বৃত্তেই আটকে আছে টেলিটক

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরুতে পারছে না। বিগত বিএনপি জোট সরকারের সময়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করলেও শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটি যন্ত্রাংশ কেনা নিয়ে বিতর্কে জড়ায়। আর গত ১৬ বছর মধ্যে মাঝের দুই বছর বাদে ওই দীর্ঘ সময়ের পুরোটাই প্রতিষ্ঠানটি লোকসান গুনছে। এখনো টেলিটকের ব্যবসার মূল ভিত্তি রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা। সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের উন্নতমানের পণ্য ও টেলিকম সেবা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিল। সরকারি নানা সুবিধা নিয়ে দেশের অন্যতম সেরা সেলফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রমাণের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও টেলিটক তা পারেনি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টেলিটক প্রতিষ্ঠার সময় বলা হয়েছিল সরকারি সব কাজে অপারেটরটির সংযোগ ব্যবহার হবে। যদিও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাধ্য না করায় সরকারি দপ্তরগুলোতে টেলিটকের সংযোগ ব্যবহারে আগ্রহ। এমনকি আইনপ্রণেতাদের অনেকেরই প্রতিষ্ঠানটির সেবা গ্রহণে অনীহা রয়েছে। টেলিটক ছাড়া অন্য তিন অপারেটরের মধ্যে সবচেয়ে কম সংযোগ যেটির, তারও সংযোগ সংখ্যা সাড়ে ৩ কোটির বেশি। অথচ দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটরটির সংযোগ এখনো অর্ধকোটিও ছাড়ায়নি। ডিসেম্বর শেষে টেলিটকের সংযোগ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৯ লাখ ২৭ হাজার।

সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১৬ বছরে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটক এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। আর গত চার বছরেই টেলিটক লোকসান করেছে ৯৯৩ কোটি টাকা। টেলিটক প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরুর পর থেকে শুধুমাত্র দুই অর্থবছরেই প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখেছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১ কোটি ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪৬ কোটি টাকা মুনাফা করে টেলিটক। তার বাইরে ২০০৫-০৬ অর্থবছর ৫৬ কোটি টাকা, ২০০৬-০৭ অর্থবছর ৬১ কোটি, ২০০৭-০৮ অর্থবছর ১৬২ কোটি, ২০০৮-০৯ অর্থবছর ১১০ কোটি, ২০০৯-১০ অর্থবছর ২৯ কোটি, ২০১১-১২ অর্থবছর ১৭ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থবছর ২০ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছর ২০২ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৪১ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছর লোকসান ২৫৭ কোটি, ২০১৭-১৮ অর্থবছর ২৭৭ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থবছর ১৯০ কোটি ও ২০১৯-২০ অর্থবছর টেলিটক ২৬৯ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে।

তাছাড়া লোকসানের বাইরে প্রতিষ্ঠানটির কাছে সরকারের বড় অংকের পাওনা রয়েছে। টেলিটকের কাছে থ্রিজি তরঙ্গ বরাদ্দ বাবদ সরকারের পাওনা ১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। বকেয়া আদায়ে একাধিকবার তাগাদা দিলেও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) তা আদায় করতে পারেনি। পরে থ্রিজি তরঙ্গ বরাদ্দের ফি বাবদ বকেয়া অর্থ ইকুইটিতে রূপান্তরের প্রস্তা দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তবে ওই প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয় এখনো সাড়া দেয়নি। টেলিটকের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ২০১০-১১ সাল পর্যন্ত সময়ের ওপর বিশেষ নিরীক্ষা করে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল। অডিট অধিদপ্তরের ওই প্রতিবেদনে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আপত্তি তোলা হয়।

ওসব আপত্তির মধ্যে ছিল প্রি-পেইড সিমকে পোস্টপেইডে রূপান্তর করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়া, বাজারদরের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে সিমকার্ড কেনা, ভিওআইপির অবৈধ কার্যক্রমে ফ্রি আইএসডি কল করতে দেয়াসহ কোম্পানির ক্ষতির কয়েক ডজন কারণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তার বাইরে বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানটির কমপ্লায়েন্স অডিট প্রতিবেদনেও বড় ধরনের অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে টেলিটক যাত্রা শুরু করে। ওই সময় অনুমোদিত মূলধন ধরা হয় ২ হাজার কোটি টাকা। ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর ১৫ বছরের জন্য লাইসেন্স পায় টেলিটক। ২০০৮ সালের ২১ মে ৬৪৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৩৯টি সাধারণ শেয়ার ১ হাজার টাকা হারে নির্ধারণ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নামে ইস্যু করা হয়।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে তা পুরোপুরিই নষ্ট হয়েছে। নিম্ন আয়ের দেশ ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশে এমন লোকসানি টেলিকম প্রতিষ্ঠান আর নেই। সরকারি চাকরি ও পাবলিক পরীক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে অনেকেই বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানটির সেবা নিচ্ছে। কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এভাবে টেলিকম প্রতিষ্ঠান টেকসই হয় না। তাছাড়া টেলিটক একটি রাজস্ব খাতভুক্ত সরকারি কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও প্রেষণের বদলে লিয়েন দেখিয়ে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে উচ্চহারে কোম্পানির পে-স্কেলে বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়। আবার টেলিটকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দুর্বলতা রয়েছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো কোম্পানিটির বিপুল পরিমাণ পুঞ্জীভূত সম্পদের বাস্তব যাচাই করা হয়নি। রেভিনিউ অ্যাসুরেন্সের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় যথেষ্ট জালিয়াতির সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ফাইন্যান্স ও অডিট বিভাগে উপযুক্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।

এদিকে টেলিটক নিয়ে বর্তমান সরকারের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সেবা তৃণমূলে পৌঁছে দিতে নানা উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। ওসব উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন হলে লোকসানের ধারা থেকে প্রতিষ্ঠানটি বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে টেলিটকের সংযোগ দেয়া আছে। দুটি সেট ব্যবহার করতে হয় বলে অনেকেই টেলিটকের সংযোগটি ব্যবহার করে না। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে টেলিটকের এমডি মো. সাহাব উদ্দিন জানান, টেলিযোগাযোগ খাতের পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে টেলিটকের প্রতিযোগিতা করতে হয়। আবার সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুধু লাভ করবে এ রকম ভাবনা থেকেও প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হয় না। বাজারে একটি স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতেই টেলিটকের সূচনা হয়। আর ওই জায়গাটির অনেকটাই অর্জন করতে পেরেছে টেলিটক। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলিটকের লোকসানের হিসাব খাতাকলমে যতোটা বেশি, বাস্তবে তার তুলনায় অনেক কম। টেলিটকের ‘ক্যাশ ফ্লো’ ইতিবাচক ধারাতেই রয়েছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো চাইলেই টেলিটক বিনিয়োগ করতে পারে না। তবে বর্তমান সরকার যেভাবে নীতিসহায়তাসহ অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে তাতে টেলিটক অচিরেই গ্রাহক প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যেই লাভের মুখ দেখবে টেলিটক। এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, শুরুতে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবেই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে। ওই অবস্থা থেকে টেলিটককে বের করে আনার জন্য ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো বিনিয়োগের সুযোগ না থাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করতে পারেনি টেলিটক। তাতে তাদের পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। তবে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris