এফএনএস : শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অভিনয়ের বাইরে একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। হাসপাতাল আর বাসাতেই কেটে গেছে দেড় বছরেরও বেশি সময়। সারাক্ষণ অভিনয় নিয়ে মেতে থাকা এই মানুষটি অভিনয় থেকে অনেক দূরে থাকলেও তার মন পড়ে রয়েছে অভিনয়ে। আবারও আগের মতো লাইট-ক্যামেরার জগতে চঞ্চলতার সঙ্গে কাজ করতে চান তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি ফের ছবি পরিচালনার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন এই অভিনেতা। বর্তমানে এটিএম শামসুজ্জান শারীরিকভাবে অনেকটা সুস্থ থাকলেও আপাতত অভিনয়ে ফিরছেন না। প্রবল আগ্রহ থাকার পরেও দুটি কারণে এখন অভিনয় করা হচ্ছে তার। প্রথমত করোনাভাইরাস। দ্বিতীয়ত এ মুহূর্তে যারা তার কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন, সেগুলোর গল্প ও চরিত্র কোনোটিই পছন্দ হচ্ছে না তার। এ প্রসঙ্গে এ টি এম শামসুজ্জামান বলেন, ‘এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন পরিচালক সরাসরি যোগাযোগ করেছেন সিনেমা এবং নাটকে অভিনয়ের বিষয়ে। তাদের আমি জিজ্ঞেস করেছি, গল্পের মূল মেসেজ কী। পরিচালক আমাকে বলেন, স্ক্রিপ্টটি পড়েন; বুঝবেন আপনি। আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, আপনি পরিচালক আর আপনি জানেন না, গল্পের মূল মেসেজ কী! পরিচালক জবাব দিতে পারেনি। যদি এ হয় অবস্থা, তাহলে কি কাজ করার আগ্রহ থাকে? থাকে না। এ কারণেই হয়তো খুব সহসা অভিনয়ে ফেরা হবে না আমার।’ বাড়িতে বই পড়েই বেশিরভাগ সময় কাটে এ টি এম শামসুজ্জমানের। তবে অভিনয়ের নেশা এখনো তার মাথা থেকে যায়নি। বয়সটা অভিনয়ের জন্য অতটা জুতসই না হলেও অভিনয়ের টান এখনো প্রচুর। এ টি এম শামসুজ্জামান বলেন, ‘অভিনয়ে ফেরার জন্য যেন অস্থির হয়ে আছি। আমি অভিনয়ের মানুষ। অভিনয় না করতে পারার যন্ত্রণায় কুরে কুরে মরছি। আমি মনে করি, এখনও আমার সেরা অভিনয় করতে পারিনি। শ্রেষ্ঠ অভিনয়টা এখনো করা হয়নি। তবে এর জন্য অপেক্ষায় আছি। এতদিন পরিচালকরা আমাকে হনুমান বানিয়ে রেখেছে। অভিনয় করার সুযোগ দেয়নি। আগামীতেও অভিনয় করার সুযোগ দেবে কিনা সেটাও বলতে পারছি না। তবে আমি চাই ভালো অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মনে আজীবন বেঁচে থাকতে। এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।’ ২০১৯ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। সেই রাতে তাকে গেন্ডারিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দেড় মাসের বেশি সময় চিকিৎসা গ্রহণের পর বাসায় ফিরেন তিনি। তারপর আর তিনি কোনো শুটিংয়ে অংশ নেননি। এ টি এম শামসুজ্জামানের সর্বশেষ ইচ্ছা, মনের মতো একটি গল্প লিখবেন। সেই গল্প দিয়ে নিজেই নির্মাণ করবেন সিনেমা। শিগগিরই তিনি চিত্রনাট্য লেখার কাজ শুরু করবেন। এ টি এম শামসুজ্জামান পুরান ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন। তার চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রের পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৭ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ‘আজীবন সম্মাননা’ পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।