শনিবার

১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রেলের পশ্চিমাঞ্চলে শিডিউল বিপর্যয়, যাত্রী ভোগান্তি চরমে প্রতিটি নাগরিককে স্বাবলম্বী করতে কাজ করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী বুবলির পর থানায় জিডি করলেন অপু পাকিস্তানে ৭ ঘুমন্ত শ্রমিককে গুলি করে হত্যা বাগমারায় তহশীলদার সাজ্জাদকে বদলির খবরে মিষ্টি বিতরণ রাজশাহী নগরীতে কবরস্থান বাস্তবায়নের দাবিতে ১১ মসজিদের মুসল্লিদের মানববন্ধন মান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল রাসিক মেয়রের সাথে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের সৌজন্য সাক্ষাৎ সিরাজগঞ্জে হেরোইন বহনের দায়ে গোদাগাড়ীর ২ যুবকের যাবজ্জীবন নিজের নামে কোনো প্রকল্প চান না প্রধানমন্ত্রী

ডোপ টেস্ট নিয়ে আতঙ্কিত মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যরা

Paris
Update : রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২১

এফএনএস : মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যরা ডোপ টেস্টে ধরা পড়ার আশঙ্কায় আতঙ্ক ও ভীতি নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। সারাদেশের মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেজন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ডোপ টেস্ট করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে দেশব্যাপী মাদকাসক্ত পুলিশ ধরতে গোয়েন্দা ইউনিটও নিয়োগ করা হয়েছে। দেশের কোন জেলায় মাদকাসক্ত পুলিশ সন্দেহ হলে প্রতিটি জেলার ইউনিট প্রধানরা কৌশলে ডেকে এনে ডোপ টেস্ট করাচ্ছে। টেস্টে যাদের পজিটিভ হয় তাদের আরো দু’দফায় ডোপ টেস্ট করে নিশ্চিত হয়ে ইউনিট প্রধানরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। ডোপ টেস্টে যারা চূড়ান্তভাবে পজিটিভ হবে তাদেরকে গ্রেফতার, মামলা দায়ের, প্রত্যাহারসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ডোপ টেস্টের মাধ্যমে সারাদেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যের মধ্যে সতর্ক বার্তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

তাছাড়া পুলিশ বিভাগে যারা নতুন চাকরিতে আসবে তাদেরকে ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া পর্ব অতিক্রম করেই চাকরিতে যোগ দিতে হওয়ার মতো সিদ্ধান্তও আসছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যরাই সাধারণত চাঁদাবাজি, ঘুষ, দুর্নীতি, মাদক কারবারসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সেজন্য ডোপ টেস্টের মাধ্যমে পুলিশের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান চলছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বরিশাল, রাজশাহীতে ডোপ টেস্ট অনেক পুলিশ সদস্যের পজিটিভ হয়েছে।

রাজধানীর বাইরেও যাদের পজিটিভ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পুলিশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগের ব্যাপারে শীর্ষ কর্মকর্তারা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দিতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে জনবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে।

সূত্র জানায়, ডোপ টেস্টে সারাদেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যের মধ্যে এখন পর্যন্ত শতাধিক পজিটিভ হয়েছে। চূড়ান্তভাবে পজিটিভ হওয়াদের মধ্যে অন্তত ২০ জন সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছে। চূড়ান্ত বরখাস্তের জন্য আরো ১০ জনের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত করার বিষয় প্রক্রিয়াধীন। অন্তত ৪০ জনকে বিভাগীয় শাস্তি ও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে এসআই, সার্জেন্ট, এএসআই, নায়েক ও কনস্টেবল। তবে অভিযুক্তদের অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্যই কনস্টেবল। অবশ্য পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে ডোপ টেস্ট এখনো চালু হয়নি। পর্যায়ক্রমে পুলিশের উচ্চ পর্যায়েও ডোপ টেস্ট চালু করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায়।

সূত্র আরো জানায়, ডিএমপির ৫৭টি বিভাগে মোট ৫৭ ডিসি রয়েছেন। সদস্য আছে ৩৪ হাজার। আর সারদেশে য লাখের বেশি। যাদের এখন পর্যন্ত চিহ্নিত এবং যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ২৯ জন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে সাবইন্সপেক্টর পর্যন্ত শাস্তির আওতায় এলেও কেউই নজদারির বাইরে নেই। এটা সবার জন্য। আর শাস্তির আওতায় আসা পুলিশ সদস্যের সংখ্যাও ক্রমেই বাড়বে। গত জুন মাস থেকে এই নজরদারি ও ডোপ টেস্টের কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর বাইরেও ডোপ টেস্ট চালু হওয়ায় আতঙ্ক ও ভীতি বিরাজ করছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ১৭ সদস্যকে মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) থেকে কনস্টেবল মর্যাদার ৫ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার ও ৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

তাছাড়াও ১০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। বরিশালে গত ১৫ মাসে ৪৮ সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্টে ১৭ জনের রিপোর্ট পজিটিভ হয়। তাদের মধ্যে কনস্টেবল থেকে এএসআই পর্যায়ের ৪ জনকে চাকরিচ্যুত এবং মাদক বিক্রিতে জড়িত থাকায় মামলা দিয়ে ৫ সদস্যকে কারগারে পাঠানো হয়েছে। কুষ্টিয়ায় ডোপ টেস্টে মাদকাসক্ত প্রমাণিত হওয়ায় ৮ পুলিশ সদস্যকে অপসারণ করা হয়েছে। পুলিশে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে মাদকের সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত থাকায় গত দুই বছরে শতাধিক পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়। যারা মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে অর্থ ও মাসোয়ারা নিতো। তাদের বিরুদ্ধে বদলিসহ বিভাগীয় নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের মতে, সারাদেশে ২ বছর আগে ২০১৮ সালে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযানে অন্তত সাড়ে ৪শ’ মাদক কারবারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, যার সিংহভাগই কক্সবাজার জেলায়। মাদক কারবার ও মাদক কারবারির বিরুদ্ধে কয়েক হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসা এবং বিভিন্ন স্পটে মাদক কারবার চলার বিষয়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায় ‘শর্ষেতেই ভূত!’ অর্থাৎ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ করে পুলিশ সদস্যের মধ্যেই মাদকাসক্তি ঢুকে পড়েছে। তার পরই পুলিশের মধ্যে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হলে ডোপ টেস্ট প্রথা চালু হয়। অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, পুলিশ বিভাগে অভ্যন্তরীণ মনিটরিং ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করা অপরিহার্য। পুলিশ বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে যে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও বের করে দেয়া হচ্ছে তাতে দারুণ ফল দেবে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন জানান, প্রত্যেক ডিভিশনের প্রধানরা প্রথমে নজরদারির মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করেন। তার পর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত কিনা তা চিহ্নিত করা হয়। পজিটিভ হলে বিভাগীয় মামলা করা হয়। বিভাগীয় মামলা পর্যায়েই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদস্ত শেষে বরখাস্ত করা হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে থানার ওসিদের উদ্দেশে বলেছেন, মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ইতিমধ্যে অনেকের চাকরি চলে গেছে। জীবন কতটা কঠিন! শরীর থেকে ইউনিফর্ম নেমে গেলে বোঝা যাবে। মাদককে না বলুন, এর থেকে সব সময় দূরে থাকুন। নতুবা রক্ষা নেই।

একই প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মোঃ সোহেল রানা জানান, পুলিশ সদর দফতরের কথা হলো পুলিশের কোন সদস্য মাদক গ্রহণ করবে না। মাদকের ব্যবসায় জড়াবে না। তাদের কোন মাদক সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। ডিএমপির কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে। সারাদেশে পুলিশের ইউনিটগুলোর জন্যও একই নির্দেশনা। তাদেরও এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। দেশের বিভিন্নস্থানের কোন কোন ইউনিট এরই মধ্যে ব্যবস্থাও নিয়েছে এবং ডোপ টেস্ট প্রক্রিয়া প্রসারিত হচ্ছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris