রবিবার

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি ‘সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই’ রক্তস্বল্পতা দূর করবে কচু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কি একদম তলানিতে কান উৎসবে নজর কাড়লেন অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়তি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট

মহাদেবপুরে ৯০ বছর পর আদালতের মাধ্যমে বুঝে পাওয়া জমির ধান কর্তনের অভিযোগ

Paris
Update : শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২

নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর মহাদেবপুরে মামলা দায়েরের দীর্ঘ ৯০ বছর পর আদালতযোগে দখল পাওয়া জমির ধান প্রতিপক্ষরা রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে গেছে। তিন পুরুষ মামলা চালানোর পরও বিবাদ থেকে যাওয়ায় ভূক্তভোগীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার চাঁন্দাশ ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের মৃত আছর উদ্দিনের ছেলে তফিজ উদ্দিন (৫০) অভিযোগ করেন যে, তার দাদি মৃত খতিমন বেওয়া তাদের ২২ বিঘা জমি বাবদ প্রায় ৯০ বছর আগে ওই গ্রামের জবেদ আলী মন্ডলসহ ১২৯ জন বিবাদীর বিরুদ্ধে রাজশাহীর মুনসেফি আদালতে একটি বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেন। ১৯৬৭ সালে সে মামলায় ডিক্রি হয়। আদালতের নানান আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার দাদির তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলে আছর উদ্দিন ও মুনছের আলীর ওয়ারিশরা পৃথক ছাহামের আবেদন করলে এবছর ২১ ফেব্রুয়ারী আদালতযোগে তাদের অংশের ১৭ বিঘা জমি বুঝে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে তার দাদি, বাবা, চাচা ও ফুফুরা মারা গেছেন। তৃতীয় পুরুষেরা সে জমির দখল পান। জমিগুলো এতদিন অন্যেরা ভোগদখল করতো। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর মৌজায় আড়াই বিঘা জমি পান তারা। সে জমিতে তারা বোরো ধান রোপণ করেন। আর দিন দশেক পর সে ধান কাটা হতো। কিন্তু গত শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ভোরে প্রতিপক্ষ লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে চাঁন্দাশ ইউপির সাবেক মেম্বার ছইমুদ্দিন মন্ডল (৬৫), তার ছেলে আনিছার রহমান (৪০), জামাই আবদুর রশিদ (৫০), আনিছার রহমানের ছেলে আকাশ (১৭), রাব্বি (১৬), ফজর আলীর জামাই বেলাল হোসেন (৪০), মৃত কাশির ছেলে মোস্তফা (৫০), চাকলা গ্রামের মৃত সাকির আলীর ছেলে আজাদ (৫০) ও আরো ১০/১৫ জন সে জমির কাঁচা ধানের আগার শীষ কেটে চুরি করে নিয়ে গিয়ে সাবেক মেম্বার ছইমুদ্দিনের খলিয়ানে রাখে। জানতে পেরে ইউপি মেম্বার আবদুস সামাদের উপস্থিতিতে সে কাটা ধানের কিছু শীষ উদ্ধার করেন।
এব্যাপারে শুক্রবার দিবাগত রাতে মহাদেবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন জানান, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানতে চাইলে প্রতিপক্ষ সাবেক মেম্বার ছইমুদ্দিন ওই জমির ধান কাটার কথা স্বীকার করে জানান, তিনি তাদের অন্য ওয়ারিশ আব্বাস আলীর ছেলে আজিমুদ্দিনের কাছ থেকে মামলা চলাকালিন সময়ে ১৯৯৬ সালে ওই আড়াই বিঘা জমি কিনেছেন। কিন্তু বাদী তফিজ উদ্দিন জানান, আজিমুদ্দিন পক্ষ আদালতে ছাহাম না চাওয়ায় তাদের জমি বুঝে দেননি। বরং আদালত যে জমি বাদীদেরকে বুঝে দিয়েছে আদালত অবমাননা করে সে জমির ধান রাতের আঁধারে কেটে চুরি করেছেন। দীর্ঘ মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় ৯০ বছর আগে রাজশাহীর মুনসেফি আদালতে দায়ের করা বাটোয়ারা মোকদ্দমাটি পরবর্তীতে নওগাঁ মহকুমার নওগাঁ মুনসেফি আদালতে বদলী হয়। মামলা নং ৯৭/১৯৬৭ বাটোয়ারা। ১৯৬৯ সালের ২৪ মে নওগাঁ সদর সিনিয়র মুনসেফি আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আব্দুল্লাহ ওই মামলায় ১, ২ ও ৪ নং বিবাদীর বিরুদ্ধে দোতরফা সূত্রে ও অন্যান্য বিবাদীর বিরুদ্ধে একতরফা সূত্রে রায় ও ডিক্রির আদেশ দেন। বিবাদীরা এই রায় ও ডিক্রি রদ রহিদ চেয়ে একটি ছানী মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২০৬/১৯৬৯ ছানী। মামলাটি ১৯৭০ সালের ৩১ আগস্ট দোতরফা সূত্রে নামঞ্জুর হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে নওগাঁ জেলা জজ আদালতে একটি মিস আপিল মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ৩৮/১৯৭২ মিস। ১৯৭৩ সালের ১২ এপ্রিল এটিও নামঞ্জুর হয়। এরপর এই আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে একটি সিভিল রিভিশন মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ৩৯৪১/১৯৯৬ সি: রি:। এই মামলার ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বরের আদেশের আলোকে নিম্ন আদালতের ৯৭/১৯৬৭ নং মামলাটি পূণরায় চালু হয়। কিন্তু কোন পক্ষই কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিজ্ঞ বিচারক ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেয়া আদেশে পূর্বের রায় ও ডিক্রি বহাল রাখেন। এরপর বাদীপক্ষ ডিক্রি দেওয়া জমি আদালতযোগে দখল গ্রহণের জন্য একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৪/২০২১ বাটোয়ারা জারী। এই মামলার প্রেক্ষিতে গত ২১ ফেব্রুয়ারী নওগাঁ জেলা জজ আদালতের নাজির মাইনুল হক, প্রসেস সার্ভার তাজিম উদ্দিন ও সার্ভে কমিশনার অ্যাডভোকেট এস এম সারোয়ার হোসেন সরেজমিনে মাপজোখ করে, জমির সীমানা চিহ্নিত করে, লাল পতাকা উড়িয়ে ও ঢেড়া পিটিয়ে ঘটা করে জমির দখল বাদীদেরকে বুঝিয়ে দেন। দীর্ঘ ৯০ বছর মামলা চালানোর পর জমি বুঝে পান তারা।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris