শনিবার

১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে : শেখ হাসিনা রাজশাহীতে আমের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে সজাগ থাকার পরামর্শ কৃষিমন্ত্রীর বড়াল নদের উপর ব্রীজ নির্মান স্থান পরিদর্শন করেন যুগ্ম সচিব পবায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান ইসলামী নার্সিং কোচিং সেন্টারের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা রাজশাহীতে গ্রীষ্মকালীন কারুশিল্প উদ্যোক্তা মেলার উদ্বোধন অংকের হিসাব লাগে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত : আব্দুল ওয়াদুদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন হজ পালনের ধাপসমূহ

দুর্গাপুর হানাদার মুক্ত দিবস আজ

Paris
Update : রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০

মোবারক হোসেন শিশির : আজ ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে দুর্গাপুরে হানাদার মুক্ত হয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দুর্গাপুরে অসংখ্য মানুষের ঘর-বাড়ি পুড়ানোসহ বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। শহীদদের মধ্যে কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন আবার অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা কিংবা শহীদের স্বীকৃতিটুকুও পাননি আজও। এ নিয়ে আক্ষেপও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পরিবারের স্বজনদের।

মুক্তিযুদ্ধের সময় দুর্গাপুরে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা গুলোর মধ্যে রয়েছে গগনবাড়িয়া গ্রামে ১৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে হত্যা। যুগীশো গ্রামে ৪২টি হিন্দু পরিবারের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ও দুর্গাপুর সদরে একসাথে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যার ঘটনা। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা দুর্গাপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে দুর্গাপুর থেকে পালিয়ে যায়। আর তখনি সমগ্র দুর্গাপুরবাসী আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর সেই স্মৃতি আজ মনে পড়ে দুর্গাপুরের সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের। ইতোমধ্যে উপজেলা মোড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম স্বম্বলিত স্মৃতি স্তম্ভ নিমার্ণ করা হয়েছে। এছাড়াও গগনবাড়িয়া গ্রামেও গণকবরকে ঘিরে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।


মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাজশাহী জেলা ছিল ৭ নম্বর সেক্টরের আওতায়। সে সময় সেক্টর কমান্ডার ছিলেন লে. কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান। আর দুর্গাপুর উপজেলা ছিল ৪ নম্বর সাব সেক্টরের আওতায়। সে সময় সাব সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর গিয়াস। ওই সময় ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম। তার নেতৃত্বেই দুর্গাপুরে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দুর্গাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার আব্দুল গণি বোখারীর দেয়া ভাষ্য মতে, ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোকজনের সহযোগিতায় পাক বাহিনী তাহেরপুর হয়ে দুর্গাপুরে প্রবেশ করে দুর্গাপুর থানা দখল করে পাক-হানাদার বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে।

সেখান সাধারণ নারীদের ধরে এনে চালাতো পৈশাচিক নির্যাতন। আর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরিহ মানুষদের হত্যা করা হতো। ওই সময় তাদের সহযোগীতা করতো নামেদুরখালী গ্রামের রাজাকার আব্দুল আজিজ, তেঘরিয়া গ্রামের রাজাকার আজাহার আলী, ধরমপুর গ্রামের রাজাকার কমান্ডার আতব আলী, বেড়া গ্রামের রাজাকার আব্দুল গফুর, পানানগর ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আজিজুল হক। আর সে সময় উপজেলা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মোল্লা আব্দুল ওয়াহেদ। ওই দিন রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুর্গাপুর সদরের মুক্তিযোদ্ধা ধীরেন্দ্রনাথ, মাহিন্দ্রনাথ, পুলিশ কনস্টেবল দিদার আহম্মেদ, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের চামটুকে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা। ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর রাজশাহী থেকে সরাসরি পাক-হানাদার বাহিনী দুর্গাপুরের জয়নগর ইউনিয়ন ও দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নে ঢুকে পড়ে।

ওইদিন উপজেলার গগনবাড়িয়া গ্রামে ১৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন মানুষদের ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। সেখানে নিহতদের সাথে আহতদেরও জীবন্ত মাটি চাপা দেয় পাক-হানাদার বাহিনী। গগনবাড়িয়ার সেই স্থানটি এখন বধ্যভুমিতে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে সে সময়ের রাজাকার আব্দুল আজিজ সরকারের নেতৃত্বে যুগীশো গ্রামের ৪২ টি হিন্দু পরিবার জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সে দিনের কথা মনে উঠলেই আজও গা শিউরে উঠে যুগীশো গ্রামবাসীর। সারাদেশের ন্যায় দুর্গাপুরেও চলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। ১২ ডিসেম্বর দিবাগত ভোর রাতে তৎকালীন এফএফ ডেপুটি কমান্ডার ও বর্তমানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একঝাঁক তরুণ মুক্তিযোদ্ধা দুর্গাপুর থানায় পাক-হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প আক্রমনের প্রস্তুতি নেয়।

এদিন নজরুল ইসলামের নির্দেশে ও তার নেতৃত্বে উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধারা আব্দুল গণি বোখারীর বাড়ির পাশে থাকা একটি বরই গাছের নিচে জড়ো হতে থাকে। ১৩ ডিসেম্বর ভোর রাতে ফজরের আজানের সাথে সাথেই থানায় পাক-হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণ চালানো হয়। ৩ ঘন্টা ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ চলার পর পাক-হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প দখলে নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। অবশেষে ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে টিকে থাকতে না পেরে ক্যাম্প থেকে পাক-বাহিনী পলায়ন করে। তখনও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর গুলি বর্ষন করে। ওই দিনই দুর্গাপুরের আকাশে উড়ানো হয় স্বাধীন দেশের লাল সবুজের পতাকা। দুর্গাপুর উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ আর উৎসবের আমেজ। দুর্গাপুরের বুকে রচিত হয় বাঙ্গালী জাতির এক নতুন ইতিহাস।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris