মোবারক হোসেন শিশির, দুর্গাপুর : রাজশাহী দুর্গাপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা হোজা নদীটি বর্তমানে প্রায় মৃত। নদীটি একদিকে ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হচ্ছে অপরদিকে অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্মে দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। নদীটি হাটবাজারের ময়লার ভাগাড় ও অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে দিন দিন ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী হোজা নদীটির প্রান ফেরাতে সংস্কার ও পূর্নঃ খনন করা অতীব জরুরী হয়ে পড়েছে।
সংস্কার ও পূর্নঃ খননের মাধ্যমে প্রানফিরে পাবে ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা হোজানদী। সংস্কার ও খননের মাধ্যমে নদীটির প্রান ফেরালে বাঁচবে লাখো কৃষক, প্রসার ঘটবে ব্যবসা বানিজ্যের, উন্নত হবে এই অঞ্চলের জীবনযাত্রান মান, গড়ে তোলা সম্ভব দৃষ্টি নন্দন নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্র। এক কথায় হোজা নদীটি খনন করলে দুর্গাপুর উপজেলার সার্বিক উন্নয়নের চিত্রের ঘটবে নানামূখী পরিবর্তন। নদীটি খননের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা এই অঞ্চলের আবাল বৃদ্ধ বনিতা সহ সকল পেশাজীবি জনগনের।
হোজা নদী বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী জেলা এবং নাটোর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৯৫.০৩ বর্গ কিমি কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২৪.২৩ মিটার। ভৌগলিকভাবে নদীটি দেখতে অনেকটা সর্পিলাকার প্রকৃতির। উত্তরে বাগমারা এবং মোহনপুর উপজেলা, দক্ষিণ ও পূর্বে পুঠিয়া উপজেলা, পশ্চিমে পবা উপজেলা। নদীটি দুর্গাপুর উপজেলার পলাশবাড়ী গ্রামের মধ্যদিয়ে পূর্বমুখী প্রবাহ পথে তিন কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে। উত্তরমুখী হয়ে বর্ধনপুর, চৌপুকুরিয়া, সিংগা, দুর্গাপুর, পনানগর, দমদমা, চকপলাশী, গাংধোপাপাড়া, গন্ডগোহালি, গোবিন্দনগর হয়ে পুঠিয়ার কানাইপাড়ার মধ্যদিয়ে মুসা খান নদীতে পতিত হয়েছে।
দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ফিরোজ বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই নদীতে একসয়ের দুর-দুরান্ত ব্যবসায়ীরা সে সময়ে তাহেরপুর, আহসানগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, মাদারীগঞ্জ মালামাল নিয়ে রাজশাহী জেলা সদর সহ দেশের বিভিন্ন গঞ্জে মালামাল যাতায়েত করলেও, দিনে দিনে ভরাট আর সংশ্লিষ্টদের তদারকির অভাবে জীবন্ত নদী এখন মৃতপ্রায়। বর্তমানে নদীটি দীর্ঘদিন যাবৎ কচুরিপানা শেষ পানিটুকুও দখল করে নিয়ে আছে। নদীটি সংস্কার করলে দূর্গাপুর উপজেলার একদিকে যেমন সুন্দর্য্য বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যির প্রসার ঘটবে।
রাজশাহীর দুর্গাপুরের হোজা নদী এখন বর্জ্যের ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। সদর ও পৌর এলাকার বাজারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এতে একদিকে বাড়ছে দূষণ, ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-বালাই সেই সাথে ময়লার ভাগাড়ের কারনে দিনে দিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী অপরদিকে নদীর পাশের্^র বসবাসকারী জনগন এবং স্থানীয় প্রভাবশালী অসাদু ব্যাক্তিরা নদীর জায়গা দখল করে কেউ কেউ গড়ে তুলছেন মার্কেট, বাসা-বাড়ী, দোকান-ঘর ও বিভিন্ন পন্যের রমরমা ব্যবসা বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। দুর্গাপুর- সিংগাবাজারের পারাপারের ব্রীজের দুইপাশের্^ই প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন মার্কেট, ব্রীজের পশ্চিম পাশের্^র মেরিন ফ্লাওয়ার অটো মিলের পেছনে হোজী নদীর ওপর চলছে বাঁশের আড়তের ব্যবসার বিশাল কার্যক্রম।
নদীর জমি চারিদিকে দখল হয়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় খরা মৌসুমে পানি থাকায় এই অঞ্চলের লাখো কৃষকরা ফসল উৎপাদনে নানামূখী সমস্যায় পড়ে প্রতিনিয়ত। নদী খনন হলে নদীতে সব সময় প্রচুর পরিমানে পানি থাকবে, সেই পানি দিয়ে এই অঞ্চলের চাষীরা সহজেই স্বল্প খরচে ফসল উৎপাদন করতে পারবে।
উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শেখ রাশেল শিশু পার্ক ছাড়া দুর্গাপুরে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। কিশোর-কিশোরীদের জন্য বিদ্যালয়ের ছোট-খাটো খেলার মাঠ থাকলেও বিদ্যালয় গুলোতে আধুনিক ও ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করায় বিদ্যালয়ের মাঠ দকল করে ভবন নির্মিত হওয়ায় মাঠ গুলোও দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ডিজিটাল স্মাট বাংলাদেশ বিনির্বানে আগামী প্রজন্মকে উন্নত মানসিকতায় গড়ে তুলতে বিনোদন সুবিধার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুর্গাপুর উপজেলাবাসীর দাবি, দুর্গাপুরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া প্রায় ১৫ কিলোমিটার আয়তনের হোজা নদীর সংষ্কার করে নদীর দুই তীর ঘেষে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠলে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হবে।
এলাকাবাসী মনে করছেন, নদীর উপর ব্রিজ দুটিকে কেন্দ্র করে এর দু’পাড়ে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। নদীকে ঘিরে শোভাবর্ধন দৃষ্টিনন্দন নান্দনিক পার্ক স্থাপন করা হলে নদীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদী হাসান বলেন, দুর্গাপুর উপজেলা ও পৌর সদরে ছেলে সন্তান পরিবার পরিজনদের নিয়ে অবসর সময়ে একটু ঘোরাফিরা করার মতো কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজশাহী শহরের পদ্মা পাড়ে, টিবাঁধ, আইবাাঁধ, চিড়িয়াখানা, পদ্মার চরে ছুটতে হয়। অথচ আমাদের এলাকাতেই যে নদীটি রয়েছে সে নদীর দুই পাড় সংস্কারের মাধ্যমে এখানেই বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।
দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান ফিরোজ বলেন, হোজা নদীর পাড় ঘেঁষে পার্ক স্থাপন করা এখন সময়ের দাবি মাত্র। বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।
সিংগা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাক্তিবুল ইসলাম বলেন, শিশুদের পড়ালেখার পাশাপাশি বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য এই উপজেলায় কোনো পার্ক নেই। নেই শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র। শিশুদের সুস্থ্য মানসিক বিকাশের জন্য অবশ্যই একটি বিনোদন কেন্দ্র জরুরি প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে পরিবেশবীদ মীর উবায়দা ইবনে মাযহারুল আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, দুর্গাপুর নদীর তীর ঘেঁষে পার্ক হলে পৌর শহরের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে নদীটি বাঁচবে। এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, নদীতে মাছ, আর নদীর দু‘প্রান্তে অবস্থিত সারি সারি বৃক্ষ রাশির ডালে ডালে পাখির অবাধ বিচরন। নদীর ভরা যৌবনে জেলেদের বিভিন্ন ফাঁদ দিয়ে মৎস্য আহরণ মুখরিত আর পাখির কলতান চোখজুড়ানো এমন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতেন দর্শণার্থীরা। নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্ভর করত শত শত জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ। সেই সাথে গাছে গাছে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে হাজার হাজার পাখি। প্রকৃতি আর জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা করে চলত।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল করিম বলেন, উপজেলা চত্বরে শেখ রাশেল একটি শিশু পার্ক আছে, তবে সেটি আকারে অনেক ছোট। এই উপজেলায় বিনোদন কেন্দ্র নেই বললেই চলে। হোজা নদীর পাড় ঘেঁষে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠলে নদীর সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে মানুষের বিনোদনেরও কেন্দ্র হবে। তিনি নদীটি পুনঃ খননের মাধ্যমে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আলহাজ¦ আবদুল ওয়াদুদ স্যারের নিকট গুরুত্বের সাথে উত্থাপন করবেন বলে জানান।
স্থানীয় প্রভাবশালী অসাদু বিভিন্ন মহল নদীর পাড় দখল করে যে সকল স্থাপনা তৈরি করেছে সেই অবৈধ স্থাপনা স্থাপনা উচ্ছেদ পূর্বক ঐতিহ্যবাহী খরস্রোতা হোজানদীটি সংস্কারের মাধমে খনন করে মৃতপ্রায় হোজা নদীর প্রান ফিরিয়ে দুর্গাপুর উপজেলাকে নান্দনিক শোভাবর্ধনের মাধ্যমে রাজশাহী তথা সারা দেশের মধ্যে দুর্গাপুর উপজেলাকে ডিজিটাল, আধূনিক, মডেল, স্মাট উপজেলা হিসেবে রুপান্তরের জন্য রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আলহাজ¦ আব্দুল ওয়াদুদ দারা মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন দুর্গাপুরের আবাল বৃদ্ধ বনিতা সহ সকল পেশাজীবি জনসাধারন।