শুক্রবার

৫ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাসিকের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শনে ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল বান্দরবানে বেনজীরের ২৫ একর জমির নিয়ন্ত্রণ নিল জেলা প্রশাসন ওমানে বাংলাদেশি শ্রমিকরা উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে : প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনকে চায় না ডেমোক্রেটরা এমপি আনারের লাশ শনাক্ত না হলে সব তদন্ত নিষ্ফল হতে পারে সরকার স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী নাটোরে বিএনপির সমাবেশে দুর্বৃত্তদের হামলায় বুলবুলসহ ৮ নেতাকর্মী আহত গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যানের নিজ অর্থায়নে এন্টিভেনম উপহার ভারতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারালেন শতাধিক ব্যক্তি বাঘা আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে দায়িত্বহীনতা ছিলো কার? নানা প্রশ্ন

বাঘা আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে দায়িত্বহীনতা ছিলো কার? নানা প্রশ্ন

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪

6স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে একটি ওয়েল প্রোটেকটেড এলাকায় তার ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রশাসনের দায়িত্বশীলতাও নিয়েও বলছেন কথাবার্তা। এমনকি দু’পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের আগাম তথ্য থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেনি। বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে বাবুলের ওপর নির্মম এ হামলার ঘটনাটি ঘটেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, হামলার সময় সেখানে বাঘা থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারপরেও তারা বাবুলকে হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন নি। স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বহীনতার কারণেই অকালে প্রাণ দিলেন বাবুল। এমনকি নিহত বাবুলের পরিবারের সদস্যরাও পুলিশের অবহেলার বিষয়টি বলেছেন। রোববার স্থানীয় প্রশাসন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, দলিল লেখক সমিতির সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের নেপথ্যের কারণ বাঘা দলিল লেখক সমিতিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। ২০১৯ সাল থেকে কোনো নির্বাচন ছাড়াই দলিল লেখক সমিতির কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসময়ে মধ্যে চারটি পকেট কমিটি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এ কমিটি রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম নিজের অনুসারীদের পদ দিয়ে গঠন করেন। তবে এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমকে ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ফোন না ধরার কারণে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত ৯ জুন এমপি শাহরিয়ার আলম দলিল লেখক সমিতির নতুন সভাপতি হিসেবে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্মআহ্বায়ক শামিউল আলম নয়নের নাম লিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) খুদেবার্তা দেন। বিষয়টি বাঘার ইউএনও তরিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে স্বীকার করেছেন। গত ৯ জুন পিন্টু ও নয়ন দায়িত্ব নিতে গেলে দলিল লেখকদের একাংশের বিরোধিতার মুখে পড়েন। সেদিন দলিল লেখকদের সংঘর্ষে দুপক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। বাঘার ২২ জুনের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় সেদিনই। ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘উনি (এমপি) ৯ জুন দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের নাম মেনশন করে টেক্সট করেছিলেন। আমার কাছে অনেকেই অনেক কিছু পাঠাতেই পারেন।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, পৌর মেয়র আক্কাস আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু ও পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলামসহ তাদের অনুসারিরা দলিল লেখক সমিতির এই চাঁদাবাজির বিরোধিতা করে আসছিলেন। নতুন কমিটির বিরোধিতা নিয়ে ১০ জুন দলিল লেখকদের দুপক্ষের সংঘর্ষের পর ২০ জুন একাংশ মানববন্ধন করে।
মেয়র আক্কাস, উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব ও ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজ এতে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন। পরে ২২ জুন দলিল লেখক সমিতির দৌরাত্ম বন্ধের দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেন। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একই দিন মেয়র আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মানববন্ধনের ডাক দেয় বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ।
এ ঘটনায় কর্মসূচি সফল করতে উভয়পক্ষই ফেসবুকে পোস্ট দেয়। ফলে ২২ জুন আইনশঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে পারে বলে স্থানীয় প্রশানের কাছে বার্তা ছিলো। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘১৪৪ ধারা না দিলেও আমরা পুলিশ প্রস্তুত রেখেছিলাম। থানার পাশাপাশি জেলা পুলিশ লাইন্স থেকে আগের রাতেই অতিরিক্ত ৩০ জন পুলিশ সদস্য আনা হয়েছিল।’
উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকের সামনে মেয়রের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই হেলমেট পরে ছিলেন। বস্তায় করে তারা ইটপাটকেল ও লাঠিশোটা এনেছিলেন। মেয়র আক্কাসসহ তার অনুসারিরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সামনে এলে উপজেলা চত্বরের ভেতর থেকে তাদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। পাল্টা জবাব দিয়ে মিছিলটি সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। তারা উপজেলা চত্বরের সামনে এলে মানববন্ধনের লোকজন ভেতরে ঢুকে যায়। প্রধান ফটক দিয়ে সোজা রাস্তা দিয়ে ঢুকলেই হাতের বাঁয়ে মৎস্য অফিস, এরপর ইউএনওর কার্যালয়। ইউএনওর কার্যালয়ের পর অব্যবহৃত নতুন উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন। এর সামনের ফাঁকা স্থানটিতেই আহত অবস্থায় পড়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল। কিন্তু তাকে কে কুপিয়েছেন তার প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যাচ্ছে না।
মামলার বাদী ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি পিন্টু বলেন, ‘আক্কাসের লোকজনের হামলায় আমরা উপজেলার ভেতরে ঢুকে, কেউ ইউএনওর বাসভবনের সামনে আবার কেউ প্রাচীর টপকে থানায় গিয়ে আশ্রয় নিই। বাবুলের ধারণা ছিল তাকে কেউ মারবে না, কিন্তু মেরেছে। হামলাকারীরা যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাদের দেখেছি।’ বাবুলকে হামলার হাত থেকে রক্ষা করতে পুলিশ এবং প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘কর্মসূচির ব্যাপারে পুলিশকে আমরা অবহিত করেছিলাম। পুলিশ বলেছিল, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কিন্তু পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে।’ এছাড়াও নিহত বাবুলের ছেলে আশিক জাভেদ বলেন, ‘পুলিশের ব্যর্থতার কারণে আমার বাবার প্রাণ গেছে।’
ইউএনও কার্যালয়ের সামনেই একটি বৈদ্যুৎতিক পোলে তিনটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তবে ইউএনও জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পূর্ণ হয়ে গেছে। ১ মে থেকে ভিডিও রেকর্ড থাকে না। শুধু মনিটরে দেখা যায়। ফলে প্রকৃত হামলাকারীকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মেয়র আক্কাস পক্ষের এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেখে সংঘাতের আশঙ্কায় তিনি ১৪৪ ধারা দিতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফোন করেছিলেন। ১৪৪ ধারা না দিয়ে তাঁকে বলা হয়েছিল, পর্যাপ্ত পুলিশ থাকবে। কিন্তু জেলা থেকে পুলিশ আনা হয়েছিল মাত্র ৩০ জন সদস্য। তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন নি।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘হামলার সময় আমরা খুব কাছাকাছি ছিলাম না। বাবুলকে রক্ষার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ নিরপেক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে।’
আহত হওয়ার চারদিন পর ২৬ জুন হাসপাতালে মারা যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল। ২৭ জুন জানাজা নামাজে বাবুলের লাশ সামনে রেখে এমপি শাহরিয়ার আলম বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে মদদদাতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটির মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ। ওই জানাজা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে বের করে দেওয়া হয়। শাহরিয়ারের ওই বক্তব্যের পর লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব ঘটনায় আমার সম্পৃক্ত হওয়ার কোন কারণ নেই, সুযোগও নেই। মনে হচ্ছে রাজনীতি করতে শাহরিয়ারের একটা লাশের প্রয়োজন ছিল। একারণেই তিনি এমন কথাবার্তা বলছেন।’ তবে স্বামীর লাশ নিয়ে রাজনীতি চান না নিহত বাবুলের পরিবার। এসব দলাদলির কারণে বাবুলের প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের। রোববার বিকালে বাঘার গাওপাড়ায় বাবার বাড়িতে বাবুলের স্ত্রী জরিনা বেগম বেবি বলেন, ‘লিটন ভাই ও আসাদ ভাইয়ের সঙ্গে বাবুলের কোন দ্বন্দ্ব ছিল না। সবার সঙ্গেই আমাদের ভালো সম্পর্ক। আমরা এই বর্বর ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই’।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris