আলিফ হোসেন : রাজশাহী অঞ্চলে এবার বোরোর আবাদ বেশী এবং বিগত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন হয়েছে। এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এখন মাঠজুড়ে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। জ্যৈষ্ঠ মাসজুড়ে পুরোদমে চলবে সোনালি ফসল বোরো ধান কাটা-মাড়াই ও ঘরে তোলার ব্যস্ততা। ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ জমির ধান ঘরে কুলেছেন চাষিরা। সংশ্লিষ্ট এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিশস্য তুলতে দেরি হওয়ায় এবার বোরো আবাদের সময় কিছুটা এদিক-সেদিক হয়েছে। অধিকাংশ চাষি দেরিতে ধান রোপণ করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল গরমের নেতিবাচক প্রভাব। পানিয় সংকটে রোপণ নিয়ে ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তবে সব উদ্বেগ-উৎকন্ঠা অনিশ্চয়তা মাড়িয়ে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এখন চলছে ফসল ঘরে তোলার পালা। রাজশাহীর বিভিন্ন কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার রবিশস্য ঘরে তোলা শেষে বোরো রোপণের প্রস্তুতি নিতে দেরি হয়েছে কৃষকদের। প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে অনেকের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার নতুন করে বীজতলা তেরি করে রোপন করতে দেরিতে হয়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ বছর সার ও কীটনাশকের দামও বেশি। উৎপাদন ভালো হলেও লাভ নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, গত এক দশকে জেলায় বেরো উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। এবার এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৫ হাজার ৮৩৪ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৭১ হাজার ১৭১ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৭৩২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৮৯ হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন। ২০১৯ ২০ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৮৬ হাজার ৯৮৩ মেট্রিক টন।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭০ হাজার ১০৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৯৭ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৯ হাজার ২০০৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল লাখ ৯৩ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৭ হাজার ২৬৩ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৮৫ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৬৯ হাজার ৭৮৮ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬৯ হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছিল দুই লাখ ৯৪ হাজার ১৫ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬৮ মাজার ৩৮৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৬৯ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ০৪৫ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৭৬ হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। এই
সময়কালে হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪.০৬ মেট্রিক টন থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে ৪.৮৫ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৭০ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৪৬ হাজার ৭০ মেট্রিক টন চাল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি, যেখানে উৎপাদন হয়েছিল তিন লাখ ৩২ হাজার ৪৩৯ মেট্রিক টন চাল। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে এক হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন: উৎপাদনে বেড়েছে ১৩ হাজার ৬৩১ মেট্রিক
তানোর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ১৪ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এপর্যন্ত ৭ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। ফলন ধরা হয়েছে বিঘায় হাইব্রিড সাড়ে ২৬ মন এবং উপশী বিঘায় ২৩ মন করে। উপজেলার স্বর্ণ প্রদক প্রাপ্ত আদর্শ কৃষক নুর মোহাম্মদ বলেন, বোরো মৌসুমে সেচ নিয়ে ব্যাপক অরাজকতা চলে। সময় মতো সেচ দিতে চায় না, অতিরিক্ত সেচ হার। আবার ছিল রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা একারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। মোহনপুর উপজেলায় ৭ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাকিমা খাতুন। অধিকাংশ ধান কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৫মে পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ধান চাষিরা ঘরে তুলেছেন বলে জানিয়েছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উল্লে ছালমা। তিনি বলেন, ‘এবার ধান ঘরে তুলতে একটু বেশি সময় লাগবে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফলন বিপর্যয়ের কোনও খবর পাইনি। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার বেশি উৎপাদন হবে।