শুক্রবার

১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে : শেখ হাসিনা রাজশাহীতে আমের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে সজাগ থাকার পরামর্শ কৃষিমন্ত্রীর বড়াল নদের উপর ব্রীজ নির্মান স্থান পরিদর্শন করেন যুগ্ম সচিব পবায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান ইসলামী নার্সিং কোচিং সেন্টারের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা রাজশাহীতে গ্রীষ্মকালীন কারুশিল্প উদ্যোক্তা মেলার উদ্বোধন অংকের হিসাব লাগে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত : আব্দুল ওয়াদুদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন হজ পালনের ধাপসমূহ

মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবার অন্ধকার ভেদ করে আলো জ্বালার বার্তা

Paris
Update : রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪

অন্ধকারের শক্তিকে পরাজিত করে আলোর আহ্বান জানিয়ে এবারের বর্ষবরণ উৎসবের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এ বছর চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে সকাল ৯টায়। শাহবাগ মোড় হয়ে শিশুপার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে ফের শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে। প্রস্তুতির সবশেষ অবস্থা জানাতে গতকাল রোববার চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। নববর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “অন্ধকারের বিরুদ্ধে আমরা আলোর দিশারী। অন্ধকার ভেদ করে আমরা সমাজে আলো ছড়াতে চাই। এজন্যই আমরা এবার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি- ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’। কবি জীবনানন্দ দাশের ‘তিমির হননের গান’ কবিতার পঙতি থেকে এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।” এবারের আয়োজনে চারটি বড় মোটিফ বা শিল্পকর্ম তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান ঢাবি চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। তিনি বলেন, “প্রতি বছরই আমরা আমাদের লোকজ মাটির পুতুল থেকে এসব মোটিফ তৈরি করি। এবার আমরা আশা করছি চারটি মোটিফ তৈরি করা হবে। আর যদি সম্ভব হয়, পাঁচটিও হতে পারে। “ঈদের ছুটির কারণে আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেকেই ঢাকার বাইরে থাকবে, সেজন্য নিশ্চিত করে এখনই বলছি না। তবে চারটি হবে এটা নিশ্চিত, সম্ভব হলে পাঁচটি মোটিফ থাকবে।” চারটি মোটিফের মধ্যে থাকবে পাখি, হাতি, ভোঁদর এবং চাকার মধ্যে চোখ নিয়ে ভিন্ন রকম একটি শিল্পকর্ম। নিসার হোসেন বলেন, ‘যে মোটিফ তৈরি করা হচ্ছে এগুলো আমাদের লোকজ জীবনে রয়েছে। সেগুলোকেই আমরা একটু বড় করে তৈরি করি। এছাড়া মুখোশসহ নানা রকম শিল্পকর্মও থাকবে।” শিল্পী রফিকুন্নবী বলেন, “এবার দুটো আনন্দ একসঙ্গে। ঈদের পরপরই বর্ষবরণ। আমরা আশা করি মানুষ দ্বিগুণ আনন্দে মেতে উঠবে।” অন্যদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠক রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এবারও প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, “আইনশৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সব রকম সহযোগিতা করব।” তবে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে এভাবে উৎসবের আয়োজন নিয়ে আক্ষেপ করে রামেন্দু মজুমদার বলেন, “এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষ যেন নির্ভয়ে আসতে পারে তার ব্যবস্থা যেমন করতে হবে। আবার নিরাপত্তার নামে যেন এটাকে দেখতে প্যারেডের মতো মনে না হয়। সেটিও ভাবতে হবে।” গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছি নিরাপত্তার নামে পুরো শোভাযাত্রাটি ঘিরে থাকে আইনশৃংখলা বাহিনী, এটি দেখতে ঠিক শোভন হয় না। তাই অনুরোধ করব, এবার যেন একটু দূর থেকে বা অন্য উপায়ে নিরাপত্তার ব্যাপারটি ভাবা হয়, নিরাপত্তার নামে আমরা যেন আবদ্ধ না হয়ে যায়।” বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান সন্ধ্যার আগে শেষ করার নির্দেশনা ‘ঠিক হয়নি’ মন্তব্য করে রামেন্দু মজুমদার বলেন, “অন্য সব দিবসে তো এটি বলা হয় না। তবে নববর্ষে কেন সংক্ষিপ্ত করার এই নিয়ম বেধে দেওয়া? মানুষ যেন তার মত আনন্দ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। সময়ের ব্যারিকেড তুলে নিতে হবে।”
মুখ ঢাকা যাবে না মুখোশে : বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ষবরণের সব আয়োজন বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করাসহ ভুভুজেলা বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বলেছে, তারা বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। মুখোশ নিষিদ্ধ কিনা– এমন প্রশ্নে অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, “মঙ্গল শোভাযাত্রায় আমরা যে মুখোশ তৈরি করি সেগুলো হাতে রাখতে হয়, এ ধরনের মুখোশ ব্যবহার করা যাবে। তবে নিরাপত্তার কারণে মুখ ঢেকে কোনো মুখোশ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ অনেকে মুখোশে মুখ ঢেকে নানা রকম অপরাধ মনোবৃত্তি নিয়ে আসে। এজন্য মুখোশ ব্যবহার করা যাবে, তবে মুখোশে মুখ ঢাকা যাবে না।” গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিও পায় এ কর্মসূচি। মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে একটি পক্ষ ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে, সে বিষয়ে অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, “যারা বাঙালি সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না, যারা বাংলাদেশের জন্ম মেনে নিতে পারে না তারা নানা রকম অপপ্রচার চালায়। তাতে আমরা শঙ্কিত নই। তারা সারা বছর নানা রকম অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। কিন্তু মানুষ ঠিকই পহেলা বৈশাখে ঘর থেকে বেরিয়ে তার জবাব দেয়। এবারও মানুষ আনন্দচিত্তেই বর্ষবরণ করবে।” সাধারণত চারুকলা অনুষদের শেষবর্ষের শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের প্রস্তুতির দায়িত্ব পালন করে থাকে। সে অনুযায়ী এবার অনুষদের ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতির মূল দায়িত্বে রয়েছেন। তারা শোভাযাত্রার বিভিন্ন মোটিফ ও শিল্পকর্ম তৈরি করছেন। অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, “সাধারণত এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়। এবার প্রস্তুতি শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। শেষের দিকে ঈদের ছুটিতে প্রস্তুতিতে খুব বেশি সময় পাওয়া যাবে না। তবুও চিন্তার কিছু নেই।” ঈদের ছুটি মঙ্গল শোভাযাত্রায় লোক সমাগমের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না- এমন প্রশ্নে নিসার হোসেন বলেন, “এবার ঈদের পরপরই বর্ষবরণ হওয়ায় আমি মনে করি, আমাদের উৎসবের আনন্দ বেড়ে যাবে। সারা দেশেই এবার মহাসমারোহে বর্ষবরণ হবে। ঢাকায় যারা আছেন, তারাও মঙ্গল শোভাযাত্রায় আসবেন এবং ঈদের আনন্দের সঙ্গেই বর্ষবরণের আনন্দেও মেতে উঠবেন।” প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও শিল্পকর্ম বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই মঙ্গল শোভাযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা হবে। অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চৈত্র সংক্রান্তি পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরি করছেন। ইতোমধ্যে শিল্পকর্ম বিক্রি হচ্ছে বলে জানান চারুকলার ডিন।-এফএনএস


আরোও অন্যান্য খবর
Paris