সোমবার

২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
একাদশে ভর্তি ১৫-২৫ জুলাই ক্লাস শুরু হবে ৩০ জুলাই বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ নিয়ে আশঙ্কা কেটে গেছে বাংলাদেশি টাকা পাচার করতে গিয়ে সিপিএম নেতা গ্রেফতার শিল্প গড়ে উঠুক, বর্জ্য যেন নদীতে না পড়ে : প্রধানমন্ত্রী প্রচার প্রচারণায় ব্যাস্ত পবার চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াজেদ আলী খান রাজশাহীতে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন নাবিল গ্রুপ প্রেজেন্টস ৮ম আর ইউ সি সি জব ফেয়ার অনুষ্ঠিত স্বাচিপ রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

রেলের নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপ

Paris
Update : সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪

এফএনএস
বারবার ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত, ট্রেনের ভেতর জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারাসহ নানা নাশকতার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে রেলওয়ে প্রশাসন। এরইমধ্যে আন্তঃনগরসহ বেশকিছু ট্রেনকে আনা হচ্ছে সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরার আওতায়। কোচগুলোর ভেতরে সিসি ক্যামেরা থাকলেও এবার ট্রেনের বাইরে স্থাপন করা হবে ক্যামেরা। এর ফলে ট্রেনসহ নিশ্চিত করা হবে যাত্রীর নিরাপত্তা। অন্যদিকে নাশকতা ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নতুন প্রযুক্তি আনতে চাইছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পুরো রেলপথকে অটোমেটিক সিমুলেশন সিস্টেমের (এসিএস) আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ প্রযুক্তি চালু হলে চলমান ট্রেনের সামনে কোথাও লাইন কাটা থাকলে বা প্রতিবন্ধকতা থাকলে স্বয়ংক্রিয় ব্লক সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাবে। একইসঙ্গে এসিএস প্রযুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পুরো রেলওয়েকে অনলাইনে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এ প্রযুক্তি বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা কমলেও এর ব্যবহার কঠিন এবং ব্যয়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের মতো দেশে এসিএস প্রযুক্তি কতটা কার্যকর সে বিষয়ে সন্দিহান নিরাপদ সড়ক বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক। তিনি বলেন, এসিএস বা অটোমেটিক সিমুলেশন সিস্টেম মূলত উচ্চ গতির ট্রেনগুলোর সংখ্যাসূচক মডেল এবং অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড মডেলের ভিত্তিতে তৈরি একটা সিমুলেশন বিশ্লেষণ। চীন ও জাপানে এ প্রযুক্তি দুর্ঘটনা শূন্যে নামিয়ে এনেছে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি ফলপ্রসূ করতে হলে আগে ব্লক সিস্টেমের অন ডেভেলপিং কম্পিউটার পরীক্ষা এবং চালকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা সলিমুল্লাহ বাহার এ প্রযুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানান, এসিএস প্রযুক্তি চালু করতে ইতোমধ্যে রেলওয়ের পুরো কাঠামো অনলাইনে নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলেই নতুন এ প্রযুক্তির পাইলটিং শুরু করতে পারবো। এসিএস প্রযুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ প্রযুক্তি উচ্চগতির রেলওয়ে সিস্টেমে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর। এর স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা আমরা এড়াতে পারব। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে লোকোমাস্টারদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে নাশকতা রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ট্রেনে সিসি ক্যামেরা বসানোর কার্যক্রম শুরু ইতোমধ্যে অনেকটা এগিয়েছে। এরই মধ্যে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। একেকটি ট্রেনে ১২টি করে ক্যামেরা থাকছে বলে জানা গেছে। ট্রেনের সামনে-পেছনে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এসব ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। এ বিষয়ে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, গুরুত্ব অনুধাবন করে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আন্ত নগর ট্রেনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এরইমধ্যে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে লাগানো হয়েছে। তূর্ণা, সোনার বাংলা, সুবর্ণ, কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেসেও সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। তিনি বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অঞ্চলে গুরুত্ব বুঝে বিভিন্ন ট্রেনে ক্যামেরা লাগানো হবে। এতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। অন্যদিকে ট্রেন এবং যাত্রী উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঢাকাগামী ১৬টিসহ মোট ২৪টি ট্রেনে বসছে সিসি ক্যামেরা। রেলের এমন সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন যাত্রীরা। আর রেল কর্মকর্তারা বলছেন, এটা সার্বিক নিরাপত্তাসহ ট্রেনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এর ফলে কমবে নাশকতা। সেইসঙ্গে কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে দ্রুত চিহ্নিত করার পাশাপাশি আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্মকর্তারা বলছেন, এর ফলে শুধু যাত্রী নিরাপত্তা নয়, ট্রেনের বাইরে এবং ভেতরে থাকা রেল সদস্যরাও আসবেন নজরদারির আওতায়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, আমাদের সম্মানিত যাত্রী যারা আছেন তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্ল্যান দেখে এবং সেই রিপোর্টটা দেওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমার ধারণা ঢাকাগামী ১৬টি ট্রেন ও রূপসা-সীমান্তসহ সর্বমোট ১৮টি ট্রেনে প্রাথমিকভাবে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। রেল পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নয়। ট্রেন এবং যাত্রী উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। পাকশী রেলওয়ে পুলিশের সুপার শাহাব উদ্দিন বলেন, আমি আশা করছি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে ইন্টার্নাল এবং এক্সটার্নাল কোনো ধরনের কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের জনবলের স্বল্পতা থাকলেও আমরা যাত্রী এবং ট্রেনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে বিএনপি ও সমমনা বিভিন্ন দলের দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে রেলপথ এবং বিভিন্ন ট্রেনে নাশকতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় যাত্রী হতাহতের পাশাপাশি ট্রেনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরেও বিভিন্ন স্থানে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড-নাশকতার ঘটনা ঘটে। গত বছরের শেষ দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলপথে একের পর এক নাশকতার ঘটনায় ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পাশাপাশি দগ্ধ হয়েছেন বেশ কয়েকজন যাত্রী। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হলে নাশকতার ঘটনার পাশাপাশি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপও রোধ করা যাবে। কেউ নাশকতা কিংবা পাথর নিক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটালে তাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সহজ হবে। রেলওয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে আপাতত এসব সিসি ক্যামেরা মনিটর করা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris