রবিবার

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি ‘সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই’ রক্তস্বল্পতা দূর করবে কচু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কি একদম তলানিতে কান উৎসবে নজর কাড়লেন অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়তি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট

নাশকতা বললেও ট্রেনে আগুনের সূত্রপাত বলতে পারছে না পুলিশ

Paris
Update : রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৪

এফএনএস
ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ভয়াবহ আগুনের পরপর সেখানে গিয়ে ঘটনাটিকে নাশকতা বলে বর্ণনা করেন পুলিশ ও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়েছে। এর আগের রাত শুক্রবার ৯টার দিকে ঢাকার ঢোকার মুখে আগুনে বেনাপোল এক্সপ্রেসের চারটি বগি পুড়ে যায়। তাতে চারজনের মৃত্যু হয়, দগ্ধ অবস্থায় একজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। বেনাপোল থেকে আসা ট্রেনটি সেই রাতে আর ফিরে যেতে পারেনি। আজ সোমবার থেকে ট্রেনটি আবার চলাচল করবে। ট্রেনে আগুনের ঘটনায় বিএনপির একাধিক নেতাসহ আটজনকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বলেছে, ভার্চুয়াল কনফারেন্স করে গ্রেপ্তাররা ‘নাশকতার’ পরিকল্পনা করে। তবে ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে সে সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। ঘটনার রাতেই ঘটনাস্থলের কাছ থেকে ককটেল ও পেট্রোল বোমাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র‌্যাব। তবে সেই তিনজন বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা করেছে কি না তা পরদিনও পরিষ্কার করেনি পুলিশের এ বিশেষ ইউনিট। গত শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনার ‘পরিকল্পনাকারী ও জনবল দাতা’ যুবদল নেতা মনসুর আলম এবং ‘অর্থদাতা’ বিএনপি নেতা নবীউল্লাহসহ মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। ডিবির উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, “মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনাম ও সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নের পরিকল্পনা এবং নির্দেশনায় যুবদল দক্ষিণের দুজন টিম লিডার, নয়নের বিশ্বস্ত লালবাগের তিনজনসহ আরও কয়েকজন সন্ত্রাসীকে দিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।” এনাম ও নয়ন এখনও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়নি। আগুনের সূত্রপাত ভেতরে না বাইরে থেকে সে বিষয়ে জানতে চাইলে গত শনিবার বিকালে মশিউর রহমান বলেন, তাদের তদন্ত এখনও চলছে।
ঘটনার পরই নাশকতার সন্দেহ : ঘটনার পর রেল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজি দিদার আহমদ ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, “প্রাথমিকভাবে এটাকে নাশকতা মনে করেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আপনারা জানেন নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠী, যাদের কোনো সমর্থন নেই অথচ তারা এই নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য বিভিন্ন সময় অপচেষ্টা করছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমরা নাশকতাকে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত করছি।” এর আগে দু দফায় রেলে নাশকতায় মানুষের প্রাণহাণি হয়েছে, কয়েক জায়গায় রেল লাইনে নাশকতা করা হলেও অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে ট্রেন। নাশকতা হতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্য সবার কাছেই ছিল। তবুও কেন মজবুত ব্যবস্থা না নেওয়া পুলিশের দুর্বলতা বা ব্যর্থতা কি না জানতে চাইলে রেল পুলিশের প্রধান বলছেন, “এটা দুর্বলতা বা ব্যর্থতা নয়। আমি বলব এটা আমাদের জনগণের দুর্ভাগ্য। কারণ এরকম একটা ঘটনা তারা কীভাবে করে! এগুলো আমরা খতিয়ে দেখব।” ঘটনার পরপরই গোপীবাগে গিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খ মহিদ উদ্দীন বলেছিলেন, “কারণ তো এই মুহূর্তে বলা যাবে না যে-কী কারণে হয়েছে। তবে এটি যে নাশকতা সেটি তো স্পষ্ট। এটি তো বোঝাই যায় যে পরিকল্পিতভাবে এটি করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “অনেক নাশকতাকারী ডিএমপি এলাকায় হাতে-নাতে ধরা পড়েছে, যার সংখ্যা ৪০ এর ওপরে। যারা গাজীপুরে নাশকতা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তেজগাঁওয়ে যে ট্রেনটি পুড়েছিল তার নাশকতাকারীকে ধরারও কাজ চলছে।” রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনাটিকে নাশকতা বলে বর্ণনা করেন রেলওয়ে মহাপরিচালক কামরুল আহসানও। তিনি বলেন, “ভাঙ্গার পর ট্রেনটি আর কোথাও থামেনি। সায়েদাবাদ এলাকা পার হওয়ার পর এতে আগুন দেখা দিলে পুলিশ সদস্যরা চেইন টেনে এটি থামিয়ে দেয়।” আগের ঘটনাগুলোর মতো এটি নাশকতা কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রেলের মহাপরিচালক বলেন, “আপাতদৃষ্টিতে এটাকে নাশকতা বলে মনে হচ্ছে। তা পুলিশ তদন্ত করে বের করবে। আমরাও তদন্ত কমিটি গঠন করব।”
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে : শুরুতেই ঘটনাটিকে নাশকতা বললেও পরদিনও পুলিশ জানতে পারেনি যে- যাত্রীবেশী কেউ ট্রেনের ভেতর থেকে ঘটনাটি ঘটিয়েছে না কি বাইরে থেকে কেউ আগুন ছুঁড়ে দিয়েছে। দুর্ঘটনার শঙ্কার কথা তো কেউ বলছেনই না। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খ মহিদ উদ্দীন গত শনিবার বিকালে বলেন, “আমাদের কাছে এখনো এরকম কোনো তথ্য নেই। আমরা তো আসলে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তদন্ত করছে রেলওয়ে পুলিশ, তারা বিষয়টি ভালো বলতে পারবে।” তবে রেল পুলিশও গত শনিবার বিকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি ঘটনাটি ভেতর থেকে নাকি বাইরে থেকে ঘটানো হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের এসপি আনোয়ার হোসেন বলছেন, আগুন ভেতর থেকে না বাইরে থেকে লাগানো হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আসিফ মোহাম্মদ খান ও তার স্ত্রী নাতাশা জেসমিন নেকি বসেছিলেন ‘চ’ বগির ৫৯ ও ৬০ নম্বর আসনে। চিকিৎসাধীন আসিফের সঙ্গে কথা বলেছে রেল পুলিশের কর্মকর্তারা। আসিফ তাদের বলেছেন, তিনি তার পেছনের সারির আসনে আগুন দেখতে পেয়েছেন। একই বগির যাত্রী চিকিৎসক কৌশিক বিশ্বাস এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে কৌশিকের মা অপর্ণা বিশ্বাস বলেন, কৌশিক তাদের বলেছেন, তিনি বাইরে থেকে আগুন ছুঁড়ে দিতে দেখেছেন। একই রকম কথা বলছেন নিখোঁজ এলিনা ইয়াসমিনের ভাই মো. ইমতিয়াজ। ওই ট্রেনে ইমতিয়াজের দুই বোন, এক ভগ্নিপতিসহ পরিবারের ছয়জন ছিলেন। এলিনা এখনো নিখোঁজ, বাকি পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বজনদের বরাতে ইমতিয়াজ বলছেন, আগুন ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল। এসব তথ্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেল পুলিশের এসপি আনোয়ার হোসেন বলেন, “ট্রেনের ভেতর থেকে কোনো যাত্রীর আগুন লাগানো যেমন অসম্ভব নয়, তেমনই বাইরে থেকে ট্রেনে আগুন ছুঁড়ে দিয়ে নাশকতার চেষ্টা আগেও হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে চ বগির কিছু জানালা খোলা ছিল বলে জানিয়েছেন দগ্ধ আসিফসহ কয়েকজন যাত্রী।” রাতে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। রেলে আগুনের ঘটনার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা কিছু আসামি গ্রেপ্তার করেছি। তাদেরকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তদন্তের স্বার্থে এখনি আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।” ট্রেনের ভেতর থেকে এই নাশকতা করা হয়েছে না বাইরে থেকে আগুন ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, “আমরা এটা এখনো তদন্ত করছি। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় ভেতর থেকে। তারপরও এখন আমরা নিশ্চিত করে বলছি না।” নাশকতার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আগেও নাশকতা হয়েছে। আবারও একই রকম নাশকতায় প্রাণহানির ঘটনাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি হিসেবে দেখছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জানতে চাইলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, “নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল না। দুষ্কৃতিকারীরা তো কাউকে জানিয়ে কিছু করে না, এরা হঠাৎ করে করে। আমাদের লোকজন সব জায়গায় ছিল। “তারা (দুষ্কৃতিকারীরা) হঠাৎ করে ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে। যখনই এই ঘটনা বিষয়ে তথ্য পাব, তখনই জানাব। তবে তাদের দেশব্যাপী কিছু করার মতো সামর্থ্য নেই।”


আরোও অন্যান্য খবর
Paris