শনিবার

২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিষণ্নতায় ভোগে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের ৭৪ শতাংশ

Paris
Update : শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

এফএনএস
দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ইচ্ছে থাকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা। তাতে ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তাদের উচ্চশিক্ষার পথযাত্রা শুরু করতে হয়। তবে অল্প সময়ে পরীক্ষা প্রস্তুতির বিশাল চাপ সামলাতে হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে তাদের মধ্যে বিষণ্ণতা, আলস্য, নৈরাশ্য ও ভয়ভীতির সঞ্চার হয়, যা তার ফলাফলকে প্রভাবিত করে। এতে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার এবং বিষণ্ণতার প্রভাবকসমূহ নিরূপণের বিষয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৭৪ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী বিষণ্ণতায় ভোগে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন। তার নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশে স্নাতক ভর্তি প্রার্থীদের মধ্যে বিষণ্ণতার প্রাদুর্ভাব এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত কারণগুলি: দেশব্যাপী ক্রস-বিভাগীয় অধ্যয়ন’ শিরোনামে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় ২০২১-২২ এইচএসসি সেশনের প্রায় পাঁচ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীর ওপর একটি জরিপ চালানো হয়। এ জরিপে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের তিনটি ক্যাটাগরিতে বিষণ্ণতার বিষয়টি ওঠে এসেছে। গত ৩০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাল্টিডিসিপ্লিনারি কিউ-১ জার্নাল প্লাস ওয়ান জি (ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর: ৩.৭, ২০২২) এ গবেষণা প্রকাশিত হয়। গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, দেশের ৭৪ শতাংশ ভর্তি পরীক্ষার্থী বিভিন্ন পর্যায়ের বিষণ্ণতায় ভুগছে। এরমধ্যে মাঝারি বিষণ্ণতায় ২৬ শতাংশ, অত্যধিক বিষণ্ণতায় ২৬ শতাংশ এবং ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী মারাত্মক পর্যায়ের বিষণ্ণতায় ভুগছে। এই বিষণ্নতাসমূহের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষণ্ণতা বৃদ্ধি ও হ্রাস, উভয় পক্ষেই প্রভাবক কারণ চিহ্নিত হয়েছে। বিষণ্ণতা বাড়ার পেছনে প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে লিঙ্গ, ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার, পারিবারিক সমস্যা, গুরুতর অসুস্থতা, কোভিড আক্রান্ত, প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল, মানসিক সমস্যা। অন্যদিকে, ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস, শরীরচর্চা, পড়াশুনার সময়, ধর্মচর্চা, বিষণ্ণতা কমাতে ভূমিকা পালন করে। তবে পারিবারিক আয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বিষণ্ণতার প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত হলেও এদের প্রভাব খুব জোরালো নয়। এছাড়া, ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বিষণ্ণতার সঙ্গে ধূমপানের অভ্যাস, বৈবাহিক অবস্থা, প্রেমের সম্পর্ক ও ধর্মবিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও উঠে এসেছে এই গবেষণায়। এ বিষয়ে গবেষণা দলের সদস্য গবেষক মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ছেলেদের তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীদের অত্যধিক বিষণ্ণতায় ভোগার ঝোঁক প্রায় দ্বিগুণ। খুব সম্প্রতি কোনোপ্রকার ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হওয়া এবং পারিবারিক সমস্যায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের অত্যধিক বিষণ্ণতায় ভোগার ঝোঁক যথাক্রমে দুই ও তিন গুণ। অন্যদিকে, যাদের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ আছে তাদের মধ্যে বিষণ্ণতার হার অধিক এবং ঝোঁক প্রায় দেড়গুণ। তবে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি সচেতন এবং নিয়মিত শরীরচর্চাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্ণতার হার তুলনামূলক কম এবং আক্রান্ত হওয়ার ঝোঁক যথাক্রমে এক দশমিক চার ও দুই গুণ কম। বিষণ্নতা কমানোর উপায়সমূহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সৎ সঙ্গ, উত্তম পারিবারিক পরিবেশ এবং বোঝাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। সেইসঙ্গে শরীরচর্চা ও ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার্থীদের শুধু দৈহিক সুস্বাস্থ্যই নয়, মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। শুধু ভালো একাডেমিক ফলাফল নয়, দৈহিক ও মানসিকভাবে বলিষ্ঠ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এই গবেষণা দলে আরও রয়েছেন শাবিপ্রবি পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নাফিউল হাসান ও আল মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুনমুন সরকার, যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান মিলাদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী আখের আলী, চট্টগ্রাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুবায়ের আহমেদ।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris