এফএনএস : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০তলা বিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবন, দুটি আবাসিক হল এবং একটি শিক্ষক কোয়ার্টার নির্মিত হচ্ছে। প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। তবে এখনও ঢিমেতালে চলছে কাজ। একটি ভবনের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হলেও বাকি তিনটির কাজ শেষ হয়েছে ৫০ শতাংশেরও কম। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফায়ও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ প্রকল্প পরিচালক। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ করার জন্য প্রয়োজন জবাবদিহিতা ও সুষ্ঠু তদারকি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে কাজের অগ্রগতি দেখে মনে হয় না, এখানে তা ছিল। যার দায় প্রশাসন কোনোভাবে এড়াতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, প্রকল্পের কাজের ধীরগতির বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করা সম্ভব আমরা তাই করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রকল্পের জন্য পাস হয় ৩৬৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় শেখ হাসিনা হল, এএইচএম কামারুজ্জামান হল, ১০তলা ভবনবিশিষ্ট শিক্ষক কোয়ার্টার, ২০তলা অ্যাকাডেমিক ভবন, ড্রেন নির্মাণ, শেখ রাসেল মডেল স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। পরবর্তী সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং আনুষাঙ্গিক খরচের দিক বিবেচনায় প্রকল্পের সংশোধিত বাজেট পাস হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৯ সালে ৫১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রকল্পের আওতায় ড্রেন নির্মাণ, শেখ রাসেল মডেল স্কুল ও অডিটোরিয়াম সংস্কারসহ অন্যান্য স্থাপনাগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে বড় চারটি ভবনের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এর মধ্যে ১০তলা বিশিষ্ট শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান আবাসিক হল এবং ২০তলা বিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ পায় রূপপুরের বালিশ কাণ্ডে আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। ১০তলা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড’। অন্যদিকে ১০ তলা বিশিষ্ট শিক্ষক কোয়ার্টার নির্মাণের কাজ পায় ‘কেকে এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কবির সিন্ডিকেট জয়েন্ট ভেনচার’। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, নির্মাণাধীন এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তবে করোনা মহামারি, এক শিক্ষার্থী ও দুই শ্রমিকের মৃত্যু এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে অনেকদিন কাজ বন্ধ ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আর নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ আছে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে কোনো ভবনেরই নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। সরেজমিন দেখা যায়, ২০তলা বিশিষ্ট অ্যাকাডেমিক ভবন ও শেখ হাসিনা হলে অল্পকিছু শ্রমিক দিয়ে লোক দেখানো কাজ চলছে। একদিন কাজ হলে দুই দিন বন্ধ থাকে। এখন পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক ভবনের ৪তলা ও শেখ হাসিনা হলের ৩তলা দৃশ্যমান হয়েছে। চলতি মাসের ৬ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত শেখ হাসিনা হলে কোনো শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত শিক্ষক কোয়ার্টার ৪তলা দৃশ্যমান হয়েছে। এদিকে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হলের ১০তলা দৃশ্যমান হয়েছে। এখন দেয়াল গাঁথুনি, জানালা লাগানোর কাজ চলছে। কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে শেখ হাসিনা হলের সাইট ইঞ্জিনিয়ার জাকির বলেন, ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে এই ভবন। ইতোমধ্যে নির্মাণকাজের ৩০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কিছু সমস্যার কারণে কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। তবে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। ১০০ টন রড আনা হয়েছে। ৩৫ জন শ্রমিক নির্মাণকাজে নিয়োজিত রয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ বলে জানান তিনি। অন্যান্য ভবনগুলোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, যে বাজার মূল্যে টেন্ডার নেওয়া হয়েছিল সেই মূল্য আর নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে রড, সিমেন্ট ও শ্রমিকের মজুরিসহ সংশ্লিষ্ট আরও নানা জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তারা চাইলেও ঠিকঠাক কাজ করতে পারছেন না। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অবরোধ, হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। বলতে গেলে লোকসান দিয়েই নির্মাণকাজ চলছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক খন্দকার শাহরিয়ার বলেন, শুরুর দিকে কাজ ভালোই চলছিল। পরে করোনা মহামারির কারণে কাজে ধীরগতি, আমাদের হিমেল নামে এক শিক্ষার্থী ও দুই শ্রমিকের দূর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণে ছয় মাসের বেশি সময় কাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি কামারুজ্জামান হল নির্মাণ ছাড়া বাকি ভবনগুলোতে নামমাত্র শ্রমিক দিয়ে কাজ দেখানো হচ্ছে। কাজে ধীরগতি ও বন্ধ থাকার বিষয়ে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পারফরমেন্স সিকিউরিটি কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তারা নানা অজুহাত দেখিয়েছেন। কামারুজ্জামান হল ছাড়া বাকি ভবনগুলোর নির্মাণকাজ সন্তোষজনক নয়। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। কাজের অগ্রগতির বিষয়ে এই প্রকল্প পরিচালক বলেন, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের ৮০ শতাংশ কাজ হয়েছে। সামনের বছরের শুরুতেই এ হলের শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশাবাদী। অন্যদিকে শেখ হাসিনা হলের ৩০ শতাংশ, অ্যাকাডেমিক ভবনের ৪০ শতাংশ ও শিক্ষক কোয়ার্টারের ৩৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ও বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেন্ডার হওয়ার পর কাজ শুরু হয়ে গেলে মেয়াদ ও বাজেট বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ঠিকাদারদের কাজ শেষ করতে হবে।