সোমবার

২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হলেন মির্জা ফখরুল

Paris
Update : সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩

এফএনএস
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ‘আটক’ করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, রোববার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর গুলশান-২-এর বাসা থেকে মির্জা ফখরুলকে আটক করে ডিবি। পরে ডিবির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজ আল আসাদ বলেন, মির্জা ফখরুলকে তাঁরা নিয়ে এসেছেন। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ডিবির গুলশান বিভাগ মির্জা ফখরুলকে আটক করেছে। তাঁকে ডিবির মিন্টো রোডের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পুরোনো মামলা আছে। শনিবারের সহিংসতার ঘটনায়ও মামলা হবে। তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। এদিকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আদালতে হাজির করা হয়। রোববার (২৯ অক্টোবর) রাত ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করা হয়। এর আগে আটকের ৯ ঘণ্টা পর তাকে গ্রেপ্তার দেখায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রাতে ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি প্রসিকিউশন) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ফখরুলকে আটকের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার স্ত্রী বলেন, “ওরা (পুলিশ) সকালে এল। ওই সময় আমরা চা খাচ্ছিলাম। এসে প্রথমে বলল যে, স্যার আপনার সাথে কথা বলব। কিছু কথাবার্তা বলে নিচে চলে গেল। বলল যে, ‘স্যার আপনার সাথে কথা বলার জন্য আসছিলাম।’ যাওয়ার সময়ে তারা বাসায় ভেতরের সিসি ক্যামেরার ডিভাইস (হার্ড ডিস্ক) এবং অ্যাপার্টমেন্টের নিচের সিসি ক্যামেরার ডিভাইস নিয়ে গেছে। “আমার যতটুকু ধারণা, তারা নিচেই ছিল। ১০ মিনিট পরে আবার এল যে, ‘স্যার আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে’। যা বলে প্রত্যেকবার ‘স্যার উপরের অর্ডার আছে’।” বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ সময় তার কাছে প্রশ্ন ছিল মির্জা ফখরুলকে কোন সুনির্দিষ্ট মামলায় আটক করা হলো? এর উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা মিটিং করছিল, তারা যখনই মিটিংয়ে বসছেন তখনই ঘটনাগুলো ঘটছে, তাহলে এ দায় কি তারা এড়াতে পারেন?’ তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা, পুলিশের উপর হামলায় তারা উস্কানি দিয়েছে, এ দায় তাদের নিতে হবে। এখন বিচার বিভাগ বাকিটা দেখবে। এ সময় আসাদুজ্জামান অভিযোগ করেন, নিরাপত্তার জন্য স্থাপিত সমস্ত ক্যামেরাও বিএনপি ভেঙে ফেলেছে যাতে তাদের শনাক্ত করা না যায়।
গত শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ছিল। মহাসমাবেশ শুরুর আগেই কাকরাইলে দুপুর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ পরে বিজয়নগর পানির ট্যাংক ও শান্তিনগর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বেলা তিনটার দিকে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য ও যুবদলের ওয়ার্ড পর্যায়ের এক নেতা নিহত হন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন পুলিশের ৪১ ও আনসারের ২৫ জন সদস্য। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন সাংবাদিক। সংঘর্ষে হাজারের বেশি নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি বিএনপির। সংঘর্ষকালে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, বাস, মোটরসাইকেলসহ বেশ কটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশের হিসাবে, আগুন দেওয়া হয়েছে মোট ৫৫টি গাড়িতে। হামলা হয় কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। এ ছাড়া কাকরাইল, ফকিরাপুল, নাইটিঙ্গেল মোড় ও শান্তিনগর এলাকার সাতটি পুলিশ বক্স পোড়ানো হয়। কমলাপুরে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির মহাসমাবেশে ‘পুলিশের হামলার প্রতিবাদে’ দলটি গতকাল রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। বিএনপি জানিয়েছে, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের বাসায় তল্লাশি ও অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল সকাল নয়টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাঁর বাসা থেকে নিয়ে যায়। তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। সকাল নয়টার দিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বনানীর বাসায় দুটি ফ্ল্যাটে পুলিশ তল্লাশি চালায়। তবে সে সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরু সাংবাদিকদের বলেন, সকালে ডিবি সদস্যরা এসে তাঁর বাবাকে খুঁজতে তল্লাশি চালান। তাঁরা বাসার প্রতিটি কক্ষ খুঁজে দেখেন। তিনি জানান, ডিবি সদস্যরা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পাসপোর্ট এবং তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোন নিয়ে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট পর সেগুলো ফেরত দেন। ইসরাফিল আরও বলেন, তাঁর বাবা কোথায় আছেন, তা ডিবি সদস্যরা জানতে চেয়েছেন। পুলিশ তাঁদের জানিয়েছে দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে তল্লাশি চালানো হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, ইশরাক হোসেনের গুলশানের বাসায় ডিবি অভিযান ও তল্লাশি চালিয়েছে। তবে তাঁকে না পেয়ে তাঁর ছোট ভাই ইশফাক হোসেন ও গাড়িচালক রাজীবকে নিয়ে গেছেন ডিবি সদস্যরা। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসা পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে বলে জানিয়েছেন শামসুদ্দিন দিদার। তিনি বলেন, মির্জা আব্বাসের শাজাহানপুরের বাসায় দুপুরে ডিবির সদস্যরা ঘেরাও করে রেখেছেন। তবে মির্জা আব্বাসকে বাসায় না পেয়ে ডিবি ফিরে যায়। এর আগে গতকাল ভোরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিলেন উল্লেখ করে শামসুদ্দিন দিদার বলেন, সকালে তাঁরা চলে যান। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল সকালে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের লালমাটিয়ার বাসায় সাদাপোশাকের পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। তবে তিনি বাসায় ছিলেন না। বিএনপির নেতাদের বাসায় তল্লাশি ও অভিযানের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। ডিবি পুলিশ এটা বলতে পারবে। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ডিবির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা গতকাল রোববার সকাল-সন্ধ্যার হরতাল এবং গত শনিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯০০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ২১টি জেলা থেকে ৯০০ জনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে হরতালে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে গত শনিবার রাতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১২৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে রাজশাহী মহানগর এলাকার ৭০ ও রাজশাহী জেলার ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, হরতালের সমর্থনে নাশকতার পরিকল্পনার জন্য বৈঠককালে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলেছে। মহানগর পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, হরতাল ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৭০ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris