স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। গত কয়েকমাসে খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, আন্দোলন, ক্যান্টিনে তালা দেওয়াসহ অনেক কর্মসূচি সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘ডাইনিংয়ের খাবারের মান এতোই স্বাদহীন ও নিম্নমানের যে, অনেকেই এখানে খেতে চায় না। যারা খায় তারা বাধ্য হয়ে খায়’। তবে এবার খাবারের মান উন্নত করতে হল ডাইনিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ৩৫ টাকায় চালু করেছেন ‘মেস সিস্টেম’। রোববার(০১ অক্টোবর) দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে হল ডাইনিং-এই ‘মেস সিস্টেম’ চালু হয়েছে এবং দুপুর ও রাতের খাবারের মূল্য ৩৫ টাকা করে নির্ধারিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, সৈয়দ আমীর আলী হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান খুবই নিম্নমানের ও স্বাদহীন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। খাবারের মান উন্নয়নে কয়েক দফা হল প্রশাসনের সাথে আলোচনায় বসেছে তারা। সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বরে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে বিশেষ এক মতবিনিময় সভায় বসে হল কর্তৃপক্ষ। সেখানে শিক্ষার্থীদের সকল সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে চান হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মাহমুদুল হক। এসময় হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হলের ডাইনিংয়ে মেস সিস্টেম চালু করার সিদ্ধান্ত নেন হল প্রাধ্যক্ষ। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিনের খাবারের টোকেন আগের দিন ডাইনিং চলাকালীন ডাইনিং কাউন্টার থেকে নির্ধারিত টাকা জমা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। দুপুর ও রাতের খাবারের মূল্য ৩৫ টাকা করে নির্ধারিত হয়েছে। আগের দিনের ইস্যুকৃত টোকেন ছাড়া কাউকে খাবার দেওয়া হবে না বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিস্টেমে প্রতিমাসের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে দুইজনকে ম্যানেজার করা হবে। যারা খাবারের টোকেন সংগ্রহ করবেন তাদের মধ্যে দুইজন ও ডাইনিং কর্মচারীদের মধ্যে একজন মিলে সকালে বাজার করবেন। এ বিষয়ে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, আমাদের হলের ডাইনিংয়ের খাবারের মান খুবই বাজে। আমরা খেতেই পারি না। তাছাড়া একজন শিক্ষার্থীর যে পরিমাণ ক্যালোরি দরকার তা এই খাবার থেকে পাওয়া কখনোই সম্ভব না। আমরা পুষ্টিহীনতায় ভুগী। এই সমস্যা নিরসনে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এই সিস্টেমের ফলে আমাদের খাবারের মান ভালো হবে বলে আশা করছি। এ বিষয়ে সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মাহমুদুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা কম টাকায় ভালো মানের খাবার পাবে বলে আশা করছি। তাছাড়া ডাইনিং কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে যে, ডাইনিংয়ে প্রতিদিন একই খাদ্য পরিবেশন করা হয়। মেস সিস্টেম চালুর ফলে এই সমস্যা নিরসন হবে। কারণ শিক্ষার্থীরা যা বাজার করবে, তারা তাই খাবে। সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, খাবার নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল। আমরা তাদের বলেছি মেসের মতো তোমরাও এ দায়িত্ব নিয়ে কাজটা করলে ভালো ফলাফল পেতে পার। শিক্ষার্থীরা আগ্রহ দেখিয়েছে। আপাতত আমরা একটা হলে মেস সিস্টেম চালু করেছি। ভাল রেজাল্ট আসলে আমরা অন্যান্য হলে এ পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা করব।