রবিবার

১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী জেলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা মোহনপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযান ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ইলেকট্রনিক ইমুনাইজেশন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে চসিক পরিদর্শনে রাসিক প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ীতে বিদ্যুতের ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন রাজশাহীতে আ’লীগ কর্মী নয়নালের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের দাবি ‘সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই’ রক্তস্বল্পতা দূর করবে কচু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কি একদম তলানিতে কান উৎসবে নজর কাড়লেন অন্তঃসত্ত্বা প্রিয়তি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট

তীব্র শিক্ষক সঙ্কট নিয়েই চলছে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো

Paris
Update : সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

এফএনএস
তীব্র শিক্ষক সঙ্কট নিয়েই চলছে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। যদিও গত দেড় দশকে চিকিৎসা শিক্ষার প্রসার ও জনসংখ্যা অনুপাতে চিকিৎসকের সংকট কাটাতে ২০টি সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭-এ। প্রতি শিক্ষাবর্ষে এসব চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে চার সহস্রাধিক। কিন্তু ওসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য শিক্ষক রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সব মিলিয়ে এসব কলেজে মোট শিক্ষকের প্রায় ৪৫ শতাংশ পদই খালি রয়েছে। দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে বর্তমানে শিক্ষকের পদ রয়েছে ৫ হাজার ৬৬৮টি। যার মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ২ হাজার ৫৪৪টি পদ। সে অনুযায়ী সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় মোট পদের বিপরীতে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নূন্যতম ১১টি বিষয় থাকা বাধ্যতামূলক। বিষয়গুলো হলো অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফরেনসিক মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, সার্জারি, মেডিসিন এবং গাইনি ও অবস। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি) ও বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) ডিগ্রি দেয়া হয়, সেগুলোর একটি সাধারণ নীতিমালা হলো প্রতি ১০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকতে হবে। আর প্রতি ২৫ শিক্ষার্থীর জন্য নূন্যতম একজন পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী শিক্ষক থাকতে হবে। কিন্তু সরকারি চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ শর্ত পূরণ করতে পারছে না। এতে চিকিৎসা শিক্ষার মান পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। মেডিকেল কলেজগুলোতে অধ্যাপক পদেই শিক্ষকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। সরকার মেডিকেল কলেজগুলোয় অধ্যাপকদের জন্য পদ রয়েছে ৮০১টি। এর মধ্যে ৫২৫টি খালি, যা সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় মোট অধ্যাপক পদের ৬৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সহযোগী অধ্যাপকের পদ খালি ৬০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ১ হাজার ৩৭১টি সহযোগী অধ্যাপক পদের ৮৩৬টিই খালি রয়েছে। এ ছাড়া সহকারী অধ্যাপক পদে ২ হাজার ১০০ পদের বিপরীতে ৮৩৩টি (৩৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ) এবং ১ হাজার ৩৯৬ প্রভাষক পদের বিপরীতে ৩৫০টি (২৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ) খালি রয়েছে। সূত্র জানায়, চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল কলেজগুলোয় আসন সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ২০০৯ সালেও দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ছিল ১৭টি। বর্তমানে এর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৭। অনুমোদন ও প্রতিষ্ঠার অপেক্ষায় আছে আরো বেশ কয়েকটি। বর্তমানে চালু মেডিকেল কলেজগুলোয় প্রতি শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির জন্য আসন রয়েছে ৪ হাজার ৩৫০টি। প্রতি শিক্ষাবর্ষে এসব আসন পূর্ণ হলেও শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা শাস্ত্রে পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষকের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। দেশের নতুন-পুরনো সব সরকারি মেডিকেল কলেজেই এখন বিভিন্ন মাত্রায় শিক্ষক সংকট রয়েছে। দেশের পুরনো ছয় মেডিকেল কলেজের অন্যতম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মেডিকেল কলেজে প্রতি শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় ২৫০। ৫০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয় বিডিএস কোর্সে। বর্তমানে কলেজটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৭০০। প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসকদের পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রিও দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে কলেজটিতে পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের শিক্ষার্থী আছেন ৩৪০ জন। যদিও এ কলেজে শিক্ষকের সংখ্যায় বেশ ঘাটতি রয়ে গেছে। এখানে অধ্যাপকের ৪২টি পদের বিপরীতে ৩০টি, সহযোগী অধ্যাপকের ৬৯টি পদের বিপরীতে ৪৩টি, সহকারী অধ্যাপকের ১১৯টি পদের বিপরীতে ৪৩টি এবং ৭৪টি প্রভাষক পদের বিপরীতে ২২টি খালি রয়েছে। মোট ৩০৪টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে ১৩৮টি। অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের পদ বেশি খালি থাকায় প্রতিষ্ঠানটিতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এখান থেকে যারা অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন তাদেরকে অন্যত্র বদলি করা হয়। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষকরা কলেজের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। আর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালে। কলেজটিতে বর্তমানে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। প্রতি বছর ১২৪ জন চিকিৎসক পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের জন্য ভর্তি হচ্ছেন। কলেজের ৩১০টি শিক্ষক পদের বিপরীতে খালি রয়েছে ১৬৪টি পদ। সূত্র আরো জানায়, সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হয় তাতে জটিলতা রয়েছে। শিক্ষক সংকট থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের শিখন পদ্ধতিতে ঘাটতি থাকা স্বাভাবিক। কলেজগুলোর মান উন্নয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় শুধু শিক্ষকের সংকট যে রয়েছে তা নয়, অবকাঠামো থেকে শুরু করে পরীক্ষাগার-হোস্টেলসহ সবকিছুতেই সংকট রয়েছে। সরকার গত দেড় দশকে বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে। অধিকাংশ মেডিকেল কলেজেই স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা বেশ দুরূহ হয়ে পড়েছে। লোকবল থেকে শুরু করে সব শাখায়ই ঘাটতি রয়েছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এসব মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সংকট দূর করা জরুরি। মেডিকেল কলেজগুলোর অন্যতম শর্ত হলো নিজস্ব হাসপাতাল থাকা, যাতে তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে চিকিৎসায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে অন্তত ২০টিরই নিজস্ব হাসপাতাল নেই। আবার যেগুলোয় এখন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, সেগুলোও তা পাচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনেক পর। সর্বশেষ হাসপাতাল পাওয়া দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ নিজস্ব হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারছে দেড় বছর ধরে। একইভাবে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালটি রোগী ভর্তি শুরু করেছে চলতি বছর। যদিও হাসপাতালটি এখনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। দু্টি কলেজেই প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। এদিকে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা জানান, সম্প্রতি অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে অনেকের পদোন্নতি হয়েছে। সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য বড় একটি সংখ্যা অপেক্ষমাণ রয়েছে। মূলত শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়টি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের দায়িত্ব হওয়ার কথা থাকলেও তা দেখছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। এতে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়। কেননা স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ জানে, কোথায় তার শিক্ষক প্রয়োজন, কোথায় কী অবস্থা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এমনিতেই হাসপাতাল ও অন্যান্য সেবা নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকে যে তাদের জন্য শিক্ষকদের পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিতের বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের এ কাজগুলো থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষকের সংকটে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া যেত।’ অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনার সংকটের সময়েও প্রায় ৪০ হাজার চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য পদে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছর চিকিৎসা শিক্ষা বিস্তারের জন্য নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে নতুন নতুন পদও তৈরি হয়েছে। এ নতুন পদে শিক্ষক সংকট কিছুটা থাকলেও সেটি কাটিয়ে উঠতে কাজ করা হচ্ছে। আশা করা যায় দ্রুততম সময়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। বিষয়টি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তবে লোকবলের সংকট খুব স্বল্প সময়ে পূরণ করা যায় না। যেসব মেডিকেল কলেজে সংকট বেশি, সেসব প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আশা করা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কলেজের শিক্ষক বা হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট আর থাকবে না।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris