চারঘাট প্রতিনিধি
রাজশাহীর চারঘাটে দুই যুবককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হবার পর অবশেষে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার মোহন আলীর মা নারী গ্রাম্য পুলিশ নাসিমা খাতুন বাদী হয়ে ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর সোমবার (২৮ আগস্ট) রাতে চারঘাট মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে স্থানীয় এক প্রভাবশালী মাদক কারবারি, দুই ছাত্রলীগ নেতা এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে দুই যুবককে হাত-পা, চোখ বেঁধে পানিতে চুবিয়ে ও মাটিতে পুঁতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। গত ৯ জুলাই ধারণ করা নির্যাতনের একটি ভিডিও গত ১৮ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দৈনিক সমকালসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের এ খবর প্রকাশিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। নির্যাতনের শিকার দুই যুবক হলেন- চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের মোহন আলী (২৫) ও তার প্রতিবেশী মোশাররফ হোসেন মছু (২২)। নির্যাতনের ঘটনার মামলায় মাদক কারবারি মুক্তার হোসেন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ, ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান ও তাঁদের ৬ সহযোগীসহ মোট ৯ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুলাই দৌলতপুর গ্রামের মানিক আলীর বাড়ি থেকে গরু বিক্রি করা ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। নির্যাতনের শিকার মোহন ও মছু টাকা চুরি করেছে এমন সন্দেহ করে মানিক টাকা উদ্ধারের জন্য মাদক কারবারি মুক্তার, ছাত্রলীগ নেতা শুভ, মিজানসহ তাদের সহযোগীদের দায়িত্ব দেয়। তারা গত ৯ জুলাই সকালে মোহনকে কাঠ মিলে কাজ করা অবস্থায় এবং মছুকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর টাকা চুরি করেছে স্বীকার করাতে হাত-পা বেঁধে ডোবার পানিতে চুবিয়ে রেখে ও মাটিতে পুতে সারা দিন নির্যাতন করে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানোর চেষ্টা করলে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর গত ১৮ আগষ্ট পলক নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ভাইরাল হবার মাস খানেক আগেই জানতে পারে পুলিশ। এরপর নির্যাতনের শিকার দুই যুবকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁরা। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় লিখিত অভিযোগ করতে রাজি না হওয়ায় চারঘাট মডেল থানা পুলিশ নিজেরা একটি জিডি করে রাখে।এরপর ১৮ই আগষ্ট ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন ঘটনাটি নিয়ে আবারও নতুন করে তদন্ত শুরু করে। ঘটনার দেড় মাস পর মামলার বিষয়ে বাদী নাসিমা খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে নৃশংস ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ঘটনার এতদিন পরেও এখনো শরীর অকেজো হয়ে আছে। ঘটনার সময় মামলার করার সাহস ছিলনা। এখন প্রশাসন এসে বার বার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এজন্য দেরিতে হলেও মামলা দায়ের করেছি। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এ বিষয়ে রাজশাহীর চারঘাট সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার প্রণব কুমার জানান, ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করতে রাজি হয়নি। পুলিশ স্বঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁদের বার বার অনুরোধ জানানোর পর সোমবার থানায় এসে এজাহার দায়ের করলে মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামীদের আটকে অভিযান চলমান আছে।