এফএনএস
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে দাফন করা হয়েছে। তবে এ সময় তার স্ত্রী ও সন্তানদের কেউ সেখানে ছিলেন না। শুক্রবার (২৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে তার নিজ গ্রাম ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দি গ্রামে মিয়া বাড়ি জামে মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। মহিউদ্দিনের ভাই আরজু মিয়া বলেন, তার বড় ভাই মিয়া মহিউদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানেরা অসুস্থ থাকায় লাশ দাফন করতে আসতে পারেননি। তিনি বলেন, যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন আর বলার কিছু নাই। তবে আমার ভাই নির্দোষ ছিল। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে রাজশাহী কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করা হয় অধ্যাপক এস তাহের হত্যা মামলার দুই আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলমের। সেখানে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পরিবারের পক্ষে তার ভাই আরজু মিয়া লাশ গ্রহণ করেন। এরপর দুটি পুলিশ ভ্যানের প্রটেকশনে ভোর পৌনে ৬টার দিকে ড. মিয়া মহিউদ্দিনের লাশ তার গ্রামের বাড়ি পৌঁছে। তুজারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওলিউর রহমান খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জান্দি গ্রামের মিয়া বাড়ি জামে মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এরআগে, তার বাড়ির উঠানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম মো. রফিকুল ইসলাম। প্রায় শতাধিক গ্রামবাসী এতে অংশ নেন। এদিকে, সকালে মিয়া মহিউদ্দিনের লাশ বাড়িতে আসলে এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেখানে সন্তানের লাশ এসেছে জানতে পেরে মূর্ছা যান তার বৃদ্ধা মা সেতারা বেগম। গ্রামের সাধারণ মানুষ, মিয়া মহিউদ্দিনের ছোটবেলার সহপাঠী, শিক্ষকসহ অনেকে তার লাশ একনজর দেখতে দলে দলে ভিড় জমান তাদের বাড়িতে। উল্লেখ্য, ব্যক্তি জীবনে ড. মিয়া মহিউদ্দিন ইয়াফি ও ইউসি নামে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। তার বাবা মরহুম আবদুল মান্নান মিয়া খুলনা জুট মিলে চাকরি করতেন। ১৯৮১ সালে তিনি ভাঙ্গা কেএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকপাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিষয়ে ভর্তি হন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত ১০টা ১ মিনিটে রাজশাহী জেলখানায় অন্য আসামির সঙ্গে মহিউদ্দিনকে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মহিউদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তাহেরও ওই বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। হত্যা মামলায় সাজা হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয় মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে।
জানাযায় তার স্বজন, প্রতিবেশী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জানাযায় বক্তব্য দেন, ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা ও গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, ভাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন। মহিউদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মহিউদ্দিন সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলেন। তারা ন্যায় বিচার পাননি। সাংবাদিকরা লিখতে লিখতেই তাকে ফাঁসির দড়ি পর্যন্ত নিয়েছে। এ মামলার এক নম্বর আসামি খালাস পেয়েছে। অথচ চার নম্বর আসামি মহিউদ্দিনের ফাঁসি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে লাশের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে আসেনি মহিউদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানেরা। মহিউদ্দিন এক মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। তারা রাজশাহীতে থাকেন। তারা মরদেহ গ্রহণ করতেও কারাগারে যাননি। এমনকি গত ২৫ জুলাই স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের দিনেও মহিউদ্দিনের ভাই, বোন গ্রাম থেকে গেলেও রাজশাহী থেকে স্ত্রী ও সন্তানেরা যাননি। এ বিষয়ে মহিউদ্দিনের ভাই আরজু মিয়া জানান, মহিউদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানেরা এতই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত যে, তাদের আসার মতো অবস্থা নেই। মেয়েটা বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। এলাকাবাসী জানায়, মহিউদ্দিন ভাঙ্গা হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর ১৯৮১ সালে ভাঙ্গা কে এম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব ও খনি বিদ্যায় ভর্তি হন। এরপর হাতে গোনা কয়েকবার বাড়িতে এসেছেন। ২০০৬ সালে অধ্যাপক তাহের হত্যার মামলায় গ্রেপ্তারের পর মাঝে জামিনে বাইরে আসলেও তিনি বাড়িতে আসেন নি।