বৃহস্পতিবার

১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে রাসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে : মেয়র টকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু হলেও জাতের আম পাড়া হবে ২৫ মে থেকে রাজশাহীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে মিজু গ্যাংয়ের ১১ সদস্য গ্রেফতার বাঘায় দোকান কর্মচারিকে কুপিয়ে হত্যার দুই আসামীর মৃত্যুদণ্ড শিল্পা শেঠির বিরুদ্ধে পশু নিগ্রহের অভিযোগ উৎকণ্ঠার অবসান, স্বজনের বুকে ২৩ নাবিক কলেজে ভর্তি অনলাইনে আবেদন শুরু ২৬ মে, ফাঁকা থাকবে ৮ লাখের বেশি আসন সারাদেশে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১২৬০০ ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ রাজশাহীতে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ

যেখানে রোগী কল্যাণ সমিতির টাকা কাজে আসছেনা

Paris
Update : সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩

সনি আজাদ, চারঘাট

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে দুঃস্থ ও দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তা দেওয়া হয়। সমাজ কল্যাণ পরিষদের অর্থায়নে সমাজসেবা দপ্তর এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে। তবে এ সেবার ধরণ সম্পর্কে জানে না সাধারণ মানুষ। ফলে সরকারী বরাদ্দের টাকা বছরের পর বছর ধরে তহবিলে পড়ে থাকলেও অর্থ সংকটে অনেক অসহায় দুস্থ রোগীরা যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন না।

উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চারঘাট উপজেলায় ২০১১ সালে  আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় রোগী কল্যাণ সমিতির কার্যক্রম। রোগীদের ঔষধ কেনার টাকা, যাতায়াত খরচ ও অন্যান্য চিকিৎসার খরচ প্রদান, খাবারদাবার যোগান ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে সহায়তা করে এ সমিতি।

সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৩ সদস্যের কমিটিও রয়েছে। অথচ উপজেলায় গত ১২ বছরে সেবা পেয়েছে মাত্র ৩৭৩ জন রোগী। গত পাঁচ বছরে ৯৬ জন রোগীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮৮৯ টাকা। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৯ জন রোগীকে ২২ হাজার ৩৭৫ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২৩ জন রোগীকে ২৫ হাজার ২২৮ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২১ জন রোগীকে ২৯ হাজার ৫৫৪ টাকা ও চলমান ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১৯ জন রোগীকে ৩৫ হাজার ৯৩২ টাকা এবং চলমান ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১৪ জন রোগীকে ৩২ হাজার ৮০০ টাকা চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরই বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ টাকা। খরচ না হওয়ায় পাঁচ বছরে প্রায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার ১১১ টাকা তহবিলে অলস পড়ে আছে।

জানা যায়, রোগী কল্যাণ সমিতির কার্যক্রম দেখভালের জন্য এবং প্রচারণার জন্য ১৩ সদস্যদের কমিটির প্রতি মাসে সভা করার নিয়ম রয়েছে। অথচ চারঘাটে এরকম সভা অনুষ্ঠিত হয়না। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভার সাথে নামমাত্র সভা দেখিয়ে কমিটির সদস্যদের সাক্ষর নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কমিটির সদস্য চারঘাট পৌর মেয়র একরামুল হক বলেন, রোগী কল্যাণ সমিতি সম্পর্কে আমি অবগত না। উপজেলার কোনো সভাতেই এ বিষয়ে কখনও আলোচনা হয়না। কাঁরা সেবা পাবেন, কি কি সেবা পাবেন কিছুই জানানো হয়নি কখনও। আমরা জনপ্রতিনিধিরা না জানলে সাধারণ মানুষ কিভাবে জানবে!

রোগী কল্যাণ সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটা কক্ষ বরাদ্দের কথা থাকলেও সরেজমিন চারঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং উপজেলা সমবায় অফিস ঘুরে কোথাও রোগী কল্যাণ সমিতির সাইনবোর্ড কিংবা ব্যানার দেখা যায়নি। সাধারণ কোনো মানুষের বোঝার কিংবা জানার উপায় নেই এই উপজেলায় রোগী কল্যাণ সমিতির কার্যক্রম চলমান আছে।

কথা হয় চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার রাওথা গ্রামের দিনমজুর রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য দুদিন হলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছি। অনেক টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে। চার সদস্যের পরিবারের খরচ চালানোর পর চিকিৎসা খরচ মেটানো খুব কঠিন। হাসপাতাল থেকে সব ওষুধ পাওয়া যায়না। রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে ওষুধ কিনে দেয় এটাও কখনও শুনিনি। তবে এরকরম ব্যবস্থা থাকলে ভাল হতো।

কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়া সেলিম রেজা বলেন, আমার মা পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যায়। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর রাজশাহীতে রেফার্ড করলে হাতে টাকা কম থাকায় অটো রিকশায় করে নিয়ে গেছি। কিন্তু এখন শুনছি রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া যেতো। আমার মত অনেকেই এ বিষয়ে জানেনা।

স্থানীয় নাগরিক কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা যারা সমাজের সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি তাঁরাও রোগী কল্যাণ সমিতির কার্যক্রম সম্পর্কে সঠিক ভাবে অবগত না। কারা এ কমিটির সদস্য, কবে সভা অনুষ্ঠিত হয়, সমিতির মাধ্যমে কি কি সেবা দেওয়া হয় জানা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে সবাই অবগত হলে তহবিলের টাকা গুলো অলস পড়ে থাকতোনা। বিপদে সামান্য সহযোগিতা পেলেও অনেকে উপকৃত হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য সচিব মোঃ রাশেদুজ্জামান বলেন, কমিটির সভা নিয়মিত হয়। হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও লোকবলের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। আমি নতুন এ উপজেলায় এসেছি। আগামীতে এ কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবো। কমিটির সভাপতি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, সাধারণত দরিদ্র ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী দেখে আমরা সহায়তা করে থাকি। তবে বিষয়টি আরও প্রচার হওয়ার প্রয়োজন। প্রচারের অভাবে অনেকে এ সেবা নিতে আসেন না। এজন্য হয়তো তহবিলে টাকা পড়ে আছে। কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা করে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris