সোমবার

২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাশিয়ায় ওয়াগনারের বিদ্রোহের দিকে গোটা বিশ্বের নজর

Paris
Update : সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩

এফএনএস

রাশিয়ায় ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের বিদ্রোহের দিকে এখন নজর গোটা বিশ্বের। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুটিন এর আগে নিজের দেশে এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েননি। রাশিয়ার ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ নাটকীয়ভাবে মস্কোর দিকেই অস্ত্র তাক করেছে। এটির নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়া শাসন করা পুটিনকে হটানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, পুটিন প্রিগোশিনকে বিচারের মুখোমুখি করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতকাল রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল ওয়াগনার গ্রুপ। কিন্তু এই গ্রুপটি এবার পুটিনবিরোধী হয়ে ওঠায় রাশিয়ায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বনেতারা ইতোমধ্যে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখার কথা জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই বিষয়ে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র এডাম হজ বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতি নিয়ে মিত্র এবং অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’’ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান চার্লস মিশেল এই বিষয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘‘জোটটি রাশিয়ার পরিস্থিতির দিকে নিবিড়ভাবে চোখ রাখছে। এই বিষয়ে ইউরোপীয় নেতা এবং জিসেভেন অংশীদারদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’’ তবে তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন যে, বিষয়টি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং ইউক্রেনের প্রতি জোটের সমর্থন অপরিবর্তিত থাকবে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সবপক্ষকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে এবং বেসমারিক মানুষদের রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের মিত্রদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। আমি আজকে তাদের সাথে কথা বলবো। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সবপক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ করা।’’ জার্মান সরকারও রাশিয়ার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মস্কোর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পাশাপাশি সরকারি ও সামরিক ভবন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলানস্কি জানিয়েছেন যে, ওয়াগনারের বিদ্রোহ দেখাচ্ছে যে রাশিয়া দুর্বল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ার দুর্বলতা স্পষ্ট। পূর্ণমাত্রায় দুর্বলতা। রাশিয়া আরো যত বেশি সময় এটির সেনা এবং ভাড়াটে সেনাদের আমাদের জমিনে রাখবে ভবিষ্যতে এটি ততই বিশৃঙ্খলা, যন্ত্রণা এবং সমস্যা ভোগ করবে।’’

এদিকে ক্রেমলিনের সামরিক নেতৃবৃন্দকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুমকি দিয়ে রাজধানী মস্কোর দিকে অগ্রসর ওয়াগনার সেনারা বিদ্রোহ তুলে নিয়ে তাদের যাত্রা বন্ধ ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে ঘাঁটিতে ফিরে যাচ্ছে সেনারা। গত শনিবার নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওয়াগনার ভাড়াটে গোষ্ঠীর প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। তিনি জানান, রক্তপাত এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে আলোচনার পর তিনি এই ঘোষণা দেন প্রিগোজিন। লুকাশেঙ্কো বলেছেন, ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের মস্কো যাওয়া বন্ধ করতে তিনি প্রিগোজিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। গত শনিবার ওয়াগনার প্রধান বিদ্রোহ ঘোষণা করে মস্কো অভিমুখে রওনা দিলে রাশিয়াজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের দীর্ঘ শাসনামলে এটিই সবচেয়ে বড় হুমকি। মস্কো অভিমুখে রওনা দেওয়ার আগে ওয়াগনার সীমান্তের একটি শহরের সেনা সদর দপ্তর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। বিবিসি জানিয়েছে, ওয়াগনার যোদ্ধাদের মস্কোর দিকে অগ্রসর না হয়ে ফেরত আসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রিগোজিন। তাদেরকে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরতে বলা হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, তার যোদ্ধারা গত ২৪ ঘণ্টায় মস্কোর দিকে ২০০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছিল। রুশ সম্প্রচারমাধ্যম রসিয়া ২৪ জানিয়েছে, লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে আলোচনায় প্রিগোজিন মস্কোর দিকে অগ্রসর না হতে এবং উত্তেজনা প্রশমনে রাজি হয়েছেন। লুকাশেঙ্কোকে উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়েছে, ওয়াগনার যোদ্ধাদের মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হওয়া থামাতে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন প্রিগোজিন। উত্তেজনা নিরসনে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া সম্ভব। রসিয়া ২৪ জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও এতে সম্মতি দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে ক্রেমলিনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে, গত শুক্রবার হঠাৎই রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থানের ঘোষণা দেন ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন। ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। এই অভিযান শুরুর কয়েক মাস পর রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় রুশভিত্তিক বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনার। ইউক্রেন ছাড়াও সিরিয়া, লিবিয়া, মালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থের বিনিময়ে সরকারি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধ করছেন ওয়াগনারের সেনাসদস্যরা। রুশ কমান্ডের নেতৃত্বে রাশিয়ার সরকারি সেনাসদস্যদের সঙ্গে এতদিন বেশ ভালোভাবেই মিলেমিশে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছিল পিএমসি ওয়াগনার। তবে গত কয়েক মাস ধরেই ভাসা ভাসা ভাবে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খবরও আসছিল।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris